ধান খেত থেকে হাতিকে দূরে রাখতে নজরমিনারে বসে রাত পাহারা দেওয়া হতো। কিন্তু, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাঠামবাড়ি এবং তারঘেরা জঙ্গল লাগোয়া মেচবস্তি এলাকাতে সেই নজরমিনারই গুঁড়িয়ে দিয়েছে এক দাঁতাল। তাতে হুড়মুড়িয়ে পড়ে ৬ যুবক জখম হয়েছেন। ৪ জনের চোট অল্প। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বাকি দু’জনকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই দুই যুবকের নাম আসনু ওঁরাও এবং কামিল ওঁরাও।
হাতি সাধারণত টংঘর ভেঙে দিয়েছে এমন ঘটনা ডুয়ার্স এলাকাতে ঘটে। তবে রাতপাহারা চলাকালীন মানুষ সমেত টংঘর ভেঙে ফেলার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলে এলাকার অনেকেই দাবি করেছেন। জঙ্গল দিয়ে ঘেরা মেচবস্তি এলাকাতে বছরে একবার ধানের চাষ করেন বাসিন্দারা। ধানগাছ বড় হতেই টংঘর তৈরি করে তারওপর রাত পাহারা শুরু করেন বাসিন্দারা। মেচবস্তি এলাকায় যে টংঘরটি এদিন দাঁতাল ভেঙে ফেলেছে সেটি এলাকার বাসিন্দারা বছর দুয়েক আগে তৈরি করেছিলেন। বিদ্যুত দফতরের ফেলে রাখা তিনটি পুরানো পাকা খুঁটি এবং একটি কাঠের খুঁটি দিয়ে এই মাচাটি তৈরি হয়েছিল।
বাঁশ দিয়ে মাটি থেকে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতায় মাচা বেধে ওপরে ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া হয়েছিল। বাঁশের মই দিয়ে ওপরে ওঠার ব্যবস্থাও ছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকেই রাত পাহারা শুরু করেছিলেন এলাকার ছয় যুবক। গত এক মাসে চার থেকে পাঁচবার হাতির দলকে চকোলেট বোম ফাটিয়ে তাড়িয়েও ছিলেন এই ছয় যুবক। কামিল, আসনু, পাতরাস ছাড়া রেতনু খেড়িয়া, রাজকুমার ওঁরাও এবং ফাগ্নু খেড়িয়া সকলে প্রতিরাতে নিয়ম করে ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে রাতের খাবার খেয়ে নজরমিনারে উঠে পড়তেন। টংঘরে উঠে ঘণ্টা খানেক গল্পগুজব করে এগারোটা নাগাদ শুয়ে পড়েন ছয়বন্ধু। সাধারণত, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে হাতির দল ধানখেতে ঢুকলেই ধানখেত মারাবার শব্দে ওদের ঘুম ভেঙে যায়। তারপরেই নজরমিনার থেকে চকলেট বোম ছোড়ে ওরা। বৃহস্পতিবার প্রতিরাতের মতো নিয়ম করে ৯টা নাগাদ নজরমিনারে উঠে পড়ে। ১১টা নাগাদ ঘুমিয়েও পড়ে। দাঁতালটি তারপরে গুটিগুটি পায়ে নজরমিনারের একেবারে কাছে চলে এলেও দাঁতালের শব্দ পায়নি কেউই। এর পরেই দাঁতাল শুঁড় নজরমিনারের খুঁটিতে জড়িয়ে হ্যাঁচকা টান মেরে যখন নজরমিনার গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তখন ভূমিকম্প হচ্ছে বলেই ধরে নিয়েছিলেন ওরা। কামিল ওঁরাও এবং আসনু ওঁরাওদের কথায়, ‘‘ঘুমের মধ্যেই চারপাশ একেবারে কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রবল দুলুনি শুরু হল আর মুহূর্তের মধ্যেই ২৫ ফুট উচ্চতা থেকে সকলে ছিটকে পড়ে গেলাম।’’ ধানখেতের নরম কাদা মাটিতে পড়ায় বিপত্তি বাড়েনি বলেই জানান তাঁরা। নীচে পড়ে ফুট কুড়ি দূরত্বে মূর্তিমান দাঁতালকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আসলে কী ঘটেছে সেটা বুঝতে পারি বলে জানাল আরেক সদস্য পাতরাস খেড়িয়া।
তবে হাতি ওদের পতন দেখলেও আর কিন্তু তেড়ে আসেনি। ঘাড়ে, কোমরে প্রবল ব্যথা নিয়েই এরপর সকলে ছুটে লোকালয়ের দিকে ফিরে সকলকে জানান। এরপর বনবস্তির বাসিন্দারা বৈকন্ঠপুর বনবিভাগের তারঘেরা রেঞ্জকে বিষয়টি জানালে বনদফতরের গাড়িতেই তাদের মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘হাতি বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী। নজরমিনার থেকে ওদের উদ্দেশ্য করে পটকা ছোড়া হয় সেটা ওরা জানে। তাই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই সেটি গুঁড়িয়েছে দাঁতাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy