ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগে নিউইয়র্কে ম্যাডিসন স্কোয়ার গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় ভি়ড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার জো হয়েছিল অনাবাসী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের। প্রায় একই হাল হয়েছিল তার পরের বছর সিলিকন ভ্যালির সভাতেও। গোটা অনুষ্ঠান সাড়ম্বরে প্রচারিত হয়েছিল আমেরিকা এবং ভারতে।
কিন্তু সে ছিল বারাক-যুগ! আসন্ন ওয়াশিংটন সফরে কিন্তু অনাবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে নিয়ে দামামা বাজানোর কোনও সুযোগই থাকছে না নরেন্দ্র মোদীর। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারতীয় নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অনাবাসী ভারতীয়দের নিয়ে মোদীর-সফরে মাত্রাতিরিক্ত হইচই না হলেই ভাল। ট্রাম্প সরকারের নীতি এবং মেজাজের সঙ্গে তা খাপ খাবে না।
বরঞ্চ আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সব অগ্রগতি এত দিনে হয়েছে, সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে নতুন করে খাতা খুলতেই পরামর্শ দিচ্ছে হোয়াইট হাউস। মোদীর বিদেশনীতির সঙ্গে অনাবাসী-নীতি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে থাকলেও, এ যাত্রায় তার থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সফল করাই পাখির চোখ সাউথ ব্লকের।
আরও পড়ুন: পাশে শিবসেনাও, নিশ্চিন্ত রামনাথ
প্রাথমিক ভাবে ভাবলেও পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মোদী সরকারও চায়নি মার্কিন সফরে গিয়ে ম্যাডিসন স্কোয়ারের মতো কোনও মেগা অনুষ্ঠান করতে। এমনটা নয় যে সুযোগ ছিল না। ওয়াশিংটনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বসবাসকারীর সংখ্যা কিছু কম নয়। অনাবাসী ভারতীয়দের বড় সমাবেশের জন্য ওয়াশিংটন কনভেনশন সেন্টার (বাহান্ন হাজার স্কোয়ার ফুটের বলরুম), ওয়ার্ডম্যান পার্ক অথবা ওয়াশিংটন ম্যারিয়টের কথা ভাবা হয়েছিল। ঘটনা হল, এই হলগুলিতে এর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংহও বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু পরে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে স্থির হয় ওয়াশিংটনের পাশেই ভার্জিনিয়ার টাইসন স্কোয়ারে রিৎস কার্লটন হোটেলের বলরুমে অনাবাসীদের সঙ্গে দেখা করবেন মোদী। ১৪ হাজার স্কোয়ার ফুটের এই বলরুমটিতে বড়জোর হাজার দেড়েক মানুষ ধরবে।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, ‘‘আমেরিকায় বসবাসকারী অমার্কিন নাগরিকদের সম্পর্কে ট্রাম্প যে নীতি নিয়ে চলছেন, তাতে এই মুহূর্তে সেখানকার অনাবাসী ভারতীয়দের শক্তি প্রদর্শনের ব্যাপারটা করতে গেল হিতে বিপরীত হতে পারে। এর আগে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব ম্যাডিসন স্কোয়ারে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ভারতীয় সামাজিক বৈচিত্র্যের উদ্যাপন হিসাবেই তাঁরা দেখেছিলেন বিষয়টি। কিন্তু এই সরকার গোটা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারে।’’
তবে অনাবাসীদের নিয়ে বড় সমাবেশ না করলেও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় পেশাদারদের দক্ষতার দিকটি গুরুত্ব দিয়েই তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছেন ভারতীয় নেতৃত্ব।
নয়াদিল্লি এ কথা স্পষ্ট করেই জানাবে যে আমেরিকায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পক্ষেত্রে মার্কিনদের আরও বেশি চাকরি দিতে গিয়ে এইচ-ওয়ান-বি ভিসা আইনে রদবদল ঘটিয়ে যেন ভারতীয় মেধা ও দক্ষতার অনুপ্রবেশে অযথা বাধা না দেওয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমেরিকার ভারতীয় কর্মীদের ‘বোঝা’ না ভেবে কেন সম্পদ হিসেবেই দেখা উচিত, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও নথি ট্রাম্পের সামনে তুলে ধরবেন মোদী। জানাবেন কী ভাবে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের দৌলতে মার্কিন অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার লাভ হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy