ভিড়: ফিরল নোটবাতিলের স্মৃতি। এটিএমের সামনে লম্বা লাইন। মঙ্গলবার ভোপালে। ছবি: পিটিআই
গত কালই তোপ দেগেছিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। অভিযোগ করেছিলেন, দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে ফাটকাবাজি হচ্ছে। টাকা নেই বাজারে। চলতি বছরের শেষে মধ্যপ্রদেশে ভোট। তার আগে অশান্তি তৈরির লক্ষ্যেই এমনটা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
কিন্তু নোটের আকাল তো শুধু মধ্যপ্রদেশে নয়। আরও প্রায় বারো রাজ্যে। কিন্তু কেন এমন অবস্থা হল, তার সদুত্তর আজ সারাদিনে দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
সূত্রের খবর, নগদের আকালের খবর গোড়ায় ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভেবেছিল, জোগান বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে। তাই পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সোমবার অর্থ মন্ত্রক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের নিয়ে তৈরি কোর কমিটির বৈঠক হলেও সরকারি ভাবে সঙ্কটের কথা অস্বীকার করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সিদ্ধান্ত নেন, রাখঢাক করে লাভ নেই। গুজব ছড়ালে লোকে আতঙ্কে আরও বেশি করে টাকা তুলবে। তাতে হিতে বিপরীত হবে। তার চেয়ে প্রকাশ্যে সব জানিয়ে আশ্বাস দেওয়াই ভাল।
সরকার আকাল কবুল করলেও বিরোধীরা নাছোড়। তাঁদের কটাক্ষ, নোটবন্দির সময় নরেন্দ্র মোদী কালো টাকা উদ্ধার আর সন্ত্রাস রোখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে সব কিছুই হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, নগদের ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর দাবিও লুটোপুটি খাচ্ছে। নোট বাতিলের ঠিক আগে, ২০১৬-র ৬ নভেম্বর বাজারে ১৭.৭৪ লক্ষ কোটি টাকার নগদ ছিল। ২০১৮-র ৬ এপ্রিলে নগদের পরিমাণ ১৮.১৭ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষ গর্গের অবশ্য যুক্তি, নোট বাতিল না হলে নগদের পরিমাণ এখন ২২ থেকে ২৩ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যেত।
এখন প্রশ্ন হল, বাজারে নগদের চাহিদা কি ২২-২৩ লক্ষ কোটি টাকা, আর সরকার গায়ের জোরে জোগান ১৮ লক্ষ কোটিতে আটকে রেখেছে? প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, একতরফা ভাবে নগদের জোগান কমিয়ে দেওয়াতেই এই সঙ্কট। কেন্দ্র অবশ্য সে কথা মানছে না। গর্গের বক্তব্য, কিছু লোক দু’হাজার টাকার নোট জমিয়ে রাখছে। সেটা আর অর্থনীতিতে ফিরছে না। অর্থনীতিবিদদের মতে, কালো টাকা নগদে জমিয়ে রাখতে হলে বড় অঙ্কের নোটই সবথেকে সুবিধাজনক। তবে কি নতুন নোটের সাহায্যে রমরমা চলছে কালো টাকার? এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়েছেন গর্গ।
নোটের আকাল ঘিরে নানা তত্ত্ব এখন বাজারে উড়ছে। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার যুক্তি দিয়েছেন, অনেক রাজ্যে ফসল কেনার কাজ চলছে। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে তার ফলে নগদের চাহিদা বেড়ে থাকতে পারে।
বিরোধীদের আবার অভিযোগ, কর্নাটকের ভোটের আগে কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলতেই নগদের জোগান কমানো হয়েছে। সরকারি কর্তারা স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি। তবে তাঁদের যুক্তি, ভোটের আগে নগদের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যেও নগদের আকাল দেখা দিল কেন?
গত কয়েক মাস ধরেই নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিজয় মাল্যর মতো ঋণখেলাপিরা দেশ ছাড়া। এর ফলে কি ব্যাঙ্কগুলির উপর লোকের আস্থা কমেছে? তার উপর প্রস্তাবিত ব্যাঙ্ক আমানত সুরক্ষা বিলে বলা হয়েছিল, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে আমজনতার আমানতের টাকা দিয়েই ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ফেরানো হবে। তার ফলেও মানুষ ব্যাঙ্কের টাকা তুলে নিচ্ছেন কি না, প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অন্ধ্র, তেলঙ্গানার মানুষের মধ্যে ব্যাঙ্কের টাকা মার যাওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল বলে রিপোর্ট মিলেছে।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী আজ বলেছেন, ‘‘অচ্ছে দিন শুধু নীরব মোদী আর মোদীজির মেহুল ভাইদের জন্যই এসেছে। মোদীজি মানুষের পকেট থেকে টাকা নিয়ে নিজেদের বন্ধুদের পকেটে ভরে দিয়েছেন।’’ গর্গের অবশ্য দাবি, ব্যাঙ্ক প্রতারণার সঙ্গে নগদের সম্পর্ক টানা অনুচিত। ব্যাঙ্কের উপরেও মানুষের আস্থা অটুট।
নগদের আকাল নিয়ে আর একটা ব্যাখ্যাও মিলেছে। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি সৌম্য দত্ত ও সম্পাদক সঞ্জয় দাসের মতে, ‘‘নোটবন্দির পর থেকে নগদের জোগান এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ফলে গত এক বছরে বহু বার হাতবদল হয়ে নোটগুলির এমন দশা হয়েছে যে, সেগুলি আর মেশিনে ভরার উপযুক্ত নয়। তাই ব্যাঙ্কে টাকা থাকলেও এটিএম-এ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy