Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুপারমুনে ভূকম্প, সঙ্গী আকাশকুসুম

খ়ড়্গপুর আইআইটি-র ভূবিজ্ঞানী শঙ্করকুমার নাথ বলেন, ‘‘এ দিন ভূকম্প হয়েছে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত এলাকায়। সেখানে আরব, ইউরেশীয় এবং ভারতীয় পাতের সংযোগস্থল এবং একটি বড় ফল্ট বা চ্যুতি রয়েছে। চাঁদ ও সূর্যের টান কোনও ভাবেই পাতের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে না।’’

চন্দ্রগ্রহণ: বুধবার ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে। ছবি: রঞ্জিত বিশ্বাস

চন্দ্রগ্রহণ: বুধবার ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে। ছবি: রঞ্জিত বিশ্বাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

এমন ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না!

একই মাসে দু’টি পূর্ণিমা। দ্বিতীয় পূর্ণিমায় (ব্লু মুন) চাঁদ ও পৃথিবী সব থেকে কাছাকাছি (সুপারমুন) এবং সেই দিনেই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই ত্র্যহস্পর্শকে পশ্চিমী দুনিয়ায় বলে, ‘সুপার ব্লাড ব্লু মুন’। ১৯৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বরের পরে ভারত-সহ এশিয়া থেকে এই ঘটনা দেখা গেল এই প্রথম। এ দিনই আফগানিস্তানে ভূমিকম্পও হওয়ায় দুয়ের মধ্যে সম্ভাব্য যোগ নিয়ে নেট দুনিয়ায় আকাশকুসুম জল্পনা শুরু হয়ে যায়!

‘ব্লু মুন’ মানে কিন্তু নীলচে চাঁদ নয়, তবে পূর্ণগ্রাস গ্রহণে লাল রশ্মির প্রতিসরণে চাঁদকে লালচে দেখায় (ব্লাড মুন)। ‘সুপারমুন’ শব্দটিরও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। পৃথিবীকে পাক খেতে খেতে চাঁদ এক বার কাছে চলে আসে এবং এক বার দূরে চলে যায়। দূরত্বটা যখন সব থেকে কমে যায়, সেটাকে বলে ‘অনুভূ’ অবস্থান। এই সময়ে পূর্ণিমা হলে সেটাই ‘সুপারমুন’। এই শব্দের জনক পশ্চিমী জ্যোতিষী রিচার্ড নোল্লে।

এমন বিরল ঘটনার দিনেই আফগানিস্তানে ভূমিকম্প! ভারতীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক জানিয়েছে, ভূকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.২। তবে পাকিস্তানে এক কিশোরীর মৃত্যু ছাড়া ব়়ড় বিপর্যয়ের খবর নেই। কাশ্মীরে একটি নির্মীয়মাণ সেতুর গার্ডার ভেঙে পড়েছে। কম্পন অনুভূত হয়েছে দিল্লিতেও।

নেট দুনিয়ায় আলোচনা চলছিল, সুপারমুন, চন্দ্রগ্রহণের সঙ্গে ভূকম্পের সম্পর্ক আছে কি না। জাপানে দীর্ঘকাল ধরেই বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে চন্দ্রগ্রহণ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। যেহেতু জাপান ভূকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে পড়ে, তাই ভূকম্পের সঙ্গে সেটা আরও বেশি করে জড়িয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালে জাপানের সুনামির আট দিন পরেই ছিল ‘সুপারমুন’। ২০০১ সালে ভুজ ভূমিকম্পের মাসে চন্দ্রগ্রহণ ছিল।

বিজ্ঞান অবশ্য প্রত্যক্ষ যোগের কথা বলছে না। খ়ড়্গপুর আইআইটি-র ভূবিজ্ঞানী শঙ্করকুমার নাথ বলেন, ‘‘এ দিন ভূকম্প হয়েছে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত এলাকায়। সেখানে আরব, ইউরেশীয় এবং ভারতীয় পাতের সংযোগস্থল এবং একটি বড় ফল্ট বা চ্যুতি রয়েছে। চাঁদ ও সূর্যের টান কোনও ভাবেই পাতের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে না।’’ তবে এস এন বোস সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তীর মতে, চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ ও সূর্যের মাঝে থাকে পৃথিবী। দু’দিক থেকে অভিকর্ষ বল কাজ করায় ভূগর্ভে যে জায়গাগুলিতে শক্তি জমে আছে তা মুক্ত হয়ে প়ড়তে পারে। তখন ভূকম্প অনুভূত হতেও পারে।

মার্কিন ভূতত্ত্ব গবেষণা সংস্থার (ইউএসজিএস) এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চাঁদ ও সূর্যের অভিকর্ষ বলের প্রভাবে যেমন সাগরের জলে জোয়ার আসে, তেমনই ভূস্তরেও টান অনুভব হয়। সাগরের জলের উচ্চতা বদল হলে সমুদ্রগর্ভের ‘সাবডাকশন জোন’-এ চাপ বদল হতে পারে। এ সবের ফলে ভূকম্প
হতে পারে। কিন্তু পূর্ণিমা, অমাবস্যায় চাঁদ-সূর্যের টানের ফলেই ভূকম্প হয়েছে, এমন নির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood moon Moon Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE