সৌর ফুলকি। ছবি নাসার সৌজন্যে।
পরপর ভয়ঙ্কর দু’টো বিস্ফোরণ হয়েছে সূর্যে। গত ৬ সেপ্টেম্বর। ভারতীয় সময় বিকেল তিনটে নাগাদ।
সেই প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পর সূর্য থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে আগুনের গোলা।
বৃহস্পতিবার আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ওশ্নিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর (এনওএএ) স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশান সেন্টারের তরফে জানানো হয়েছে, ওই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পর সূর্যের শরীর থেকে বেরিয়ে এসেছে দু’-দু’টো সোলার ফ্লেয়ার বা সৌর ফুলকি। দ্বিতীয় সৌর ফুলকিটি অসম্ভব শক্তিশালী। গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে অতটা শক্তিশালী ফুলকি বেরিয়ে আসেনি সূর্যের শরীর থেকে। জোর খুব একটা কম ছিল না প্রথম সৌর ফুলকিটিরও।
কেন জন্ম হয়, কী ভাবে বেরিয়ে আসে সৌর ফুলকি? দেখুন ভিডিও। সৌজন্যে: স্পেস ডট কম
এরা এতটাই শক্তিশালী যে সৌরবিজ্ঞানের পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘এক্স’ পর্যায়ের সৌর ফুলকি। সূর্যের পিঠে যে বহু সৌর কলঙ্ক বা সান স্পট রয়েছে, তারই কোনও একটি বা দু’টিতে ঘটেছে ওই ভয়ঙ্কর শক্তিশালী বিস্ফোরণ। একটি ফুলকির নাম ‘এক্স-২.২’। অন্যটি ‘এক্স-৯.৩’। সান স্পটের বিস্ফোরণে ‘এক্স-৯’ পর্যায়ের এতটা শক্তিশালী আগুনের গোলা বা ফুলকি সূর্যকে শেষ উগরোতে দেখা গিয়েছিল আজ থেকে ঠিক ১১ বছর আগে। ২০০৬-য়।
আরও পড়ুন- ব্রহ্মাণ্ডের জন্মবৃত্তান্ত খুঁজতে বাঙালি বিজ্ঞানীরা খনিতে
আরও পড়ুন- ২০ বছরে টানা সাফল্যের পর কেন ‘ফেল’ করল ইসরো?
নাসা সূত্রের খবর, সূর্যে পরপর ওই দু’টি প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পর যে বিশাল বিশাল গোলা বা ফুলকিগুলি বেরিয়ে এসেছে, তা ইতিমধ্যেই থরথর করে কাঁপিয়ে দিয়েছে মহাকাশের রেডিও তরঙ্গকে। শুধু কাঁপিয়ে দেওয়াই নয়, এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেই সৌর ফুলকি, পৃথিবীর যে পিঠে তখন সূর্যের আলো পড়ছিল, সেই দিকের যাবতীয় রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্তও করে দিয়েছিল। নেভিগেশনের জন্য যে অত্যন্ত কম কম্পাঙ্কের আলো লাগে, তাকেও ঘণ্টাখানেকের জন্য অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিল সেই সৌর ফুলকি।
গতকাল সূর্যের পিঠে ঠিক কোথায় ঘটেছে সেই প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণ?
নাসার তরফে সৌরপদার্থবিজ্ঞানী রব স্টিনবার্গ বলেছেন, ‘‘সূর্যের পিঠে সবচেয়ে ভারী (ম্যাসিভ) যে দু’টি সান স্পট রয়েছে, তার মধ্যে যেটা তুলনায় ছোট, সেই সান স্পটেই ঘটেছে ওই প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। সূর্যের সেই দু’টো এলাকার নাম- ‘অ্যাক্টিভ রিজিওন (এআর)-২৬৭৩’। এবং ‘অ্যাক্টিভ রিজিওন (এআর)-২৬৭৪’। যেগুলি লম্বা আর চওড়ায় কতটা জানেন? সাতটা পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে তা যতটা জায়গা জুড়ে থাকে, ততটা জায়গা জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে সূর্যের এই দু’টি ‘অ্যাক্টিভ রিজিওন’। আর ন’টা পৃথিবীকে পরপর পিঠে চাপালে তা যতটা উঁচু হয়, সূর্যের যে এলাকাটায় ঘটেছে সেই প্রলয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, তার উচ্চতাও ততটাই।’’
বিশিষ্ট সৌরপদার্থবিজ্ঞানী কার্ল ব্যাটামসের টুইট। এঁকে জানিয়ে দিয়েছেন সূর্যের কোন দুই এলাকায় ঘটেছে সেই বিস্ফোরণ
তার ঠিক আগের দিন ৫ সেপ্টেম্বরও সূর্যের ওই এলাকায় ঘটেছিল আর একটি বিস্ফোরণ। আর তা থেকে যে সৌর ফুলকি বেরিয়ে এসেছিল, তার শক্তি ছিল ‘এম’ পর্যায়ের। যার অর্থ, গতকালের দু’-দু’টি সৌর ফুলকির চেহারার (‘এক্স’ পর্যায়) ১০ ভাগের ১ ভাগ। নাসার তরফে জানানো হয়েছে, সবক’টি সৌর ফুলকি থেকে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়া আগুনের গোলাগুলি ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। তা ওহায়ো, ইন্ডিয়ানার দক্ষিণ প্রান্তে, উত্তর মেরুতে আরও বেশি করে তৈরি করবে অরোরা বা মেরুজ্যোতি।
কী কী ঘটাতে পারে সেই সৌর ফুলকিরা? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
সৌরপদার্থবিজ্ঞানীরা বলছেন, গতকালের দু’-দু’টি অসম্ভব শক্তিশালী সৌর ফুলকি তাদের বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের পিঠ বা সারফেস থেকে তার কিছুটা ‘মাংস’ও যেন কেউ খুবলে বের করে নিয়ে আসে। এটাকেই বলে ‘করোনাল মাস এজেকশান (সিএমই)’। এটা আর ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে পৃথিবীর কাছাকাছি এলে উত্তর মেরুতে থাকা শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তাকে ঝেঁটিয়ে দূরে হঠিয়ে দেবে। আর তখনই চৌম্বক ক্ষেত্রের কণাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ফলে উত্তর মেরুতে আরও শক্তিশালী, আরও উজ্জ্বল অরোরা বা মেরুজ্যোতি তৈরি হতে পারে। এমনকী তা রেডিও বা টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেকটা ক্ষতিও করতে পারে।
ছবি সৌজন্যে: নাসা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy