Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেশরবাইয়ে মেতে মুসাফিরের মহাকাশ

কোনও হলিউডি ছবির চিত্রনাট্য নয়। ঘোর বাস্তব। ১৯৭৭ সালের ২০ অগস্ট মহাশূন্যে পাড়ি দিয়েছিল ‘ভয়েজার-২’। মহাকাশের শূন্যতা কাটাতে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল একটি গোল্ডেন রেকর্ড— ‘দ্য সাউন্ড অব দ্য আর্থ’। তাতে ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন দেশের গান। আর তারই মধ্যে একটি কেশরবাইয়ের কণ্ঠে ভারতীয় মার্গসঙ্গীত।

সোনালি-অতীত: ভয়েজারের সেই রেকর্ড। ডান দিকে, কেশরবাই।

সোনালি-অতীত: ভয়েজারের সেই রেকর্ড। ডান দিকে, কেশরবাই।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

কখনও বৃহস্পতি, তো কখনও শনির বলয়ের পাশ কাটিয়ে, ইউরেনাসের একেবারে গা ঘেঁষে ছুটে চলেছে সে। আর তার সঙ্গে মহাশূন্যে ভেসে চলেছে মিঠে একটা সুর, ‘জাতা কহাঁ হো...’।

কণ্ঠ ভারতীয় খেয়াল গায়িকা কেশরবাই কেরকরের।

কোনও হলিউডি ছবির চিত্রনাট্য নয়। ঘোর বাস্তব। ১৯৭৭ সালের ২০ অগস্ট মহাশূন্যে পাড়ি দিয়েছিল ‘ভয়েজার-২’। মহাকাশের শূন্যতা কাটাতে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল একটি গোল্ডেন রেকর্ড— ‘দ্য সাউন্ড অব দ্য আর্থ’। তাতে ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন দেশের গান। আর তারই মধ্যে একটি কেশরবাইয়ের কণ্ঠে ভারতীয় মার্গসঙ্গীত।

সঙ্গীত বাছাইয়ের গুরু দায়িত্ব ছিল নাসার তৈরি করা একটি বিশেষ কমিটির কাঁধে। তার চেয়ারম্যান ছিলেন কার্ল সাগান। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত ‘মারমারস অব আর্থ— দ্য ভয়েজার ইন্টারস্টেলার রেকর্ড’ নামে একটি বইয়ে সাগানের স্ত্রী অ্যান ড্রুয়্যান লিখেছিলেন, বার্কলের ‘সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড মিউজিক’-এর এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর রবার্ট ব্রাউন ভয়েজারের রেকর্ড ডিস্কের জন্য পছন্দের গানের একটা তালিকা বানিয়েছিলেন। ‘জাতা কহাঁ হো’ সেই তালিকায় ছিল সব চেয়ে উপরে। অনেক কষ্টে নিউ ইয়র্কের একটি দোকানে রেকর্ডটি খুঁজে পেয়েছিলেন ড্রুয়্যান। ব্রাউন পরে বলেছিলেন, ‘‘যদি সবটা আমার হাতে থাকত, তা হলে পালঘাট মণি আইয়ারের পাঁচ তালের একক মৃদঙ্গও ওই রেকর্ডে রাখতাম।’’

আরও পড়ুন:ওজন আধুলির মতো! পৃথিবীকে পাক মারছে ৬ মহাকাশযান

ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ডের প্রযোজক টিমোথি ফেরিসের কথায়, ‘‘রেকর্ডের ওই অংশটাই আমার সব চেয়ে প্রিয়, যখন চিনের কুয়ান পিং হুর ‘ফ্লোয়িং স্ট্রিম’ শেষ হয়ে হিমালয়ের ধার ঘেঁষে সুর এসে পৌঁছয় উত্তর ভারতের কোলে। বেজে ওঠে খেয়াল। কে বলবে গায়িকা ৭০ বছরের বৃদ্ধা!’’

তবে কেশরবাইয়ের খেয়াল ছাড়াও রেকর্ডে রয়েছে হিন্দি, বাংলা, গুজরাতি, কন্নড়, মরাঠি, ওডিয়া, তেলুগু ও উর্দু ভাষায় বিভিন্ন বার্তা। যেমন, হিন্দিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা পৃথিবীর অধিবাসী। মহাবিশ্বকে আমাদের সাদর অভ্যর্থনা।’’

এমনই সব সুর-গান-কথা ফেরি করে গত চার দশক ধরে ছুটে চলেছে মহাকাশের মুসাফির। এ মাসেই ৪০-এ পা দেবে সে। পৃথিবী থেকে ১১০০ কোটি মাইল দূরের পথেও তার ক্লান্তি নেই। ভেসে যাচ্ছে সুর— ‘জাতা কহাঁ হো...’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE