মায়ের সঙ্গে সেই সদ্যোজাত। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গুটি গুটি পায়ে টলমল করে হাঁটছিল সে। মাঝেমধ্যে পড়েও যাচ্ছিল মাটিতে। কিন্তু মা পিছন থেকে এসে একটু আদর করতেই ফের উঠে দাঁড়িয়ে পড়ছিল। সদ্যোজাত এক জেব্রাকে নিয়ে তার মায়ের এই খেলায় মেতে ওঠার চিত্র বুধবার ভোরের আলিপুর চিড়িয়াখানার।
ঘটনাচক্রে এ দিনই আবার চিড়িয়াখানার ১৪০তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এমন দিনে নতুন জেব্রার জন্মে বেজায় খুশি কর্তৃপক্ষ। অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষের কথায়, “এ তো জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উপহার।” চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, রোজই ভোরে গোটা চিড়িয়াখানা চত্বর ঘুরে দেখেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বুধবার ভোরেও তাঁরা সেই কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সে সময়ে ডিরেক্টর অফিসের ঠিক পাশে জেব্রা থাকার জায়গায় হঠাৎ ওই দৃশ্য দেখেন এক নিরাপত্তারক্ষী। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খবর দেন কর্তৃপক্ষকে। ঘটনাস্থলে আসেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষ। এর পরে চিকিৎসক এসে সদ্যোজাতকে পরীক্ষা করে জানান, সেটি মেয়ে এবং তার জন্ম হয়েছে প্রায় রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ। জেব্রাটি সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে বলেই জানান চিকিৎসক।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, সাতের দশকের পরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় কোনও নতুন জেব্রার জন্ম হয়নি। এক সময়ে তো চিড়িয়াখানা জেব্রাবিহীন হয়ে পড়েছিল। এর পরে ২০১০ সালে ইজরায়েল চিড়িয়াখানা থেকে আফ্রিকার দক্ষিণ সাহারা এলাকার দু’টি পুরুষ ও দু’টি স্ত্রী জেব্রা কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। পুরুষ দু’টির নাম দেওয়া হয় উজ্জ্বল ও বিদ্যুৎ এবং মেয়ে জেব্রা দু’টির নাম হয় দ্যুতি ও রোহিণী। চিড়িয়াখানার এক কর্তা জানালেন, নতুন কোনও জেব্রার জন্ম না হওয়ার বিষয় নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তাঁরা।
কিন্তু এর মধ্যেই ২০১৩ সালের অগস্টে উজ্জ্বল ও দ্যুতির একটি মেয়ে জন্মায়। বুধবার বিদ্যুৎ ও রোহিণীর মেয়ে হল। অধিকর্তা জানান, এই লক্ষণ ভাল। কারণ, কন্যার জন্ম হলে তা বংশ বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক। এ ছাড়া, পরপর জেব্রা-শিশু জন্মানোয় এটা পরিষ্কার যে, এখানকার আবহাওয়া ওই জেব্রাদের পক্ষে উপযুক্ত। এই পরিবেশের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিতে পেরেছে তারা। এ দিন দুপুরে চিড়িয়াখানার দর্শকেরাও এই নতুন অতিথিকে পেয়ে খুব খুশি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা স্বাতী বসু বলেন, “গত বছর খবর পেয়েছিলাম জেব্রা জন্মেছে। কিন্তু দেখিনি। আজ ভাগ্যিস এসেছিলাম।” তবে রোহিণী বেশ ব্যস্ত তার সদ্যোজাতকে নিয়ে। বিদ্যুৎকে ছাড়া আর কাউকেই কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না সে। কাছে গেলেই পা তুলে তাড়া করছে উজ্জ্বলের পরিবারকেও।
কিন্তু এখন সকলেরই প্রশ্ন, কী নাম রাখা হবে ওই সদ্যোজাতের?
মজা করে এক কর্তা বললেন, “শুভ দিনে জন্ম যখন, তখন নামটা না হয় শুভক্ষণ দেখেই দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy