Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাতটা চাই, ঘুরে ঘুরে বার্তা সম্পাদকের

হায়দরাবাদের যুদ্ধের আগে এ রাজ্য থেকে সে রাজ্য চষে ফেলছেন তিনি। উপলক্ষ, দলের রাজ্য সম্মেলন। লক্ষ্য, বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির জোট বাঁধার সলতে পাকানো।

সীতারাম ইয়েচুরি

সীতারাম ইয়েচুরি

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

এই তিনি মোরেনায়। তার পরেই তাঁকে দেখা যাচ্ছে মুদাবিদরিতে! এখন তিনি ঝুনঝুনুতে। আবার তিনি ব্রহ্মপুরে!

গেছো দাদা নন! তিনি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি!

হায়দরাবাদের যুদ্ধের আগে এ রাজ্য থেকে সে রাজ্য চষে ফেলছেন তিনি। উপলক্ষ, দলের রাজ্য সম্মেলন। লক্ষ্য, বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির জোট বাঁধার সলতে পাকানো। এ বারের সম্মেলন-পর্বে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় ১৫টি রাজ্যে সফরের সূচি হাতে নিয়েছেন ইয়েচুরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যা সর্বকালীন রেকর্ড!

সিপিএমের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কেরল, বাংলা, ত্রিপুরা, অন্ধ্রপ্রদেশ বা তেলঙ্গানায় এখনও সম্মেলন বাকি। ওই রাজ্যগুলির প্রত্যেকটাতেই থাকার কথা সাধারণ সম্পাদকের। যাওয়ার কথা মহারাষ্ট্র বা তামিলনাড়ুর রাজ্য সম্মেলনেও। তার আগে ধানবাদে ঝাড়খণ্ড, ব্রহ্মপুরে ওডিশা, ঝুনঝুনুতে রাজস্থান, মুদাবিদরিতে কর্নাটক বা মোরেনায় মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সম্মেলনে নিজের লাইনের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে এসেছেন তিনি।

দলের পলিটব্যুরো সদস্যদের মধ্যে রাজ্যগুলির সাংগঠনিক দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া থাকে সিপিএমে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মেলনে সেই পলিটব্যুরো সদস্যেরা হাজির থাকেন। সাধারণ সম্পাদক অবশ্য যে কোনও রাজ্যেই যেতে পারেন। তবে সম্পাদক সচরাচর বাছাই করা রাজ্যেই যান। সেই রীতি ভেঙে এ বার গোটা দেশে দৌড়চ্ছেন ইয়েচুরি। প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীদের মোকাবিলায় হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসের আগে যত বেশি সম্ভব সমর্থন জোগাড়ে তিনি নিজেই সক্রিয়।

বিজেপি-যে অন্য যে কোনও প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক, বিতর্কের বহু পথ পেরিয়ে সে কথা মেনে নিয়েছেন কারাটেরা। এখন প্রশ্ন— ওই বিপদ মোকাবিলায় কংগ্রেসের হাত কত দূর ধরা হবে? এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেসের আগে আগামী ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি কলকাতায় বসছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দলিলের খসড়া যেখানে চূড়ান্ত হবে। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার রাস্তা বন্ধ রাখতে কারাটেরা এখনও বদ্ধপরিকর! ইয়েচুরি চাইছেন কৌশলে একটা দরজা খোলা রাখতে। তাঁর প্রয়াস কতটা সফল হয়, দেখা যাক!’’

বিশাখাপত্তনমে তিন বছর আগের পার্টি কংগ্রেসে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্নায়ুর লড়াইয়ের পরে ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হলেও পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর শিবির সংখ্যাগুরু ছিল না। যে কারণে নিজের রাজ্যসভায় যাওয়ার বিতর্কেও কারাটেরা দলের অন্দরে জয়ী হয়েছেন। তবে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজেপি যে বেনজির বিপদ, এই মতকে ধীরে ধীরে দলের মধ্যে অনেকটাই প্রতিষ্ঠা করাতে পেরেছেন ইয়েচুরি। কেরলের মতো কারাট-ভক্ত রাজ্যেও মতে চিড় ধরেছে! রাজ্যসভার দায়িত্ব মিটে যাওয়ার পরে সাধারণ সম্পাদক এখন সংগঠনেই বেশি নজর দিচ্ছেন। সম্মেলনকে উপলক্ষ করে তাই রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে নিজেই ব্যাখ্যা করছেন, বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য কেন জরুরি?

এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তামিলনাড়ু থেকে স্বয়ং ইয়েচুরি রবিবার বলছেন, ‘‘সংগঠনই এখন মূল দায়িত্ব। যতগুলো রাজ্যের সম্মেলনে পারছি, নিজেই যাচ্ছি। আগে যেখানে কোনও সাধারণ সম্পাদক যাননি, সেখানেও যাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sitaram Yechury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE