Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উত্তাল কাশ্মীর

পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র

বিক্ষোভ ঠেকাতে মিছিলেই গুলি চালাল পুলিশ। প্রাণ গেল দশম শ্রেণির এক ছাত্রের। নাম, সুহেল মহম্মদ সফি। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে বদগাম জেলার নরবলে। সংঘর্ষে আহত আরও দুই। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মিছিলে অংশ নিয়ে যাওয়ার মুখে গ্রেফতার জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিক এবং আর্য সমাজের নেতা স্বামী অগ্নিবেশ। গৃহবন্দি করা হয়েছে হুরিয়তের আর এক শীর্ষ নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককে।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুহেল মহম্মদ সফির পরিজনেরা। শনিবার বদগামের নরবলে।  ছবি: এএফপি।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুহেল মহম্মদ সফির পরিজনেরা। শনিবার বদগামের নরবলে। ছবি: এএফপি।

শ্রীনগর
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২০
Share: Save:

বিক্ষোভ ঠেকাতে মিছিলেই গুলি চালাল পুলিশ। প্রাণ গেল দশম শ্রেণির এক ছাত্রের। নাম, সুহেল মহম্মদ সফি। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে বদগাম জেলার নরবলে। সংঘর্ষে আহত আরও দুই। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মিছিলে অংশ নিয়ে যাওয়ার মুখে গ্রেফতার জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিক এবং আর্য সমাজের নেতা স্বামী অগ্নিবেশ। গৃহবন্দি করা হয়েছে হুরিয়তের আর এক শীর্ষ নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককে।

সব মিলিয়ে আজও অশান্তি অব্যাহত ভূস্বর্গে। ছাত্র মৃত্যুর তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয় হুরিয়ত। বিরোধী চাপের মুখে বাধ্য
হয়েই এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন বদগামের জেলাশাসক মির আলতাফ আহমেদ। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করলেও পুলিশের দাবি, এই ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশের যা কর্মপদ্ধতি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর), তাতে বাধা দেওয়ার কারণেই মিছিলে গুলি চলে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছোড়ে বলেও অভিযোগ। নিহতের পরিবারের অবশ্য দাবি, কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়াই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয় সুহেলকে। মুখ খোলেন সুহেলের কাকাও। বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের ছেলেটাকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদও করে। তার পর হঠাৎই গুলি।’’ ঘটনায় বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়েছে কাশ্মীরের উত্তর অংশে। বারামুলা জেলা ও কুপওয়ারা শহরেও অশান্তির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। দিনের শেষে ছাত্র-খুনে জড়িত সন্দেহে দুই পুলিশকর্মীতে গ্রেফতারও করেছে প্রশাসন।

গত সপ্তাহেই পুলওয়ামা জেলার ত্রালে সেনাবাহিনীর গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় রাজ্যে। হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সভা ঘিরেও চড়তে থাকে পারদ। সেই সভাতেই পাক-পতাকা দেখিয়ে ভারত-বিরোধী স্লোগান দেওযার অভিযোগ ওঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মাসারত আলমের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রের নির্দেশে প্রথমে গৃহবন্দি রেখে গত কালই গ্রেফতার করা হয় মাসারতকে। সাত দিনের পুলিশি হেফাজতও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। অভিযোগ তার পরই সুর চ়ডাতে থাকেন গিলানি।

সেনার গুলিতে দুই যুবকের মত্যু ও মাসরতের গ্রেফতারির প্রতিবাদে দিন দুয়েক আগেই শ্রীনগর থেকে ত্রাল পর্যন্ত মিছিলের ডাক দেন গৃহবন্দি হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা গিলানি। প্রথম থেকেই সেই পদযাত্রার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। সরকারি তরফে সেই নিষেধাজ্ঞা ঘিরে গত কাল থেকেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন হুরিয়ত কর্মী-সমর্থকরা। বহু এলাকায় পুলিশের দিকে পাথর ছোড়া হয়। নাওহাত্তা এলাকা গত কাল কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশের সঙ্গে বাধে খণ্ডযুদ্ধ। মুখ ঢাকা কিছু বিক্ষোভকারী ভারতের পতাকা পুড়িয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। সব মিলিয়ে গত কাল আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪।

আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। প্রশাসন সূত্রের খবর, অনুমতিহীন সেই মিছিল ঘিরেই আজ সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষোভ থামাতে লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে। চলে জলকামান। এবং শেষমেশ গুলি। পদযাত্রার পাশাপাশি আজ হরতালেরও ডাক দিয়েছিল হুরিয়ত। ভাল সাড়া মিলেছে তাতেও। কাশ্মীরের বেশির ভাগ স্কুল-কলেজই আজ বন্ধ ছিল। খোলেনি অফিস-কাছারি। লালচক জু়ডে প্রায় কোনও দোকান-পেট্রোলপাম্পেরই ঝাঁপ ওঠেনি সারা দিন। চলেনি সরকারি বাস। বেসরকারি বাসও ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম। বেশ কিছু এলাকায় রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ দেখানো হয়।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, কাশ্মীরের এই অশান্তির পিছনে মদত রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের। এখন কাশ্মীর উপত্যকায় পর্যটক সমাগম হয়েছে। তাই গোলমাল পাকানোর জন্য এই সময়কেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE