ভোটদান: বুথে মানিক সরকার। রবিবার। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
সবুজের বুক চিরে টিলা বরাবর নেমে গিয়েছে রাস্তা। দু’পাশ দেখলে কে বলবে, এখানে ভোট চলছে! শুনশান রাস্তা যেখানে মিশল জম্পুইজলা স্কুলের বুথে, সেখানেই দেখা রঞ্জিৎ দেববর্মার সঙ্গে। পানে চুন ঘষতে ঘষতে বলছিলেন, ‘‘দিনের বেলা কিছু বুঝবেন না। ওরা তো রাত্তির বেলা বলে দিয়ে গিয়েছে!’’
‘ওরা’ মানে আইপিএফটি। বিজেপি-র জোটসঙ্গী সংগঠনের সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র (এন সি) দেববর্মার ঘাঁটিতে তারাই দাপিয়ে বেড়়িয়েছে ইচ্ছামতো। রাতের অন্ধকারে বাড়়ি বাড়়ি জানিয়ে দিয়ে গিয়েছে, কাদের ভোট দেওয়া চলবে না! প্রতিপক্ষ দলের এজেন্টদের পরিবারকে বসিয়ে রেখেছে দা, টাঙ্গির মুখে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পরিবারই গিয়ে এজেন্টদের কাছে মিনতি করেছে, বুথ থেকে উঠে আসতে। অথচ ভোটের সকালে বুথে দিব্যি জনতার ঢল! সব শান্তিপূর্ণ!
পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা কেশপুরে এন্তাজ আলিদের ভোট করানো দেখেছেন, তাঁরা বুঝবেন কী ভাবে বাইরে শান্তিপূর্ণ ছবি রেখে কাজ হাসিল করে নিতে হয়! বাংলায় কেশপুর বা আরামবাগে সিপিএম যা করে কুখ্যাত হয়েছিল, ত্রিপুরার উপজাতি এলাকার কিছু কেন্দ্রে সিপিএমের বিরুদ্ধে এ বার সেই অস্ত্রই প্রয়োগ করেছে আইপিএফটি। তফাত একটাই। বাংলায় যাদের বিরুদ্ধে এমন ভোট করানোর অভিযোগ উঠত, তারা ছিল শাসক দল। আর এখানে অভিযুক্ত বিরোধী পক্ষ!
শাসক দল হয়েও সাংগঠনিক ভাবে এন সি-র ঘাঁটিতে সিপিএম যে বেকায়দায়, মালুম হয়েছিল কয়েক দিন আগে এসেই। ভোটের দিন দুপুরে টাকারজলা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীর এজেন্ট রঞ্জন দেববর্মাকে ধরা গেল তাঁর ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়়ের মাঝে একটু বিরতিতে। বলছিলেন, ‘‘রতনপুর, অমরেন্দ্রনগরে অস্ত্র হাতে ওরা আমাদের ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে। পুলিশ দিয়ে বুথে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছি। কিন্তু ভোটাররা বলছেন, রাতে আমাদের কে বাঁচাবে?’’ শুনতে শুনতে কেশপুর-পাঁশকুড়়া মনে আসতে বাধ্য! খবর পেয়ে রতনপুরেই ছুটেছিলেন সিপিএম প্রার্থী রমেন্দ্র দেববর্মা। তাঁরও আর্তনাদ, ‘‘এলাকায় যাঁরা আমাদের সমর্থক বলে পরিচিত, তাঁদেরই ওরা আটকে দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও ওঁদের বার করতে পারছি না!’’
আরও পড়ুন: লাইভ: ইভিএম বিভ্রাট ছাড়া ত্রিপুরার ভোট নির্বিঘ্নেই
পাশের মান্দাই কেন্দ্রের বুথে বুথেও সেই অনাবিল শান্তির ছবি। দিকে দিকে শুধু বামফ্রন্টেরই ভোট-ছাউনি। কোথাও আইপিএফটি বা বিজেপি নেই! বাইরের এই পর্দা সরিয়ে মান্দাই লোকাল কমিটি অফিসের ভিতরে ঢুকলে এডিসি-র সিইএম (চিফ এগ্জিকিউটিভ মেম্বার) রাধাচরণ দেববর্মা অভিযোগ করবেন, কোথায় কোথায় বাম সমর্থকদের ভয় দেখিয়ে ভোটে নিরস্ত করা হয়েছে। কোথায় মাঠের উপরে ডাঁই করে উপজাতিদের প্রিয় শুয়োরের মাংস বিলি করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিধিকে বুড়়ো আঙুল দেখিয়ে! শুনতে শুনতে অবাক হতে হবে, সরকারে সত্যি আছে কারা!
প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে পাল্টা মার কি দিতে পারতো না সিপিএম? দলের রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, কয়েকটা কেন্দ্রের জন্য বাকি রাজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঝূঁকি নেওয়া যেত না। টাকারজলা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের রাজ্য নেতা সুব্রত চক্রবর্তীর হিসেবে, ওখানে ১০টা বুথে তাঁরা এজেন্ট রাখতে পারেননি। আর গোলাঘাটির এজেন্ট মার খেয়ে হাসপাতালে।
দিনের শেষে ধরা গিয়েছিল এন সি-কে। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ঘুরে তো দেখলেন? অশান্তি ছিল কোথাও?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy