যুগলবন্দি: শনিবার ভারতকে লড়াইয়ে রাখলেন পূজারা ও ভুবনেশ্বর। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ও দেশকল্যাণ চৌধুরী।
ইডেন টেস্ট ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে বলে যাঁরা পূর্বাভাস করছেন, আমি তাঁদের মধ্যে নেই। বরং আমি মনে করি, রবি এবং সোমবার— খুব আকর্ষণীয় শেষ দু’দিনের খেলা দেখতেই পারি এবং ভারত টেস্ট জিততেই পারে।
কেন বলছি এমন কথা?
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কা ৭ রানে পিছিয়ে। উইকেট গিয়েছে চারটি। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা প্রাথমিক ব্যর্থতা কাটিয়ে দ্রুত উইকেট তুলে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে দলকে। ইডেনে শনিবার শেষ সেশনটায় কোহালি এবং ওর দলকে ভীষণই আগ্রাসী দেখিয়েছে। দুপুরের দিকে যখন তিরিমানে এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ লম্বা পার্টনারশিপ করে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছিল, সেই সময় গোটা ভারতীয় দলের শরীরী ভাষা খুব ন্যাতানো লাগছিল।
ওই সময় মহম্মদ শামিরও চোট লেগে গেল। বৃষ্টি থামলেও আর্দ্রতার পরিমাণ এ দিন বেশি ছিল। সেই কারণে শরীরে জলের অভাব ঘটে থাকতে পারে। শেষের দিকে কিন্তু ভারতীয় পেসাররা অনেক বেশি আগুন ঝরানো বোলিং করেছে। ইডেনের এই ঘাসের, প্রাণবন্ত উইকেটে ঠিক এই বোলিংটাই দরকার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার দুই সফল এবং সেট ব্যাটসম্যান তিরিমানে এবং ম্যাথিউজকে তুলে নেওয়া গিয়েছে। ক্রিজে রয়েছে চণ্ডীমল এবং নিরোশান ডিকওয়েলা। দু’জনকেই নতুন করে থিতু হতে হবে রবিবার সকালে এসে। আর ইডেনের উইকেট কিন্তু সবচেয়ে প্রাণবন্ত থাকবে সকালেই। ওই সময়টায় ভুববেনশ্বর কুমার, উমেশ যাদব-দের বল কিন্তু অনেক বেশি নড়াচড়া করবে। যেটা এ দিন দুপুরে রোদের মধ্যে বল করার সময় ততটা হয়নি। শামিকে কিন্তু সকালের আবহাওয়ায় দরকার হবে। আশা করব, ও যেন শুরু থেকেই মাঠে নামতে পারে। তবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, রবিবার সকালেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়টার সেরা বাজি হতে যাচ্ছে ভুবনেশ্বর কুমার-ই। এ দিন শ্রীলঙ্কার চার উইকেটের মধ্যে ভুবি আর উমেশই দু’টি করে উইকেট তুলল।
যে পিচে থরহরিকম্প বাঁধিয়ে ভারত শেষ হয়ে হয়ে গেল ১৭২ রানে, সেখানে অনেক আশ্বস্ত দেখাল শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংকে। দিনের শেষে ওদের স্কোর অনেক ভদ্রস্থ, ১৬৫-৪। কোথায় তফাত হল? আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় তফাত হয়েছে পরিবেশ আর প্রয়োগ ক্ষমতায়। কোহালি টস হারায় মেঘলা, প্রায় অন্ধকার পরিবেশে ফ্লাডলাইটে ভারতকে প্রথম ইনিংসের বেশির ভাগ সময়টা খেলতে হয়েছে। সেটা শ্রীলঙ্কাকে করতে হয়নি। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রয়োগ ক্ষমতারও অভাব ছিল। শিখর ধবন, অজিঙ্ক রাহানে এবং আর. অশ্বিন— তিন জনই খারাপ স্ট্রোকে আউট হয়েছে।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সবুজ পিচ দেখে একটু বেশিই রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিল যেন। শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানেরা কিন্তু অনেক বেশি ইতিবাচক ছিল। সেটা স্কোর দেখলেই বোঝা যাবে। ওদের এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরার ম্যাথিউজ। ওকে চার নম্বরে নামানোর সিদ্ধান্ত সফল। ৯৪ বল খেলে ৫২ করে গেল ও। তিরিমানে ৯৪ বলে করল ৫১। দু’জনেরই স্ট্রাইক রেট ৫০-এর উপরে। যেটা এরকম কঠিন পিচে বেশ ভাল। শ্রীলঙ্কাও রান তুলেছে বেশ ভাল গতিতে। তাতে ভারতীয় বোলারদের উপরেও পাল্টা চাপ তৈরি হয়েছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পাল্টা আক্রমণের রণনীতি দেখা গেল একজন বোলারের ব্যাটে। মহম্মদ শামি। শেষের দিকে ব্যাট চালিয়ে ২২ বলে ২৪ করে গেল শামি।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ‘লিড’ নেওয়া নিশ্চিত। মাত্র ৭ রানে ওরা পিছিয়ে রয়েছে। ভারতীয় পেসাররা যদি সকালের স্পেলটা ভাল করতে পারে, তাহলে দু’শো রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে আটকে ফেলা যাবে। সেটা পারলে কিন্তু কোহালিদের এই টেস্ট জেতার ভাল মতো সম্ভাবনাই থেকে যাবে।
তবে কোহালিদের সকলকেই কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল ব্যাট করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এ রকমই পিচ অপেক্ষা করবে ওদের জন্য। টেস্টের এখনও দু’দিন বাকি। অনেক মোচড়ই দেখা যেতে পারে। তবে সবার আগে দরকার হবে চণ্ডীমলকে সরানো। ও কিন্তু আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। দু’বছর আগে শ্রীলঙ্কায় গলে যে টেস্ট কোহালিরা হেরেছিল, সেটাতে কাউন্টার অ্যাটাক করে চণ্ডীমলই কিন্তু টেস্টের ভাগ্য
গড়ে দিয়েছিল।
কোহালিরা নিশ্চয়ই চাইবে না গলের দুঃস্বপ্ন ইডেনে ফিরুক!
স্কোরকার্ড
ভারত ১৭২
শ্রীলঙ্কা ১৬৫-৪
ভারত (প্রথম ইনিংস)
রাহুল ক ডিকওয়েলা বো লাকমল ০
শিখর ধবন বো লাকমল ৮
চেতেশ্বর পূজারা বো গামাগে ৫২
বিরাট কোহালি এলবিডব্লিউ বো লাকমল ০
রাহানে ক ডিকওয়েলা বো শনকা ৪
অশ্বিন ক করণারত্নে বো শনকা ৪
ঋদ্ধিমান ক ম্যাথিউজ বো পেরেরা ২৯
জাডেজা বো পেরেরা ২২
ভুবনেশ্বর ক ডিকওয়েলা বো লাকমল ১৩
শামি ক শনকা বো গামাগে ২৪
যাদব ন.আ. ৬
অতিরিক্ত ১০
মোট ১৭২
পতন: ০-১ (কেএল রাহুল, ০.১), ১৩-২ (শিখর ধবন, ৬.২), ১৭-৩ (বিরাট কোহালি, ১০.১), ৩০-৪ (রাহানে ১৭.২), ৫০-৫ (অশ্বিন, ২৫.৬), ৭৯-৬ (পূজারা, ৩৭.২), ১২৭-৭ (জাডেজা, ৫১.২)। ১২৮-৮ (ঋদ্ধিমান, ৫১.৫), ১৪৬-৯ (ভুবনেশ্বর, ৫৬.২), ১৭২-১০ (শামি, ৫৯.৩)।
বোলিং: সুরঙ্গা লাকমল ১৯-১২-২৬-৪, লাহিড়ু গামাগে ১৭.৩-৫-৫৯-২, দাসুন শনকা ১২-৪-৩৬-২, করুণারত্নে ২-০-১৭-০, হেরথ ২-০-৫-০, পেরেরা ৭-১-১৯-২।
শ্রীলঙ্কা (প্রথম ইনিংস)
সমরাবিক্রমা ক সাহা বো কুমার ২৩
করুণারত্নে এলবিডব্লিউ বো কুমার ৮
থিরিমানে ক কোহালি বো যাদব ৫১
ম্যাথিউজ ক রাহুল বো যাদব ৫২
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৬৫-৪
পতন: ২৯-১ (করুণারত্নে, ৪.৫), ৩৪-২ (সমরাবিক্রমা, ৬.৪), ১৩৩-৩ (থিরিমানে, ৩৬.২), ১৩৮-৪ (ম্যাথিউজ, ৩৮.৫)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ১৪.৪-২-৪৯-২, মহম্মদ শামি ১৩.৫-৫-৫৩-০, উমেশ যাদব ১৩-১-৫০-২, আর অশ্বিন ৪-০-৯-০, বিরাট কোহালি ০.১-০-০-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy