Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডুয়ার্সে নয়া পর্যটন গন্তব্য পুজোর আগেই

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা বাগান। পাশে গরুমারার জঙ্গল। ঝোরা বা নদীর লাগোয়া গ্রামের গা ঘেঁষে রয়েছে চোখ জুড়ানো ছোট পাহাড়। ডুয়ার্সের এমন মনোরম পরিবেশেই নতুন পাঁচটি পর্যটন কেন্দ্র খুলতে চলছে রাজ্য পযর্টন দফতর। দু’টিতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলিতে খাবার-পানীয় খেয়ে এলাকায় ঘুরতে পারবেন পযর্টকেরা।

নেওড়া নদীর পাশে সাথকিয়া কেন্দ্রটি।

নেওড়া নদীর পাশে সাথকিয়া কেন্দ্রটি।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০২:৪২
Share: Save:

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা বাগান। পাশে গরুমারার জঙ্গল। ঝোরা বা নদীর লাগোয়া গ্রামের গা ঘেঁষে রয়েছে চোখ জুড়ানো ছোট পাহাড়। ডুয়ার্সের এমন মনোরম পরিবেশেই নতুন পাঁচটি পর্যটন কেন্দ্র খুলতে চলছে রাজ্য পযর্টন দফতর। দু’টিতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলিতে খাবার-পানীয় খেয়ে এলাকায় ঘুরতে পারবেন পযর্টকেরা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর পুজোর মরসুমের আগে খুলে যাচ্ছে পাঁচটি কেন্দ্রই।

পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, গত দু’বছর ধরে পরিকাঠামো তৈরির পর গত ২১ জুলাই পযর্টন দফতরের তরফে পাঁচটি কেন্দ্রের টেন্ডার বা এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্টের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ৭ অগস্ট টেন্ডার খোলার দিনও ধার্য করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সংস্থা ছাড়াও যৌথ মালিকানার সংস্থা, লিমিটেড কোম্পানি তো বটেই, সরকারি অধিকৃত সংস্থা বা কো-অপারেটিভ সংস্থাকে কেন্দ্রগুলির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। লাটাগুড়ি, মালবাজার, মূর্তির মতো জায়গার পর টিলাবাড়ি, পশ্চিম ডামডিম, সাথকিয়া, ইনডং এবং মঙ্গলবাড়িতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

রাজ্য পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম অধিকর্তা সুনীল অগ্রবাল বলেন, ‘‘প্রতি বছর বহু দেশ-বিদেশের পযর্টক এখানে আসেন। কিন্তু থাকা বা সময় কাটানোর জন্য সরকারি ব্যবস্থা সে তুলনায় কমই। তা বাড়াতে এবং নতুন এলাকাকে পযর্টন মানচিত্রে তুলে আনার জন্য এই উদ্যোগ।’’ সুনীলবাবু জানান, টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। খতিয়ে দেখে আগামী দু’-এক মাসের মধ্যে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে। পুজোর আগে কেন্দ্রগুলি খুলে দেওয়া হবে।


গরুমারা লাগোয়া টিলাবাড়ি কেন্দ্র।

চালসা এবং গরুমারার জঙ্গলে ঢোকার গেটের মাঝখানে জঙ্গল এবং বড়দিঘি চা বাগান। এর মাঝখানেই টিলাবাড়ি। সেখানেই তৈরি হয়েছে রেস্তোরাঁ, পানশালা এবং সময় কাটানোর জায়গা। এলাকায় কটেজ তৈরির কাজ চললেও আপাতত তা পুজোর আগে খোলা হচ্ছে না। এর পরেই রয়েছে পশ্চিম ডামডিম। আপালচাঁদ এবং তার ঘেরা জঙ্গলে তৈরি হয়েছে কেন্দ্রটি। দুই শয্যার সুন্দর আটটি কটেজ, রেস্তোরাঁ এবং বন্যপ্রাণীদের দেখার জন্য তৈরি হয়েছে ওয়াচটাওয়ারও। একই ভাবে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের মালবাজার ও চালসার মাঝে সাথকিয়া কেন্দ্রটি। পাশেই রয়েছে নেওড়া এবং সাথকিয়া নদী। মেটেলির ছোট ছোট পাহাড়। এখানে রেস্তোরাঁ, শৌচাগার, ফুডকোর্ট, শিশুদের জন্য পার্কও থাকছে। একই ব্যবস্থা করা হয়েছে নদী, চা বাগান ঘেরা ইনডং-এ। চালসা এবং মেটেলির মধ্যে কেন্দ্রটি তৈরি রয়েছে। এ ছাড়া চালসা লাগোয়া মঙ্গলবাড়িতে তৈরি হয়েছে ছ’টি দুই শয্যার কটেজ, একটি আট শয্যার ডরমেটরি। রেস্তোরাঁ ছাড়াও থাকছে নানান সুযোগ সুবিধা।

পযর্টন দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, প্রতিটি কেন্দ্রেই টেন্ডারের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রগুলি ওই সমস্ত সংস্থা চালালেও আদতে নজরদারি এবং দেখভালের দায়িত্বে থাকবে পযর্টন দফতর। পযর্টকদের ডুর্য়াসে থাকা বা সময় কাটানোর জায়গা বাড়াতেই এই ব্যবস্থা। উত্তরবঙ্গের পযর্টন ব্যবসায়ীরা অনেকেই জানিয়েছেন, ডুয়ার্সের পর্যটনের অনেকটাই লাটাগুড়ি বা জলদাপাড়া কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। সেখানেই মূলত থাকার বেশি সরকারি বা বেসরকারি স্তরে রিসর্ট বা লজ গড়ে উঠেছে। সেই জায়গায় ডুর্য়াসের আরও অনেক নতুন বা সুন্দর জায়গা রয়েছে তা সামনে আনার প্রযোজন ছিল। সরকারি উদ্যোগে সেই কাজ হলে আগামী দিনে বেসরকারি স্তরেও কাজ হবে। স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও হবে।

সরকারি সূত্রের খবর, গত দু’বছর আগে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক দেশজুড়ে মেগা ট্যুরিজম প্রকল্পের ঘোষণা করে। রাজ্যও বিভিন্ন এলাকাকে চিহ্নিত করে পাঠায়। উত্তরবঙ্গের এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘ডুয়ার্স কলিং’। এর মধ্যেই নতুন এই পাঁচ কেন্দ্র গড়া হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধা বাড়াতেই ওই প্রকল্পের সূচনা হয়। নতুন কেন্দ্রগুলি ছাড়া ডুয়ার্সের জয়ন্তী, চামুর্চি, সিকিয়াঝোড়া এবং গয়েরকাটায় এই রকম কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE