এই সেই ভিন গ্রহ ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি’। যার থেকে দেখা যাচ্ছে তার ‘সূর্য’কে। ছবি-নাসার সৌজন্যে।
এ বার সুখবরটা এল একেবারে আমাদের ‘পাশের বাড়ির প্রতিবেশী’র কাছ থেকেই। খবর এল, আমাদের ‘প্রতিবেশী’র ‘ঘরে’ এমন কেউ রয়েছে, যাতে আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের মতোই ‘ঘর-সংসার’ থাকতে পারে! থাকতে পারে প্রাণ। হদিশ মিলল প্রায় পৃথিবীর মতোই একটি ভিন গ্রহের। যেন হাত বাড়ালেই বন্ধু!
আমাদের সৌরমণ্ডলের পাঁচিলটা (উরট ক্সাউড) পেরোলেই যে অন্য একটি সৌরমণ্ডলের ‘বাড়ির ত্রিসীমানা’ শুরু হয়ে যায়, তার নাম- ‘আলফা সেনটাওরি’। এই সৌরমণ্ডলের ‘বাড়ি’র আবার ‘কর্তা’ তিন জন। মানে, এই সৌরমণ্ডলে রয়েছে তিন-তিনটি তারা বা নক্ষত্র, আমাদের সূর্যের মতো। ‘আলফা সেনটাওরি-এ’, ‘আলফা সেনটাওরি-বি’ আর ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি’। এই প্রথম জানা গেল, সেই ‘বাড়ি’র এক ‘কর্তা’র এক ঘনিষ্ঠ ‘অনুচর’ও রয়েছে! সেই ‘অনুচর’টি তার একটি গ্রহ। যার নাম- ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি’। এই ভিনগ্রহটি অনেকটাই আমাদের বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবীর মতোই। আর সেই ভিনগ্রহটা রয়েছে ওই সৌরমণ্ডলের এমন একটা জায়গায়, যেখানে প্রাণ সৃষ্টির সহায়ক পরিবেশ না থাকলেই অবাক হতে হবে বেশি। সৌরমণ্ডলের এমন মুলুককে বলা হয়, ‘হ্যাবিটেব্ল জোন’ বা ‘গোল্ডিলক্স জোন’। সদ্য আবিষ্কৃত ভিনগ্রহটির সাকিন তার ‘সূর্য’ ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি’র সেই হ্যাবিটেব্ল জোনেই। প্রক্সিমা সেনটাওরি অবশ্য আগাপাশতলা আমাদের সূর্যের মতো নয়। জাতে তা লাল বামন নক্ষত্র বা, রেড ডোয়ার্ফ স্টার।
দক্ষিণ আমেরিকায় চিলির লা সিলায় ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরির সাড়ে তিন মিটার ব্যাসের টেলিস্কোপের নজরেই প্রথম ধরা পড়েছে আমাদের প্রতিবেশীর ঘরের অন্দরে লুকিয়ে থাকা এই ‘গুপ্তধনে’র। বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এর ২৫ অগস্ট সংখ্যায় ছাপা হয়েছে সেই আবিষ্কারের খবর। যা নিয়ে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্ব জুড়ে।
ভিন গ্রহের আবিষ্কার তো এর আগেও হয়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডের নানা মুলুকে। তা হলে সদ্য আবিষ্কৃত ভিন গ্রহ ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি’ নিয়ে কেন শুরু হয়ে গিয়েছে এত হইচই?
অনেকটা পৃথিবীর মতোই ভিন গ্রহ ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি’ (ডান দিকে)।
তার কারণ, এর আগে আমাদের এত কাছে আর কোনও ভিন গ্রহের হদিশ মেলেনি, যা হাবেভাবে অনেকটা পৃথিবীর মতোই। প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি গ্রহটি রয়েছে পৃথিবী থেকে ৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে। মানে, আমাদের একেবারে হাতের নাগালেই। এখন মহাকাশযানগুলির যা গতিবেগ, তাতে আজ যাত্রা শুরু করলে আমরা প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি গ্রহে পৌঁছব ৭০ হাজার বছর পরে। এই গ্রহটি তার ‘সূর্য’ প্রক্সিমা সেনটাওরি থেকে এমন একটা দূরত্বে রয়েছে, যাকে বলে হ্যাবিটেব্ল জোন। মানে, খুব একটা বেশি দূরত্বে নেই। যা থাকলে, তারার আলোর অভাবে, জল থাকলেও তা বরফ হয়ে যেতে পারে। আবার ওই ভিন গ্রহটি তার ‘সূর্যে’র ততটা কাছেও নেই, যাতে তার প্রচণ্ড তাপে সবটুকু জল বাষ্পীভূত হয়ে গিয়ে তাকে একেবারে রুখুসুখু, নিষ্প্রাণ করে দিতে পারে। পৃথিবীর মতোই এই ভিন গ্রহটি পাথুরে। আদ্যোপান্ত গ্যাসে ভরা গ্রহ নয় প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি। ভরের দিক দিয়ে অবশ্য তা একটু বেশি ভারী পৃথিবীর চেয়ে। কম করে ১.৩ গুণ। আর এই ভিন গ্রহটি তার ‘সূর্য’কে খুব কাছ থেকে পাক মারে বলে, তার ‘বছর’ ফুরিয়ে যায় মাত্র ১১.২ পার্থিব দিনে। তবে এই ভিন গ্রহের বায়ুমণ্ডল রয়েছে কি না, এখনও জানা যায়নি। জানা যায়নি, তার চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে কি না, বা তা থাকলে, তা কতটা শক্তিশালী।
কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ৩০০টি ভিন গ্রহ আবিষ্কার করেছে। তার মধ্যে প্রক্সিমা সেনটাওরি-বি ভিন গ্রহটিই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে। ২০১৩ সালে প্রথম কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের নজরে আসে এই ভিন গ্রহটি।
ছবি সৌজন্যে: নাসা।
আরও পড়ুন- মরা গাঙে বান ডাকালেন বাঙালি গবেষক, মঙ্গলে মিলল নদীর ফসিল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy