Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
তাক লাগানো শরীরে বিরাটই তুলনা ব্রিউস্টারের

সতেরোতেই পাল্লা দিচ্ছে বড়দের সঙ্গে

ইংল্যান্ডের রিয়ান ব্রিউস্টারকে দেখে আমি বিস্মিত। সতেরো হওয়ার আগেই এমন শারীরিক গঠন যে, শক্তি আর গতিতে আমাদের দেশের শক্তিশালী ক্রিকেটারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও যেন হারিয়ে দিতে পারে।

তুলনা: সতেরো বছরেই রীতিমতো বড়দের মতো শারীরিক গঠন। শুক্রবার যুবভারতীতে অনুশীলনে ইংল্যান্ডের রিয়ান ব্রিউস্টার। যার সঙ্গে তুলনা হতে পারে কোহালির ফিটনেসের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, ফাইল চিত্র

তুলনা: সতেরো বছরেই রীতিমতো বড়দের মতো শারীরিক গঠন। শুক্রবার যুবভারতীতে অনুশীলনে ইংল্যান্ডের রিয়ান ব্রিউস্টার। যার সঙ্গে তুলনা হতে পারে কোহালির ফিটনেসের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, ফাইল চিত্র

চিন্ময় রায়
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৫:৫৫
Share: Save:

যুবভারতীতে ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচটা দেখতে গিয়ে মাঝেমধ্যে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলা ছেলেদের কী দুর্ধর্ষ শারীরিক গঠন! আমাদের দেশের ফুটবলাররা কেউ ধারেকাছে তো আসবেই না, ক্রিকেটারদের মধ্যে বিরাট কোহালি বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে একমাত্র তুলনা হলেও হতে পারে। তাতেও আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারছি না, কে এগিয়ে।

ইংল্যান্ডের রিয়ান ব্রিউস্টারকে দেখে আমি বিস্মিত। সতেরো হওয়ার আগেই এমন শারীরিক গঠন যে, শক্তি আর গতিতে আমাদের দেশের শক্তিশালী ক্রিকেটারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েও যেন হারিয়ে দিতে পারে। ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি অনেক দিন। সৌরভ, দ্রাবিড়দের যুগের ট্রেনিং দেখেছি। সচিন তেন্ডুলকরকে দেখেছি। ওঁরা সকলে দারুণ সফল ক্রিকেটার। কিন্তু বিদেশি কায়দায় ট্রেনিংয়ের ব্যাপারটা ভারতীয় ক্রিকেটে এনেছে কোহালি।

আইপিএল আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রমরমার যুগে বিরাটই প্রথম ধরতে পারে যে, ওয়েট ট্রেনিং না করলে আধুনিক যুগের ক্রিকেটের নিংড়ে নেওয়া, নির্মম সূচির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। সেই উপলব্ধি থেকেই জিমে নিয়মিত ভাবে সময় দেওয়া শুরু করেছিল বিরাট। আজ সেই ওয়েট ট্রেনিংয়ের ফল পাচ্ছে ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক। কিন্তু তার পরেও বলছি, কোহালির পাশে দাঁড় করালেও ব্রিউস্টার-কে অনেক বড়সড় দেখাবে। ডানদিকের ছবিটা সব চেয়ে ভাল করে বুঝিয়ে দিচ্ছে, কতটা শক্তিশালী ব্রিউস্টার। ওর শরীরের নীচের অংশটা ভাল করে দেখুন। এখনই এত শক্তপোক্ত পা! আমাদের দেশের কোনও সতেরো বছরের ছেলেরই হওয়া সম্ভব নয়।

ব্রিউস্টার-রা জন্মগত ভাবেই অনেক বেশি শক্তিশালী। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, বাইরের দেশে খেলোয়াড়দের শরীরের দিকে নজর দেওয়াটা শুরু হয় অনেক কম বয়স থেকে। ভারতে খেলোয়াড়রা জিমে যেতে শুরু করে ১৮-১৯ বছর বয়সে। ব্রিউস্টারদের জিম বা পাওয়ার ট্রেনিং চালু হয়ে যায় ১৩ বছর বয়স থেকে। প্রত্যেকটি ছেলে কোনও না কোনও ফুটবল ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়ে ফেলে ওই বয়সের মধ্যে। তখন থেকেই ওদের পরিকল্পনামাফিক ট্রেনিং শুরু হয়ে যায়।

সেখানে আমাদের দেশের ফুটবলারদের জন্য তো কোনও পরিকাঠামো নেই-ই, ক্রিকেটারদের মধ্যে ট্রেনিংয়ের চল শুরু হয়েছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগেই। ভারতের কোনও বড় ফুটবল ক্লাবেই উন্নত জিম নেই। কলকাতায় বড় ক্লাবের ফুটবলাররাও অন্যত্র গিয়ে জিম করেন। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে যে কলম্বিয়া বা ঘানার সামনে আমাদের ফুটবলারদের লিলিপুটের মতো লাগছিল, সেটার কারণও আছে। আর কারণটা এটাই যে, আমাদের ফুটবলারদের কিশোর বয়স থেকে আধুনিক ট্রেনিংটাই চালু হল না। এমনকী, বড়দের ফুটবলেও সেভাবে শক্তিশালী হওয়ার ট্রেনিংটা চালু হয়নি আমাদের দেশের ফুটবলে।

ক্রিকেট তুলনায় অনেক সংগঠিত খেলা এ দেশে। সেই কারণে অনেক পেশাদারিত্ব দেখা যায়। কোহালি বিশ্ব মানের অ্যাথলিটদের কারও কারও সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে ছোট দূরত্বের দৌড়ে বা ক্ষিপ্রতায়। হাতের গঠন এবং কোমর পর্যন্ত শারীরিক শক্তিতে বিরাট বা ধোনি বিদেশি ফুটবলারদের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। কিন্তু নীচের অংশে বা পায়ের শক্তিতে এমনকী, অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলাররাও অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে পারে। তার কারণ ফুটবল অনেক বেশি করে শারীরিক শক্তির খেলা। সেটা মাথায় রেখে তৈরি হতে হয় ব্রিউস্টারদের।

যুবভারতীতে বসে দেখছিলাম, কী অবলীলাক্রমে লম্বা স্প্রিন্ট টেনে দিচ্ছে ব্রিউস্টার বা ফিল ফডেনের মতো ফুটবলাররা। এক-এক সময় মনে হচ্ছে, শক্তি আর গতিতে এতটাই এগিয়ে ইংল্যান্ড যে, স্পেনের পক্ষেও না ধরাটা কঠিন হয়ে যায়। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, কার্ডিও ভাস্কুলার এনডিওরেন্স। যেটা আসলে দম আর এনার্জি তৈরি করে। ব্রিউস্টারদের সেই দিকটাও দারুণ।

এখন ক্রিকেটে খুব বিখ্যাত হয়েছে ইও ইও টেস্ট। কোহালিরা এই পরীক্ষায় ১৯-এর উপরে করে দেবে। আর ব্রিউস্টার-দের দেখে মনে হচ্ছে, এখনই করে দিতে পারবে ২২ পর্যায় পর্যন্ত। এতটাই এগিয়ে বাইরের দেশের যুব ফুটবলের সিস্টেম। প্রোটিনযুক্ত খাদ্য খাওয়াটাও বিরাট পার্থক্য গড়ে দেয়। আমাদের দেশে কোহালি বা ধোনি আদর্শ। ফিটনেসের দিক থেকে এক নম্বরে কোহালি। নতুনদের মধ্যে দারুণ হার্দিক পাণ্ড্য। আবার ধোনির শরীরে আছে অমানুষিক শক্তি। তবু বলছি, ব্রিউস্টারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হলে কে জিতবে বলা কঠিন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE