Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Science News

নীল রংয়ের এলইডি আলো ঘুম কমিয়ে দিচ্ছে, বলছে গবেষণা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলোয় ভরিয়ে আমরা রাতকে দিন করে ফেলছি বটে, কিন্তু তার ফলটা একেবারেই ভাল হচ্ছে না। রাতে এলইডি আলোর যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের ঘুম কমিয়ে দিচ্ছে।

আলোয় ভরা পৃথিবীর রাত। মহাকাশে উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি।

আলোয় ভরা পৃথিবীর রাত। মহাকাশে উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি।

সংবাদ সংস্থা
কোলন শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ১৮:৩৪
Share: Save:

রাতের কৃত্রিম আলোই কি অন্ধকার নিয়ে আসছে আমাদের জীবনে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলোয় ভরিয়ে আমরা রাতকে দিন করে ফেলছি বটে, কিন্তু তার ফলটা একেবারেই ভাল হচ্ছে না। রাতে এলইডি আলোর যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের ঘুম কমিয়ে দিচ্ছে। নানা রকমের শারীরিক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। ক্ষতি করছে আমাদের চার পাশে থাকা অণুজীবদেরও। তারাও ওই কৃত্রিম আলোর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না। ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে নীল রংয়ের এলইডি আলোয়।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ বুধবার প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৬, এই ৫ বছরে কৃত্রিম আলো বিশ্বের দিন-রাতের ভেদ-রেখা মুছে দিয়েছে। ওই সময়ে ভূপৃষ্ঠের কৃত্রিম ভাবে আলোকিত এলাকা ফি বছরে বেড়েছে ২.২ শতাংশ হারে। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের সংখ্যা পৃথিবীতে যথেষ্টই কমে গিয়েছে।

আরও দেখুন- ১০০ বছরে তলিয়ে যাবে এই শহরগুলি! বলছে নাসা

আরও পড়ুন- ডাইনো যুগের রাক্ষুসে হাঙরের হদিশ পর্তুগালের সৈকতে​

মহাকাশে থাকা বিভিন্ন উপগ্রহ থেকে সর্বাধুনিক ক্যামেরায় তোলা ছবি বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা। জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার কাইবা বলেছেন, ‘‘পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার রাতগুলি আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি আলোকিত হয়ে গিয়েছে। অনেক বেশি ঝকঝকে হয়ে পড়েছে। আলো ঝলমলে রাতের সংখ্যা বেশি বেড়েছে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে। দাবানলের কারণে তা অবশ্য কিছুটা কমেছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়।’’

তবে গবেষণাপত্রে যে ছবিটা বেরিয়ে এসেছে, আদতে পরিস্থিতি তার চেয়েও বেশি খারাপ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, যার থেকে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি, সেই এলইডি থেকে যে নীল আলো বেরয়, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য মহাকাশে থাকা উপগ্রহগুলি থেকে মাপা সম্ভব হয়নি। উপগ্রহগুলিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্র ছিল না বলে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি এলইডির নীল আলোও মাপা যেত, তা হলে দেখা যেত রাতগুলি আরও বেশি আলোকিত হয়ে গিয়েছে।

যত দিন যাচ্ছে, ততই ঘরের ভিতরে ও বাইরে এলইডি আলোর ব্যবহার বাড়ছে। টিউবলাইট বা অন্যান্য লাইট থেকে যতটা আলোকশক্তি বেরিয়ে আসে, ততটাই আলো বেরিয়ে আসে অনেক কম ক্ষমতা বা ওয়াটের এলইডি আলো থেকে। দেখা গিয়েছে, ১০০ ওয়াটের টিউবলাইট যতটা আলো দেয়, মাত্র ২০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব আলো দেয় ততটাই। ফলে বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার কমছে ৮০ শতাংশ। এলইডি আলোগুলি টেঁকেও অনেক দিন। বিদ্যুতের খরচ কমাতে তাই মানুষ কম ওয়াটের এলইডি আলো বেশি কিনছেন, ব্যবহার করছেন। বিদ্যুৎ খরচের ভয়ে আগে যাঁরা রাতে বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানোর আগে দু’বার ভাবতেন, সস্তায় হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁরাও এখন যত্রতত্র এলইডি আলো ব্যবহার করছেন। ফলে, অনেক বেশি পরিমাণে এলইডি আলোয় ভরে উঠছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত উত্তরোত্তর। আর তার ফলে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। আমাদের নানা রকমের শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। নীল রংয়ের এলইডি আলো মানুষের বেশি পছন্দের হলেও তা ঘুম কমিয়ে দিচ্ছে আরও বেশি। এ ব্যাপারে গত বছর মার্কিন মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একটি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। নীল রংয়ের এলইডি আলোর ব্যবহার কমাতে বলা হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, এর ফলে এমন এক দিন আসবে, যখন ধনী দেশগুলির মানুষ রাতের আকাশকে আরও বেসি অন্ধকার দেখতে চাইবেন। ঘরেও রাখতে চাইবেন জমাট অন্ধকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE