আপাতত সরকার গড়তে পারল না কেউই। তাই জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপালের শাসন জারি করতে বাধ্য হল কেন্দ্র।
ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় এখনও পর্যন্ত কোনও দলই সরকার গড়ার অবস্থায় নেই। ওমর আবদুল্লা তদারকি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোয় কেন্দ্রের উপরে আরও চাপ তৈরি হয়। এই অবস্থায় জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপাল শাসন জারি করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রের শীর্ষ কর্তারা। গত কাল কেন্দ্রের কাছে পাঠানো রিপোর্টে রাজ্যপালের শাসনের সুপারিশ করেন রাজ্যপাল এন এন ভোরা। সেই সুপারিশে সম্মতি জানান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধানের ৯২ (১) ধারা মেনে তার পরে রাজ্যপালের শাসন জারি করা হয়।
প্রশ্ন হল, কেন ফল প্রকাশের এত দিন পরেও কেউ সরকার গড়তে পারল না?
চার দিন আগেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বাড়িতে জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পিডিপির সঙ্গে মিলে সরকার গড়ার পথে এগোনো হবে। সেই ঘোষণা প্রকাশ্যে করাও হয়। পিডিপির দিক থেকেও ইতিবাচক সঙ্কেত দেওয়া হয়। স্থির হয়েছিল, দুই দলের পক্ষে একটি কমিটিও গড়া হবে অভিন্ন কর্মসূচি তৈরির জন্য। কিন্তু তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত বনিবনা হয়নি দুই দলের। কারণ দু’টি। এক, দু’টি দলই চায়, মুখ্যমন্ত্রী তাদের হোক। আর দুই, মতাদর্শগত ফারাক।
দুই দলের কেউই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি ছেড়ে দিতে চায় না। পিডিপি যেমন বড় দল হিসাবে মুফতি মহম্মদ সইদকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চায়। বিজেপি চায় মুখ্যমন্ত্রী হোক তাদের। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী করার ধারাবাহিকতা ছিন্ন করতে চাননি অমিত শাহ।
দ্বিতীয় বড় কারণ হল, দুই দলের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য অনেক। পিডিপি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ থেকে সামরিক বাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতাসব বিষয়েই কেন্দ্রের মনোভাব স্পষ্ট ভাবে জানতে চায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে পিডিপির কট্টর মনোভাব মেনে নেওয়াও সম্ভব নয় বিজেপির পক্ষে। তাই আলোচনার মাধ্যমে ৩৭০ ধারার পাশ কাটিয়েও জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করতে এখন সময় লাগছে। নয়া বিধানসভা গড়ার জন্য নির্ধারিত সময়, অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারির মধ্যে তা সম্ভব ছিল না। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, অস্থায়ী দায়িত্ব থেকে সরে এসে বিজেপির সুবিধাই করলেন ওমর আবদুল্লা। কেন্দ্রে বিজেপির সরকার হওয়ার সুবাদে রাজ্যপাল শাসনের মাধ্যমেও জম্মু-কাশ্মীরে সরকার বকলমে চালাতে পারবে বিজেপিই।
তবে শ্রীনগরে একটি স্থায়ী সরকারের চেষ্টাও করা হবে। ওমরের সঙ্গে জোটের রাস্তাও খোলা। রাজ্যপাল শাসনের পর যে দল বিজেপির শর্তে বেশি আগ্রহ দেখাবে, তাদের সঙ্গে মিলেই সরকার হবে। যদি মুফতি মহম্মদ সইদকে মুখ্যমন্ত্রী করতেই হয় তা হলে দিল্লি বিধানসভা ভোটের আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বিজেপি। তাই জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে তৎপরতা ফের দিল্লিতে ভোটের পরেই শুরু করতে চায় তারা। এক বিজেপি নেতার কথায়, “তখন বলা যেতেই পারে যে বিজেপি শ্রীনগরে এক জন সংখ্যালঘুকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে।”
রাজ্যপালের শাসন জারির পরে পরস্পরের দিকে তোপ দেগেছে পিডিপি ও ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স। পিডিপি-র দাবি, ওমর দায়িত্ব না ছাড়লে এখনও হাতে দু’সপ্তাহ সময় ছিল। তিনি ‘শিশুসুলভ’ আচরণ করলেন। টুইটারে ওমর আবদুল্লার জবাব, “৬ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবিতে অনড় রইলেন মুফতি মহম্মদ সইদ। রাজ্যের মানুষ যে বিপাকে পড়ছেন তা তিনি খেয়াল রাখলেন না। এ বারে ভোটদানের হার ছিল অসাধারণ। তার পরেও রাজ্যপালের শাসন জারিতে আমি দুঃখিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy