Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘গাড়িতে রক্তের দাগ লাগবে!’ আহতদের নিল না পুলিশ, মৃত্যু পথেই

বেশ কিছু ক্ষণ সময় এ ভাবে আর্জি আর অনুরোধেই কেটে গেল। এরই মধ্যে কেউ এক জন পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশের প্যাট্রলিং গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
সাহারানপুর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:২৪
Share: Save:

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাস্তার মাঝে নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে দুই তরুণ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁদের শরীর। অদূরেই পড়ে রয়েছে তাঁদের বাইকটি। বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁদের ঘিরে। পথচলতি অনেকই আবার উঁকি মেরে কিছু হয়নি এমন ভাব নিয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।

ভিড়ের মধ্যে থেকেই কয়েক জনকে দেখা গেল ওই দুই তরুণকে উদ্ধারে হাত লাগাতে। আহত দুই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে আর্জি জানাতে দেখা গেল তাঁদের। কিন্তু না! কোনও গাড়িই নিতে চায়নি আহত তরুণদের।

বেশ কিছু ক্ষণ সময় এ ভাবে আর্জি আর অনুরোধেই কেটে গেল। এরই মধ্যে কেউ এক জন পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশের প্যাট্রলিং গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ পৌঁছতেই ওই দুই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েক জন।

আরও পড়ুন: সাগরে দলছুট আম্মার ত্রাতা দেশোয়ালি ডিএম

কিন্তু এর পরে পুলিশ যা করল তাতে রক্ষক হিসাবে তাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। অমানবিক মুখটা ভেসে উঠল। অভিযোগ, তাঁদের সটান জানিয়ে দেওয়া হয়, আহতদের গাড়িতে তোলা যাবে না!

কেন তোলা যাবে না? প্রশ্ন করতেই পুলিশকর্মীদের মধ্যে থেকে উত্তর ভেসে আসে, গাড়িতে রক্তের দাগ লেগে যাবে। রাতে প্যাট্রলিংয়ে অসুবিধা হবে। ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ কেউ আবার পুলিশকে বলেন, “গাড়ি তো ধুয়েও নেওয়া যাবে!” কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে কোনও হেলদোল দেখা যায়নি পুলিশের মধ্যে। আহত তরুণদের পরিচিত এক ব্যক্তি পুলিশকে বার বার কাকুতি-মিনতি করে বলেন, “ওরাও তো কারও সন্তান! আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি…”

কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। রাস্তায় পাশ কাটিয়ে যাওয়া গা়ড়িগুলো তো নিতেই চায়নি, তার সঙ্গে পুলিশের এই অমানবিকতায় শেষ পর্যন্ত পথে পড়ে থেকেই মৃত্যু হয় ওই দুই তরুণের। পরে যদিও স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ এসে আহতদের নিয়ে যায়, কিন্তু তত ক্ষণে ওই তরুণদের মৃত্যু হয়েছে। গোটা বিষয়টি ক্যামেরাবন্দি করেন ভিড়ের মধ্যে থাকা এক জন। সেটা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: আফরাজুল খুনের ভিডিও ভয়ঙ্কর: সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্যাট্রলিং গাড়ি (প্রতীকী)। ছবি সৌজন্য: ইউটিউব।

উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু সাহারানপুরে সেই পুলিশই রাস্তায় পড়ে থাকা আহত দুই যুবককে নিয়ে যা করল তাতে রক্ষক হিসাবে তাদের অমানবিক মুখটিই ভেসে উঠল।

এই ধরনের খবর আপনার ইনবক্সে সরাসরি পেতে এখানে ক্লিক করুন

ঘটনা প্রসঙ্গে সাহারানপুর সিটি পুলিশের প্রধান প্রবাল প্রতাপ সিংহ বলেন, “আমাদের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে আহতদের হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, অভিযোগ সত্যি।” অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজি আনন্দ কুমার জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন উদাসীনতা, অমানবিক আচরণ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

রাস্তায় কোনও ঘটনা ঘটলে যাতে পুলিশের প্যাট্রলিং গাড়ি পৌঁছে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে সে কারণে ২০১৬-য় রাজ্যজুড়ে ডায়াল ১০০ প্রজেক্ট চালু করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। কিন্তু তার পরেও পুলিশের এহেন আচরণ তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE