তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।- ফাইল চিত্র।
দেশজুড়ে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করতে শুক্রবার মধ্যরাতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠান বয়কট করবে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার ফেসবুকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘এত তাড়াহুড়ো করে সারা দেশে জিএসটি চালুর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের আরও একটি মহা ভুল।’’ আর তার প্রতিবাদেই তৃণমূল সংসদের মধ্যরাতের অনুষ্ঠান বয়কট করছে বলে জানিয়েছেন মমতা।
সংসদের ওই অনুষ্ঠান কংগ্রেস ও বাম দলগুলি বয়কট করবে কি করবে না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী ওই কর-ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, ‘‘জিএসটি-কে যখন কেন্দ্রের তরফে দেশে কর-ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে দাবি করা হচ্ছে, তখন রাষ্ট্রপতি হাজির থাকা সত্ত্বেও সংসদের মধ্যরাতের ওই অনুষ্ঠানে কী ভাবে তা আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?’’
বহু দিনের দড়ি টানাটানি, ‘স্বত্ব’র দাবি, পাল্টা দাবি, একাধিক সংশোধনীর পর শেষমেশ ১ জুলাই থেকে সারা দেশে চালু হতে চলেছে জিএসটি। সেই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি নেই মোদী সরকারের। স্বাধীনতার পর এই প্রথম মধ্যরাতে বসতে চলেছে সংসদের অধিবেশন। ৩০ জুন মধ্যরাতের সেই অধিবেশন থেকেই দেশজুড়ে চালু হবে জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা কর।
মমতার বক্তব্য, ‘‘সারা দেশে জিএসটি চালুর দাবি গোড়া থেকেই জানিয়ে এসেছে তৃণমূল। বরং এখন যারা কেন্দ্রের শাসক দল (বিজেপি), তারাই গোড়ার দিকে ৭ বছর ধরে বিরোধিতা করে এসেছে এই জিএসটি’র। তারা এখন সামারসল্ট দেখিয়ে তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু করে কৃতিত্ব নিতে চাইছে। আমরা বহু বার এই তাড়াহুড়ো করে দেশজুড়ে জিএসটি চালুর বিরোধিতা করেছি। এখনও করে চলেছি। কারণ, এখনকার ব্যবস্থায় যে ২০ রকমের কর রয়েছে, আমরা সেগুলির সরলীকরণ করে তাদের একটি কাঠামো দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার জন্য এত তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে জিএসটি চালুর জন্য আমাদের অর্থনীতি আদৌ প্রস্তুত নয়। খুব অসুবিধায় পড়বেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তাই আমরা কেন্দ্রকে আরও সময় দিতে বলেছিলাম।’’
আরও পড়ুন- ১ জুলাই থেকে কীসে বেশি খরচ, কীসে কম, দেখুন এক নজরে
যদিও কেন্দ্রের দাবি, রাজস্ব বৃদ্ধি, পণ্যের দামের সরলীকরণ তো হবেই, জিএসটি চালু হলে পরবর্তী কালে সার্বিক কর নীতি প্রয়োগ আরও সহজ হবে। পাশাপাশি রয়েছে ১.৫ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধির দাবি। কিন্তু কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় দাবিটি হল, জিএসটি চালু হলে চাপ পড়বে না গরিব বা মধ্যবিত্তের পকেটে। উল্টে দাম কমবে এমন কিছু জিনিসের, যার বেশির ভাগের সঙ্গেই সরাসরি জড়িত আমজনতা। ফলে আখেরে লাভ হবে তাদেরই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিএসটি পুরোপুরি চালু না হলে সাধারণ মানুষের ওপর তার প্রভাব কতটা, কী পড়বে, তা নিখুঁত ভাবে বোঝা যাবে না।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘এত তাড়াহুড়ো করে জিএসটি চালু হলে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা। ওই জিএসটি’র সুযোগসুবিধা পাওয়ার জন্য যেগুলির দরকার সেই ইনভয়েস, অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম বা হিসেব ব্যবস্থা বা তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থাগুলির। ই-ওয়েবিল ব্যবস্থারও তেমন অগ্রগতি হয়নি। তাই জিএসটি চালুর জন্য আরও অন্তত ৬ মাস সময় দেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রের।’’
মোট ১২১১টি পণ্য এবং পরিষেবাকে আনা হয়েছে জিএসটির আওতায়। পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করে তাদের উপর চাপানো হয়েছে ০-২৮% হারে কর। তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সোনা এবং না কাটা হিরেকে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পণ্য-পরিষেবাকে রাখা হয়েছে ১৮% করের আওতায়। তবে উৎপাদন শুল্ক এবং আমদানি শুল্ক উঠে গিয়ে শুধুই জিএসটি চালু হওয়ায়, যে সব পণ্য ০% জিএসটির আওতায় পড়ছে, সেগুলির দাম নিশ্চিত ভাবেই কমছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy