Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

হারের জ্বালা থেকে ভারতীয় দলকে মুক্তি দিল ৫২ হাজারের গ্যালারি

স্টেডিয়াম জুড়ে শুধুই ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ চিৎকার। এমন সমর্থন কে কবে পেয়েছে? তাই তাতে সারা না দিয়ে পারল না মাতোসের ছেলেরা। ম্যাচ শেষে তাই প্রতিদিনের মতই সবাই হাত ধরে এগিয়ে গেল দর্শকদের অভিবাদন নিতে। দাঁড়িয়ে গোটা স্টেডিয়াম হাততালি দিল এই যোদ্ধাদের জন্য।

ভারত বনাম ঘানা ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: এআইএফএফ।

ভারত বনাম ঘানা ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: এআইএফএফ।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:১৯
Share: Save:

পর পর তিনটে হার আর গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়া। কিন্তু দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের এই ভারতীয় দলকে ঘিরে উচ্ছ্বাস দেখে কে বলবে এই দলটা হেরে ছিটকে গিয়েছে। কে বলবে বিশ্বকাপের ইতি হয়ে গেল ভারতের জন্য। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই মাঠের মধ্যে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল দলের প্রায় সকলেই। সাময়িক হতাশা থেকে এই ছোট ছোট ছেলেদের মুক্তি দিল ৫২ হাজারের গ্যালারি।

আরও পড়ুন

শেষ হয়ে গেল ভারতের বিশ্বকাপ

স্টেডিয়াম জুড়ে শুধুই ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ চিৎকার। এমন সমর্থন কে কবে পেয়েছে? তাই তাতে সারা না দিয়ে পারল না মাতোসের ছেলেরা। ম্যাচ শেষে তাই প্রতিদিনের মতোই সবাই হাত ধরে এগিয়ে গেল দর্শকদের অভিবাদন নিতে। দাঁড়িয়ে গোটা স্টেডিয়াম হাততালি দিল এই যোদ্ধাদের জন্য। শেষবেলায় চারগোলটা যেন তবুও হজম হচ্ছিল না। জয়ের স্বপ্ন আগেই ছেড়ে দিয়েছিলেন মাতোস। ম্যাচের আগের দিনই তাঁর কথায় সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভুল থেকে গেল বেশ কিছু। বার বার দলে একাধিক পরিবর্তন দলের মধ্যের বোঝাপড়া তৈরি হতে দিল না। প্রথম ম্যাচে যে দল নামিয়েছিলেন মাতোস দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে পাঁচটি পরিবর্তন করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে যে দল নামিয়েছিল‌েন তৃতীয় ম্যাচে সেই দলে চারটি পরিবর্তন করেন তিনি। হয়তো সবাইকে সুযোগ দিতেই এই ব্যবস্থা কিন্তু এত বড় মঞ্চে একটা দল ধরে রাখাটা মনে হয় উচিত ছিল।

জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারি।

প্রশ্ন অনেক গুলোই থেকে গেল।

এক, প্রথমার্ধ ১-০ রাখার পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও তিন গোলের পিছনে কারণ কী?

দুই, দু’জন চোটগ্রস্ত ফুটবলার (অমরজিৎ ও আনোয়ার)কে প্রথম দলে রেখে দেওয়া হল কেন?

তিন, মানসিকভাবে দ্বিতীয়ার্ধে পুরো দলের গুটিয়ে যাওয়ার কারণ কী?

চার, দুটো ম্যাচে দাপিয়ে খেলা এই টিমটাই এ ভাবে কেন খেলা থেকে হারিয়ে গেল?

অনেকটা আশা-নিরাশার দোলাচলে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারত। প্রতিপক্ষ যখন ঘানা তখন সংশয়ের পরিমাণটা অনেকটাই বেশি ছিল। তবুও আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফোটা একদল ছেলের চোখে ছিল পরের পর্বে যাওয়ার একটা অদম্য জেদ। কিন্তু সাফল্য এল না। এল না একটাও পয়েন্ট। গ্রুপের তিন ম্যাচেই হেরে ছিটকে যেতে হল মাতোসের ছেলেদের। কিন্তু যেতে যেতে এই ছেলেরাই তৈরি করে গেল একটা স্বপ্নের সিঁড়ি। যে সিঁড়ি দিয়ে আগামীতে ভারতীয় ফুটবল অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখতে পারবে। সে রহিম আলি হোক বা অনিকেত যাদব বা মণিপুরের একঝাঁক তরতাজা মুখ। সকলেই বুঝিয়ে গেল চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সময় এসে গিয়েছে।

ভারত বনাম ঘানা ম্যাচ। বৃহস্পতিবার।

ঠিক ভারতীয় ক্রিকেটে যেটা শিখিয়েছিলেন স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা তার অনেক আগে ফুটবল মাঠে নেমে যারা ব্রিটিশদের বুঝিয়েছিলেন লড়ে যেতে পারে ভারতীয়রা। জিততেও পারে। সেই ১৯১১ সালে মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড জয়ের ইতিহাস তো সবারই জানা। আজ সেই জয়ের মুহূর্ত উপহার দিতে না পারলেও এই ছেলেরা বুঝিয়ে গেল আর একটু সময় দিলে কলম্বিয়া, ঘানা, ইউএসএদের বলে বলে হারাতেও পারে তারা। যে লড়াই তিন ম্যাচে দিয়েছে ভারত তাতে সেই ইঙ্গিতই দিয়ে গিয়েছে অমরজিৎ, ধীরাজ, রহিমরা। হারার আগে না হারার একটা নজিরও রেখে গেল এই যুব ভারতীয় দল। চোখে চোখ রেখে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা চালিয়ে যাওয়া। তাই হয়তো ইউএসএ ও কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে হারের পরও ঘানার বিরুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন দেখতে পেরেছিল মাতোসের দল। কিন্তু তেমনটা হল না। কিন্তু তার মধ্যেই বুঝিয়ে গেল এরা সুনীল ছেত্রী, ভাইচুং ভুটিয়াদের যোগ্য উত্তরসূরি। সুযোগ পেলে ছাপিয়ে যেতে পারে এদেরও।

প্রথম গোল ৩৮ মিনিটে। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ভারত শুরু করেছিল ১-০তে পিছিয়ে থেকে। প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের খাতা খুললেন সেই এরিক। ৫২ মিনিটে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর লড়াই থেকেই হারিয়ে গেল ভারত। রক্ষণের বোঝাপড়া এক কথায় উবে গেল। যে কারণে গোল হজম করার পর মাঠের মধ্যেই বিরক্তির প্রকাশ করে ফেলল গোলকিপার ধীরাজ। এর পর আবারও পর পর দুটো গোল। তার আগেই হার মেনে নিয়েছে পুরো দল। হেরেও কিন্তু রাজার মতোই মাঠ ছাড়ল টিম মাতোস, মেন ইন ব্লুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football India Vs Ghana U-17 World Cup FIFA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE