Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লুটোর কাছেই যান, রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

আর মাত্র সাত দিন। সপ্তাহান্তে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র তৈরি নিউ হরাইজনস মহাকাশযান পৌঁছবে সৌর পরিবারে একদা শেষ গ্রহ প্লুটোর আকাশে। আজ আর পুরোপুরি গ্রহ নয় প্লুটো, তার পরিচয় এখন ‘বামন গ্রহ’। ২০০৬ সালে প্রাগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনে মর্যাদা খাটো হয়েছে তার, তবু জ্যোতির্বি়জ্ঞানীদের কাছে আকর্ষণ কমেনি সৌর পরিবারের ওই সদস্যের। আগামী ১৪ জুলাই ভারতীয় সময় সন্ধ্যায় ওই বামন গ্রহের ১৩,০০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছবে নিউ হরাইজনস।

পথিক গুহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ২০:৪৬
Share: Save:

আর মাত্র সাত দিন। সপ্তাহান্তে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র তৈরি নিউ হরাইজনস মহাকাশযান পৌঁছবে সৌর পরিবারে একদা শেষ গ্রহ প্লুটোর আকাশে। আজ আর পুরোপুরি গ্রহ নয় প্লুটো, তার পরিচয় এখন ‘বামন গ্রহ’। ২০০৬ সালে প্রাগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনে মর্যাদা খাটো হয়েছে তার, তবু জ্যোতির্বি়জ্ঞানীদের কাছে আকর্ষণ কমেনি সৌর পরিবারের ওই সদস্যের। আগামী ১৪ জুলাই ভারতীয় সময় সন্ধ্যায় ওই বামন গ্রহের ১৩,০০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছবে নিউ হরাইজনস। জ্যোতির্বি়জ্ঞানীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান। এর আগে আর কোনও মহাকাশযান প্লুটোর কাছে যায়নি যে।

পৃথিবী থেকে কত দূরে প্লুটো? একটা তুলনা টেনে ব্যাখ্যা করলে বোঝা যাবে। আলো দৌড়োয় সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার। ওই বেগে ছুটেও সূর্য থেকে পৃথিবীতে পৌঁছতে আলোর সময় লাগে আট মিনিটের কিছু বেশি কাল। আর আলোর বেগে দৌড়ে পৃথিবী থেকে প্লুটো পৌঁছতে সময় লাগবে সাড়ে চার ঘণ্টা। এত দূরের লক্ষ্যে পৌঁছতে নিউ হরাইজনস যাত্রা শুরু করেছিল সাড়ে নয় বছর আগে— ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে। প্লুটো তখনও বামন বনে যায়নি।

ঘণ্টায় প্রায় ৫২,০০০ কিলোমিটার বেগে ছুটছে নিউ হরাইজনস। ওই যান বয়ে নিয়ে গিয়েছে বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন। যেমন প্লুটোর আবিষ্কর্তা ক্লাইড টমবাও-এর চিতাভস্ম। ১৯৩০ সালে রাতের আকাশে প্লুটোর খোঁজ পেয়েছিলেন টমবাও। তিনি মারা গিয়েছেন ১৯৯৭ সালে। তাঁর চিতাভস্ম ছাড়াও নিউ হরাইজনস বয়ে নিয়ে গিয়েছে এক সিডি। যাতে রয়েছে ৪৩৪,০০০ জন আকাশপ্রেমীর নাম। ২০০১ সালে যখন প্লুটোর উদ্দেশে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়, তখন নাসা আমেরিকাবাসীর কাছে জানতে চেয়েছিল কে কে ওই গ্রহে নাম পাঠাতে চায়। ‘সেন্ড ইওর নেম টু প্লুটো’ আবেদনে তড়িঘড়ি সাড়া দিয়েছিলেন অত জন মানুষ।

বহু দূর থেকে এখনই প্লুটোর ছবি পাঠাচ্ছে নিউ হরাইজনস। তবে সে সব ছবি অস্পষ্ট। জ্যোতির্বি়জ্ঞানীরা প্রতীক্ষায়। আর সাত দিন পরে স্পষ্ট ছবি পাঠাবে সন্ধানী যান। ওই সব ছবি বিশ্লেষণ করে বিশেষ়জ্ঞরা সমাধান করবেন একাধিক রহস্যের। কী ভাবে তৈরি হয়েছে সৌর পরিবারের গ্রহগুলি? কী ভাবে বা তাদের একেকটি উপগ্রহ, পৃথিবীর বেলায় যেমন চাঁদ?

অত দূরে সন্ধানী যান পাঠানোর ঝক্কি কি কম? নিউ হরাইজনস কে পৃথিবী থেকে নির্দেশ বা কম্যান্ড সিগন্যাল (আসলে যা বেতার বা আলোর তরঙ্গ) পাঠাতে সময় লাগবে সাড়ে চার ঘণ্টা। ওই যান থেকে কোনও সঙ্কেত পৃথিবীতে পৌঁছতেও লাগবে সাড়ে চার ঘণ্টা। মোট নয় ঘণ্টার ব্যবধান। মানে, প্রশ্ন করা থেকে উত্তর পাওয়ার মাঝে ওই নয় ঘণ্টা শুধু মুখ বুজে বসে থাকা।

সমস্যা আরও। মহাশূন্যের যে অঞ্চলে প্লুটোর ঠিকানা, তাকে বলে ‘কুইপার বেল্ট’। জ্যোতির্বি়জ্ঞানী জেরার্ড কুইপার ওরকম একটা এলাকার কথা বলেছিলেন। কঠিন ত্বকের পৃথিবীর মতো গ্রহ এবং বৃহস্পতির মতো গ্যাস আস্তরণের পিণ্ড ছাড়িয়ে তৃতীয় অঞ্চল। যেখানে রয়েছে লক্ষ লক্ষ হিমশীতল পাথরের চাঁই। প্লুটোর নিজস্ব চাঁদ পাঁচটা। এ সবের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে অতি সন্তর্পণে ঘণ্টায় ৫২,০০০ কিলোমিটার বেগে ছুটছে নিউ হরাইজনস। হ্যাঁ, খুব সাবধানে, কারণ ওই বেগে ধাবমান যান যদি ধাক্কা খায় একটা ছোট পাথরের টুকরোর সঙ্গেও, তা হলে সংঘর্ষ হবে বিরাট মাপের। ভেঙে খান খান হবে যান।

সূর্য থেকে এত দূরে প্লুটো যে তার আকাশে উষ্ণতা মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের আলো ওখানে পৌঁছয় না বললেই চলে। তাই সোলার প্যানেলে সংগ‌ৃহীত এনার্জি খরচ করে কাজ করতে পারবে না নিউ হরাইজনস। তাকে শক্তি জোগাবে এক দলা প্লুটোনিয়াম থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয় রশ্মি। যা চালু রাখবে মাত্র ১২ ওয়াটের ট্রান্সমিটার। তা আবার ৫০০ কোটি কিলোমিটার দূরে পাঠাবে সেকেন্ডে মাত্র এক কিলোবিট তথ্য। মহাশূন্যের প্রবল ঠান্ডায় যাতে নিস্তেজ না হয়ে পড়ে ট্রান্সমিটার, সে জন্য তাকে মুড়ে রাখা হয়েছে একাধিক চাদরে।

নিউ হরাইজনস কেমন দেখবে প্লুটোকে? অভিযানের নেতা জ্যোতির্বি়জ্ঞানী অ্যালান স্টার্ন এ ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে ১৯৯৩ সালে বলেছিলেন, ‘‘সামথিং ওয়ান্ডারফুল।’’ সত্যিই হবে কি সেই অনুমান? স্টার্ন এখন বলছেন, ‘‘সে দিনের কথা পুরো মিলতে চলেছে।’’ স্টার্নের মতে, প্লুটো এ বার দেখাবে ‘‘কমপ্লিটলি অ্যামেজিং।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE