Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আইনস্টাইনের তরঙ্গ পথেই বিশ্ব-দরবারে পৌঁছবে ভারত

ভারতীয় গবেষকেরা বিশাল মাত্রার এক বিশ্ববিজ্ঞানে যোগ দিতে চলেছেন ২০২৪ সালে। আলবার্ট আইনস্টাইনের শতবর্ষ-প্রাচীন তত্ত্বের সূত্র ধরে ব্রহ্মাণ্ডের নিত্যনতুন ঘটনার অনুসন্ধানে যোগ দেবেন তাঁরা। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এমনটাই জানালেন ওয়াশিংটন প্রদেশের হ্যানফোর্ডে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজার্ভেটরির প্রধান ফ্রেডরিক জে র‌্যাব।

পথিক গুহ
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

ভারতীয় গবেষকেরা বিশাল মাত্রার এক বিশ্ববিজ্ঞানে যোগ দিতে চলেছেন ২০২৪ সালে। আলবার্ট আইনস্টাইনের শতবর্ষ-প্রাচীন তত্ত্বের সূত্র ধরে ব্রহ্মাণ্ডের নিত্যনতুন ঘটনার অনুসন্ধানে যোগ দেবেন তাঁরা। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এমনটাই জানালেন ওয়াশিংটন প্রদেশের হ্যানফোর্ডে গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজার্ভেটরির প্রধান ফ্রেডরিক জে র‌্যাব।

১৯১৫ সালে আইনস্টাইন শূন্যস্থানের তরঙ্গের আকারে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বাড়া-কমার কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ওই তরঙ্গ সন্ধান দিতে পারে ব্রহ্মাণ্ডের দূরদূরান্তে এমন সব ঘটনার, যার হদিস পায় না কোনও টেলিস্কোপও। তবে এমন তরঙ্গ যে বাস্তবে শনাক্ত করা সম্ভব, তা বিশ্বাস করেননি আইনস্টাইন নিজেও। প্রায় অর্ধশতক ধরে চেষ্টার পরে ২০১৫-র ২৪ ডিসেম্বর বাস্তবে শনাক্ত করা গিয়েছে সেই তরঙ্গকেই। তাতে ভূমিকা ছিল ভারতীয় বিজ্ঞানীদেরও। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মহাসমারোহে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় এক হাজার বিজ্ঞানী ঘোষণা করেছেন সেই সাফল্যের কথা।

র‌্যাব জানালেন, সেই সাফল্যের পরে ব্রহ্মাণ্ডের নানা প্রান্তে ব্ল্যাক হোল বা নিউটন নক্ষত্রের নানা ভেল্কির খবর মিলছে ওই তরঙ্গ মারফত। খুলে গিয়েছে ব্রহ্মাণ্ড চেনার এক নতুন জানলা। তরঙ্গ শনাক্তের জন্য আমেরিকায় হ্যানফোর্ড এবং লিভিংস্টোনে দুই অবজার্ভেটরি বা মানমন্দিরের সঙ্গে দু’মাস বাদে যোগ দিচ্ছে ইতালির ভার্গো প্রকল্প। অর্থাৎ এ বছরের মার্চ থেকে তরঙ্গ শনাক্ত করবে তিন মানমন্দির। ২০২৪ সালে তাতে যোগ দেবে ভারতে তৈরি ‘লাইগো ইন্ডিয়া’র চতুর্থ অবজার্ভেটরিও। ব্রহ্মাণ্ডের ঠিক কোথায় দু’টি ব্ল্যাক হোল কিংবা দু’টি নিউটন নক্ষত্র পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে মরণ আলিঙ্গনে, দু’টি মানমন্দিরের কাজকর্মের মাধ্যমে তা খুঁটিয়ে বোঝা যায় না। তৃতীয় বা চতুর্থ অবজার্ভেটরি থাকলে সে-সব জানা যাবে নিখুঁত ভাবে।

সম্ভবত মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলিতে তৈরি হবে ওই অবজার্ভেটরি। এই খাতে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা অনুদান দেবে কেন্দ্রীয় পরমাণু শক্তি মন্ত্রক। কলকাতায় আসার আগে কয়েক দিন ধরে ওই মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন র‌্যাব। কিন্তু এ দিন তিনি হিঙ্গোলির নাম করেননি। কারণ, মানমন্দিরের জায়গার নাম প্রকাশিত হয়ে গেলে পরিবেশবাদীদের আন্দোলনে বাতিল হয়ে যেতে পারে স্থান নির্বাচন। এলাকার চার পাশে জাঁকিয়ে বসতে পারে প্রোমোটাররাজ। সেই জন্যই সতর্কতা। তবে ‘লাইগো ইন্ডিয়া’ চালু হলে অনেক মেধাবী পদার্থবিদ, ইঞ্জিনিয়ার ও ভূতত্ত্ববিদের প্রয়োজন হবে বলে জানালেন র‌্যাব। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হলে কয়েকশো শিক্ষার্থীর উদ্দেশে র‌্যাব বললেন, ‘‘তোমরাই হবে প্রকল্পের কান্ডারি।’’

ওই সভায় প্রথম বক্তা ছিলেন মুম্বই-আইআইটিতে গণিতের অধ্যাপক এম এস রঘুনাথন, যাঁকে ‘ভারতীয় গণিতের মুখ’ বলে অভিহিত করলেন সভার পরিচালক এবং পুণেতে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আইউকা)-এর ডিরেক্টর সোমক রায়চৌধুরী। রঘুনাথন ব্যাখ্যা করলেন ভারতীয় গণিতের ‘মহান ঐতিহ্য’।

শুধু শূন্য (০) এবং ক্যালকুলাস আবিষ্কারই নয়, ভারত যে পিথাগোরাসের অনেক আগেই তাঁর নামাঙ্কিত জ্যামিতিক উপপাদ্যটি আবিষ্কার করেছিল, তা জানালেন তিনি। এই প্রসঙ্গে রঘুনাথন স্মরণ করলেন বাঙালি গণিতজ্ঞ শ্যামাদাস মুখোপাধ্যায়ের নামও। তিনি রামানুজমের অনেক আগেই পশ্চিমি বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছিলেন বলে জানান রঘুনাথন।

কিন্তু এখনকার গণিত গবেষণা নিয়ে হতাশ রঘুনাথন। আক্ষেপ করে বললেন, দু’-একটি কেন্দ্র বাদ দিলে ভারতীয় ছাত্রেরা এখন আর বিশ্ব-মানের গবেষণায় সামিল নন। এর কারণ হিসেবে তাঁর ব্যাখ্যা,

‘‘স্কুল থেকে শুরু করে সর্বস্তরে উচ্চ মানের গণিত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। কারণ মেধাবী ছাত্রেরা এখন আর শিক্ষকতায় আসছেন না, বেশি বেতনের টানে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। শুধু গণিত কেন, কোনও বিষয়ের শিক্ষককেই যোগ্য মর্যাদা দেয় না সমাজ।’’ সভার শেষে দুই বক্তৃতার নির্যাস পেশ করতে গিয়ে সোমকবাবু বললেন, ‘‘লাইগো ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে পররিবেশবাদী ও অন্য আন্দোলনকারীরা যে-ভাবে সরব হচ্ছেন, তা খুবই দুঃখের এবং চিন্তার বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Einstein Einstein Theory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE