আকাশে গোল রামধনু। মোবাইল ক্যামেরায় চোখ ছবি শিকারিদের। শনিবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
বুথের সামনে লম্বা লাইন। ভিতরে ইভিএম যন্ত্রও ঠিক আছে। কিন্তু লাইন এগোচ্ছে গুটি গুটি।
তা হলে কি বুথ জ্যাম?
না, তা তো নয়! কী হল তা হলে?
দেখা গেল, লাইনে দাঁড়ানো অল্পবয়সীদের অনেকেই মোবাইল হাতে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে। হেলিকপ্টার কিংবা বিমান দেখার জন্য নয়, আকাশের গায়ে গোলাকার রামধনু দেখতে!
লাইন সামলানো পুলিশকর্মীরা তাড়া দিচ্ছেন, ‘‘আগে ভোটটা দিন। তার পরে ছবি তুলুন।’’ কিন্তু কে শোনে কার কথা? রামধনু যদি ততক্ষণে মিলিয়ে যায়! তাই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউই। ফেসবুক আর হোয়াট্সঅ্যাপে নিমেষে ভাইরাল হয়ে গেল ওই দৃশ্য।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানাচ্ছেন, এই প্রাকৃতিক অবস্থার নাম ‘সূর্য-বলয়’। বর্ষার ঠিক আগে বা পরে ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ-দশ কিলোমিটার উঁচুতে আকাশে যখন অলক মেঘ (পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, যা থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা) তৈরি হয়, তখনই এই ধরনের সূর্য-বলয় তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়— জানাচ্ছেন সঞ্জীববাবু।
কী ভাবে?
সঞ্জীববাবু জানান, উঁচুতে তৈরি হওয়া অলক মেঘের কেন্দ্রে তাপমাত্রা শূন্যের তিন-চার ডিগ্রির নীচে নেমে যায়। জলীয় বাষ্প বরফকণায় পরিণত হয়। কোনও ভাবে ওই অলক মেঘ সরে গেলে ষড়ভুজাকৃতি বরফকণাগুলি আকাশে ভেসে বেড়ায় এবং সূর্যের চারপাশে চলে আসে। সেই বরফকণাগুলির মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো যখন বিচ্ছুরিত হয়, তখন তা সাতটি রঙে ভেঙে যায়। আর সূর্যকে ঘিরে তৈরি হয় সাত রঙের বলয়।
পদার্থবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি ষড়ভুজাকৃতি বরফকণা এক একটি প্রিজমের কাজ করে। প্রিজমের ভিতরে ঢোকার সময়ে প্রথম বার সূর্যের আলোর প্রতিসরণ হয়। বরফের প্রিজম থেকে আলো বেরোনোর সময়ে দ্বিতীয় প্রতিসরণ হয় আলোর। আর, এই প্রক্রিয়ায় সূর্যের আলো ভেঙে যায় সাতটি রঙে। সূর্যকে ঘিরে তৈরি হয় গোলাকার রামধনু। বাইরের দিকে থাকে বেগুনি রং। ভিতরটা লাল।
অন্য রংগুলি অবশ্য খালি চোখে ধরা পড়ে না
এই ধরনের সূর্য-বলয় তৈরি হওয়ার অবশ্য দু’টি শর্ত রয়েছে। প্রথমটি হল, বায়ুপ্রবাহ কম থাকতে হবে। বায়ুর গতিবেগ বেশি থাকলে বরফের টুকরোগুলি ছন্নছাড়া হয়ে যায়। ফলে তারা সূর্যকে ঘিরে মালা তৈরি করতে পারবে না। দ্বিতীয় শর্ত হল, বরফের প্রিজমের ভিতরে সূর্যের আলো ঢোকার সময়ে প্রতিসরণের যে কোণটি তৈরি হবে, তা হবে ২২ ডিগ্রি। প্রতিসরণ কোণ ২২ ডিগ্রির কম বা বেশি হলে সূর্য-বলয় তৈরি হবে না।
সঞ্জীববাবু বলছেন, ‘‘এ দিন সব শর্তই এমন ভাবে মিলে গিয়েছিল যে, সূর্য-বলয়ের ব্যাস ছিল অনেক বেশি। তাই আকাশের অনেকটা জুড়ে তা দেখা গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy