Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মাবত: দায় রাজপুত ভোট, তাই কি চুপ মোদী?

তবু নিরাপত্তার অভাব আর চাপের মুখে বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যেই ছবি মুক্তি পায়নি ছবিটি। সঙ্গে তাণ্ডবও চলছে বহাল তবিয়তে। কাল ছাড় পায়নি স্কুলের শিশুরাও।

প্রহরা: লখনউয়ের একটি সিনেমা হলের সামনে। ছবি: পিটিআই।

প্রহরা: লখনউয়ের একটি সিনেমা হলের সামনে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২২
Share: Save:

কথায় কথায় যিনি টুইট করেন, গুরুগ্রামে স্কুলবাসের উপর হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত নীরব তিনি।

তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

গত কয়েক মাস ধরে ‘পদ্মাবত’ ঘিরে উত্তেজনার আগুন ক্রমশই ছড়িয়েছে। মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যেই। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, সব রাজ্যেই ছবিটি দেখাতে হবে। তবু নিরাপত্তার অভাব আর চাপের মুখে বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যেই ছবি মুক্তি পায়নি ছবিটি। সঙ্গে তাণ্ডবও চলছে বহাল তবিয়তে। কাল ছাড় পায়নি স্কুলের শিশুরাও।

তবু চুপ মোদী।

কাল থেকে আসিয়ান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ সকালেও ‘জাতীয় ভোটার দিবসে’ একটি ভিডিও প্রকাশ করে নতুন ভোটারদের কাছে টানতে চেয়েছেন। হিমাচলপ্রদেশের স্থাপনা দিবসেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কিন্তু ‘পদ্মাবত’-এর তাণ্ডব নিয়ে টুঁ শব্দটি নেই। মোদীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও বলছে, কোনও রাজ্য কেন্দ্রের সাহায্য চায়নি। বিক্ষোভ সামলানোর দায় রাজ্যেরই।

কেন এমন দায় ঝেড়ে ফেলা? ব্যাখ্যা একটাই। রাজপুত ভোট। যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাতে। সব ক’টিই এখন বিজেপির দখলে। ‘পদ্মাবত’ ছবিতে রাজপুত আবেগেই আঘাত এসেছে বলে অভিযোগ। তাদেরই এক প্রান্তিক গোষ্ঠী করণী সেনাই যাবতীয় তাণ্ডবের কান্ডারি। মাস কয়েক আগে যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেও গোটা দেশের মানুষ অবহিত ছিলেন না। সংগঠনের সভাপতি লোকেন্দ্র সিংহ কালভি নানা দল ঘুরে এখন বিজেপিরই সঙ্গে। দু’বার ভোটেও লড়েছেন। সামনে রাজস্থানে উপনির্বাচন, বছর শেষে বিধানসভাও। রাজপুত আবেগে ঘা দেওয়ার ঝুঁকি তাই নিতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব।

রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোন বা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী—সকলের মুখেই এক রা। অশান্তি এড়াতে ছবির প্রদর্শনী বন্ধ রাখুন হল মালিকরা। আর বিরোধও চলুক, আইনের আওতায়। কিন্তু বিক্ষোভ এক বার দানা বাধলে তাতে লাগাম কষা কি সহজ? প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কাল রাতেই রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেছেন, ‘‘কোনও যুক্তিতেই শিশুদের হামলার নিশানা করা যায় না।’’ আর আজ কংগ্রেস বলল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও বিক্ষোভকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বিজেপি।

মোদী তো নীরব বটেই, স্কুলবাসে হামলার পরে বিজেপির কোনও বড় নেতা-ও বিষয়টির নিন্দা করেননি। শুধু মুখ খুলেছেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ ভি কে সিংহ। তিনি আবার বিক্ষোভকারীদেরই পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘অভিব্যক্তির স্বাধীনতা ইতিহাসকে বিকৃত করার অধিকার দেয় না। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বসে সমাধানসূত্র বার করা উচিত। না হলে এমন গোলমাল হবেই।’’ কংগ্রেসের প্রশ্ন এখানেই, কেন্দ্র হোক বা অশান্ত রাজ্য—সর্বত্রই বিজেপির শাসন। এত দিন আলোচনায় বাধা দিয়েছে কে? স্মৃতি ইরানির অধীনে থাকা সেন্সর বোর্ডই তো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে ছবির ছাড়পত্র দিয়েছে!

কংগ্রেসের রাজপুত নেতা দিগ্বিজয় সিংহও ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে বলেছেন, ‘‘কোনও ধর্ম বা জাতির আবেগকে ক্ষুণ্ণ করে ছবি বানানোই উচিত নয়।’’ তবে কংগ্রেস বলছে, এটি দিগ্বিজয়ের নিজস্ব মত। অরবিন্দ কেজরীবালও রাজনীতির সুযোগ ছাড়ছেন না। টুইট করে আজ তিনি জানিয়েছেন, স্কুলবাসে হামলার পর কাল সারা রাত তিনি ঘুমোতে পারেননি। দলিত-সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন সুকৌশলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE