হাতির জন্য আন্ডারপাস। দলমায় জাতীয় সড়ক পার হতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনও বা রাস্তায় উঠে হাতি দিগ্ভ্রান্তের মতো এদিক-ওদিক চলে গিয়ে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এই সমস্যা এড়াতেই এ বার দলমায় ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কে হাতির জন্য তিনটি ‘আন্ডারপাস’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বন দফতর।
রাঁচির বন দফতরের ডিএফও (ওয়াইল্ড লাইফ) কমলেশ পাণ্ডে বলেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি দলমার রামগড়, শহরবেড়া ও বারানডি—তিনটি জায়গা দিয়ে হাতি সব থেকে বেশি রাস্তা পার হয়। এই তিন জায়গায় যে অংশ দিয়ে হাতি সব থেকে বেশি পারাপার করে সেখানে আন্ডারপাস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এনএইচএআই এর জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা শেষ করেছে। নক্শা তৈরির কাজ চলছে। জিপিএস লোকেশনও হয়ে গিয়েছে।’’
২ নম্বর জাতীয় সড়কের বারহি থেকে শুরু হয়ে রাঁচি-জামশেদপুর হয়ে বহরাগোড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ককে যুক্ত করেছে ৩৫২ কিলোমিটার লম্বা ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কটি। চলে গিয়েছে একেবারে দলমার বুক চিরে।
কমলেশবাবুর কথায়, এর মধ্যেই আবার এই সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। রাস্তা আরও চওড়া হয়ে গেলে হাতির রাস্তা পেরোতে আরও অসুবিধা হয়ে যাবে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
শুধু হাতির দুর্ঘটনার আশঙ্কাই নয়, বন দফতরের আধিকারিকদের মতে রাস্তায় উঠে হাতি দিশেহারা হয়ে গেলে হাতি ও মানুষের সংঘাতের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এই সব দিক ভেবেই এই আন্ডারপাসের পরিকল্পনা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আন্ডারপাস করলে হাতি তা ব্যবহার যে করবেই, তার নিশ্চয়তা কোথায়? কমলেশবাবু জানান, ওই ন্যাশনাল হাইওয়ের ধার ঘেঁষে সুবর্ণরেখা ক্যানাল। সম্প্রতি ওই ক্যানালের উপর দিয়েও তিনটি চওড়া ঢালাই সেতু করা হয়েছে। আগে হাতি অগভীর ওই ক্যানালে নেমেই পারাপার করত। এখন দেখা যাচ্ছে, হাতি সেতু ব্যবহার করছে। বন দফতরের আধিকারিকদের মতে ধীরে ধীরে আন্ডারপাস ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে হাতি। ডিএফও জানাচ্ছেন, আন্ডারপাসে হাতি যাতে সহজেই ঢুকতে-বেরোতে পারে এবং যেন রাস্তায় উঠতে না পারে তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। প্রতিটি আন্ডারপাসের দু’দিকেই থাকবে সিসি ক্যামেরা। ফলে কত হাতি আন্ডারপাস ব্যবহার করছে সেই পরিসংখ্যানও পাওয়া যাবে।
হাতির জন্য আন্ডারপাস বিষয়টি অভিনব বলে জানিয়েছেন অসমের হাতি বিশেষজ্ঞ পরিমল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘হাতি খুব বুদ্ধিমান প্রাণী। হাতি চায়, সে যে জায়গা দিয়ে যাচ্ছে সেখানে যেন কোনও শব্দ না হয়। চায় বিনা বাধায় যাতায়াত করতে। আন্ডারপাস ব্যবহার করে সে যদি বুঝতে পারে, এটা নিরাপদে রাস্তা পার হওয়ার সব থেকে সুবিধাজনক উপায়, তা হলে হাতির পক্ষে আন্ডারপাস ব্যবহার করা আশ্চর্যের কিছু নয়।’’ পরিমলবাবু জানান, আস্তে আস্তে আন্ডারপাসেই অভ্যস্ত হবে হাতিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy