দু’জনেই বৃদ্ধ। একজন পঁচাত্তর, অন্য জন সত্তর। পুজো মরসুমের শেষ দিকে পাড়ি দিলাম উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল। বাঘ এক্সপ্রেসের সুনাম নেই জানতাম। তাই পানীয় জল, ফল, শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়েছিলাম। ট্রেনে দু’রাত কাটাতে তাই কোনও অসুবিধে হয়নি। তবে ট্রেনের সাফাইকর্মীদের তৎপরতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।
নির্ধারিত সময়ের আগেই কাঠগোদাম পৌঁছলাম। শেয়ার-গাড়িতে চেপে শহরের প্রাণকেন্দ্র নৈনি লেকের ধারে নৈনিতালে রেলের হলিডে হোমে উঠলাম।
গরম জলে স্নান সেরে পায়ে হেঁটে এখানকার বাঙালি হোটেল ‘মৌচাক’-এ গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম।
নৈনিতালকে ‘সিটি অব লেকস’ বলা হয়। লেকটি লম্বায় প্রায় এক কিলোমিটার। চওড়া তার অর্ধেক। শোনা যায়, ১৮৪১ সালে ইংরেজ ব্যবসায়ী পি. ব্যারন এই শহর পত্তন করেন।
লেকের বুকে রংবেরঙের বোট ও পর্যটকদের ছুড়ে দেওয়া খাবার খেতে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে মাছের দল দেখে খুব ভাল লাগল। পায়ে হেঁটেই দেখতে গেলাম নয়নাদেবীর মন্দির। নয়নাদেবীর মন্দির সংলগ্ন তিব্বতি বাজার থেকে কিনলাম কিছু রংবেরঙের মোমবাতি। এর পর গেলাম গোবিন্দবল্লভ পন্থ চিড়িয়াখানা দেখতে। কিন্তু চিড়িয়াখানা এত উঁচুতে যে দেখতে গিয়ে জিভ বেরিয়ে যায়।
তৃতীয় দিন ছোট একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে নৈনিতালের আশপাশের এলাকাগুলি ঘুরে দেখলাম। চতুর্থ দিন প্রথমে গেলাম আলমোড়া হয়ে কৌশানি। ঠিক হল পরের দিন সকালে কৌশানি থেকে রানিখেত হয়ে নৈনিতালে ফিরে আসব। নৈনিতাল থেকে আলমোড়া ৬৭ কিমি এবং কৌশানি ১১৭ কিমি। ঝটিকা সফরে বেরিয়েছি আমরা, পাহাড়ি পথ, সন্ধের আগেই কৌশানি পৌঁছতে হবে। তাই আলমোড়া ছুঁয়েই কৌশানি যেতে হল। আলমোড়ার বিখ্যাত জায়গাগুলো দেখাই হল না। তবে কৌশানির পথে নীলরঙা কোশীনদী সারাক্ষণই আমাদের সঙ্গ দিচ্ছিল। সন্ধের প্রাকমুহূর্তে কৌশানির ‘অনাসক্তি’ আশ্রমে পৌঁছলাম। ১৯২৯ সালে মহাত্মা গাঁধী এই আশ্রমে চোদ্দো দিন ছিলেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে কৌশানিকে ভারতের সুইৎজারল্যান্ড বলা হয়। অনাসক্তি আশ্রমের কর্মীদের আতিথেয়তা, আন্তরিকতা, সরলতা তুলনাহীন। কৌশানির সূর্যোদয় দেখে, প্রাতরাশ সেরে ফের ঝটিকা সফরে বেরিয়ে পড়লাম। রানিখেতের কুমায়ুন রেজিমেন্টের মিউজিয়াম দেখে, ঝুলাদেবীর মন্দির চত্বর ছুঁয়ে, পাহাড়ি রাস্তার নির্জনতা উপভোগ করতে করতে ফিরে এলাম নৈনিতাল। পরের দিন নয়নাদেবীর মন্দিরে পুজো দিয়ে রাতের বাঘ এক্সপ্রেসে উঠলাম। পরদিন সকালে লখনউ স্টেশনে নেমে বেরোলাম শহরটাকে দেখতে। আমরা ফিরব বিকেল সাড়ে পাঁচটার জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে। বড় ইমামবাড়া, ভুলভুলাইয়া দেখতেই সময় চলে গেল অনেক। তারপর দেখলাম ‘মার্টার মেমোরিয়াল’। এটি মূলত একটি স্মৃতিসৌধ। গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জম্মু-তাওয়াই লখনউতে এলো রাত দুটোয়। পরের দিন যখন কলকাতা স্টেশনে পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে মাঝ রাত পেরিয়েছে। প্রায় রাত দু’টো বেজে গিয়েছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy