Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জেএনইউ অধরাই, প্রশ্নে মোদী-ম্যাজিক

তরুণদের বড় অংশের ভোট ঝুলিতে টেনেই গদিতে বসেছিলেন মোদী। কিন্তু দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় গত বছর থেকে জনপ্রিয়তা কমছে এবিভিপি-র। এ মাসেই পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজস্থানের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে এবিভিপি-র ফল ভাল হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

দেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাল ঝড়ের সামনে ফের উড়ে গেল গেরুয়া ছাত্র সংগঠন।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে চারটি পদই দখলে রাখল বামেরা। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর চিরকালের বাম-দুর্গ বলে পরিচিত জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি পদ দখল করেছিল সঙ্ঘ-পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। বিজেপি নেতারা ঘোষণা করেছিলেন, জেএনইউ-এর লাল রঙ মুছে গেরুয়ায় রাঙিয়ে দেওয়ার এটাই প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটা ‘কথার কথা’ হয়েই রয়ে গিয়েছে! গত বছরের মতো এ বছরও ছাত্র সংসদে চারটি আসনের একটিও জিততে পারেনি এবিভিপি। সিপিআই-এমএলের আইসা, সিপিএমের এসএফআই ও বাম সংগঠন ডিএসএফ একজোট হয়ে প্রার্থী দিয়েছিল। সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ এই জোটে যোগ দেয়নি। নির্বাচনে ছাত্র সংসদের সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও যুগ্ম-সম্পাদক— চারটি আসনেই যথেষ্ট ব্যবধান রেখে জিতেছেন বাম প্রার্থীরা। জয় তো দূর, এবিভিপি নেমে গেছে তিন নম্বরে!

তরুণদের বড় অংশের ভোট ঝুলিতে টেনেই গদিতে বসেছিলেন মোদী। কিন্তু দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় গত বছর থেকে জনপ্রিয়তা কমছে এবিভিপি-র। এ মাসেই পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজস্থানের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে এবিভিপি-র ফল ভাল হয়নি। পঞ্জাবে কংগ্রেস ও রাজস্থানে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের কাছে বড় ধাক্কা খেয়েছে তারা। প্রশ্ন উঠছে, বেকারি থেকে অসহিষ্ণুতা— নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ যুব সমাজ কি মোদীর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে?

বিজেপি নেতারা বলছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু শনিবার রাতে ভোটগণনার পরে এবিভিপি জেএনইউ দখল করছে বলে ভুল খবর পেয়ে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ট্যুইট করেছিলেন, ‘এ হল রাষ্ট্রবাদীদের জয়। যারা ভারতকে টুকরো টুকরো করতে চায়, তাদের হার।’ পরে সেই ট্যুইট মুছে দেন তিনি।

কানহাইয়া কুমার-উমর খালিদদের মিছিলে ‘আজাদি’-র স্লোগান ঘিরে বিতর্কের পরেই জেএনইউ ক্যাম্পাসকে ‘রাষ্ট্রদোহিতার আখড়া’-র বলেছিল বিজেপি তথা সঙ্ঘ-পরিবার। পড়ুয়াদের মনে ‘দেশপ্রেম জাগাতে’ ক্যাম্পাসে সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক বসাতে চেয়ে বিতর্কেও জড়ান সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ উপাচার্য এম জগদীশ কুমার। প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ আবার ক্যাম্পাসে ২,২০০ ফুট লম্বা জাতীয় পতাকা নিয়ে ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ করেছিলেন। ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিয়ে
ঘোষণা হয়, জেএনইউ, যাদবপুর, হায়দরাবাদ— একে একে সব বাম দুর্গই দখল হবে। কিন্তু ভোটের ফল বলছে, বাম দুর্গ অটুটই আছে। এবিভিপি-র নেতা সাকেত বহুগুণার দাবি, এ’টি তাঁদেরই নৈতিক জয়। কারণ একক সংগঠন হিসেবে তাঁরাই সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছেন। তবে এই দাবি উড়িয়ে ছাত্র সংসদের নতুন সভানেত্রী গীতা কুমারী বলছএন, ‘‘এ দেশে এখন ছাত্রছাত্রীরাই বিরোধী শিবির। ছাত্র আন্দোলনে জেএনইউ একটা লাইটহাউসের মতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE