Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মেয়েকে পরিচয় দিতে লড়বেন আদিবাসী মা

সিনেমার গল্প নয়, বাস্তবে এমন ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার চাণ্ডিলের আদিবাসী অধ্যুষিত রুচাপ গ্রামে। পড়শি ঘোড়াডিহি গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সঙ্গীতার।

মাতৃত্ব: মেয়ের পাশে সঙ্গীতা। চান্ডিলের রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র।

মাতৃত্ব: মেয়ের পাশে সঙ্গীতা। চান্ডিলের রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করে পালিয়েছিল বন্ধু। সমাজের ভয়ে গর্ভবতী কুমারী মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দেন মা-ও। মাসপাঁচেক খোলা আকাশই ছিল বছর সতেরোর সঙ্গীতা সিংহ সর্দারের ছাদ। সোমবার সন্ধেয় প্রসব যন্ত্রণা অসহ্য হলে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে। এলাকাবাসী ১০০ মিটার দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য গিয়েও ফেরেন নিরাশ হয়ে। রাস্তার এককোণ কাপড়ে ঢেকে কয়েক জন মহিলা প্রসবে সাহায্য করেন। জন্মায় সঙ্গীতার কন্যাসন্তান। পরে অটোরিকশায় দু’জনকে পাঠানো হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মা-মেয়ে সুস্থ রয়েছে।

জীবন-যুদ্ধের ময়দান কিন্তু সহজে ছাড়তে রাজি নয় সঙ্গীতা। খবর পেয়ে তার মা পূর্ণিমাদেবী গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মেয়ে-নাতনিকে ঘরে ফিরিয়ে নিতেও রাজি হন। কিন্তু সঙ্গীতা জানিয়ে দেয়, এত দিন একাই যে লড়াই চালিয়ে এসেছে, এ বার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তা-ই করে যাবে। কারও সাহায্য প্রয়োজন নেই। আইনের পথে মেয়ের পিতৃপরিচয়ও জোগাড় করবে সে।

সিনেমার গল্প নয়, বাস্তবে এমন ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার চাণ্ডিলের আদিবাসী অধ্যুষিত রুচাপ গ্রামে। পড়শি ঘোড়াডিহি গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সঙ্গীতার। অনেক স্বপ্ন দেখিয়েও সহবাস করে পালায় সেই ছেলেটি। মেয়ে গর্ভবতী টের পেয়ে লোকলজ্জার কথা তোলেন পুর্ণিমাদেবী। বাড়িতে থাকতে হলে গর্ভপাত করতে হবে বলে ফরমান দেন। না হলে ঘরে জায়গা হবে না। পেটের সন্তানের জন্য গত মার্চ মাসে রাস্তাই বেছে নেয় সঙ্গীতা। আজ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিছানায় শুয়ে চিকিৎসকদের সব কাহিনি শোনায় সে। আনন্দবাজারকে তা জানান জেলার ডিসি ছবি রঞ্জন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কাল বিকেলে ঘন্টাখানেক ধরে চাণ্ডিল ড্যাম রোডের ফুটপাথে শুয়ে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তরুণী। এলাকার বাসিন্দা রঘু মাহতো বলেন, ‘‘পাড়ার কয়েক জন অ্যাম্বুল্যান্স ডাকতে যাই মিনিট দশেক দূরের চাণ্ডিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।’’ অভিযোগ— অ্যাম্বুল্যান্স দিতে গড়িমসি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী অনিল লোহার বলেন, ‘‘কয়েক জন মহিলা ফুটপাতের এক কোণ কাপড় দিয়ে ঢাকেন। সেখানে সন্তান প্রসব করে মেয়েটি।’’

সরাইকেলার সিভিল সার্জেন অবদেশ প্রসাদ সিনহা অবশ্য জানান, অ্যাম্বুল্যান্স চালক স্নান করতে গিয়েছিলেন। কিছু ক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও ততক্ষণে অটোরিকশায় মেয়েটিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE