ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দল। ছবি: এআইএফএফ।
উত্তর-পূর্বে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাস এই রাজ্যে। রয়েছে আফস্পার সমস্যা। ভুয়ো সংঘর্ষ। যে রাজ্যে অলিম্পিকে পদক জেতার পরেও মেরি কমকে পদোন্নতি আর সরকারি প্রতিশ্রুতি পূরণে অপেক্ষায় থাকতে হয় বছর দেড়েক। রাজ্যে একমাত্র স্টেডিয়াম বলতে খুমান লাম্পাক। দারিদ্র-অনুন্নয়ন-নাশকতা-দুর্নীতির সঙ্গে ঘর করা তেমন রাজ্যেরই আট রত্ন ফের মুখ উজ্জ্বল করল মণিপুরের। অনুর্দ্ধ ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে যে ২১ জন খেলোয়াড়কে বাছা হয়েছে তার মধ্যে আটজনই মণিপুরের। ১৬ বছরের অমরজিৎ সিংহ কিয়াম জাতীয় দলের অধিনায়ক! অখ্যাত মিজোরামের আইজল এফসি যেমন আই লিগ জিতে চমকে দিয়েছিল দেশকে, তেমনই ভারতীয় দলে আট মণিপুরি কিশোরের অন্তর্ভুক্তিও মেরি, সরিতা দেবী, কুঞ্জরানি দেবী, ডিংকো সিংহ, প্রাক্তন জাতীয় দলের অধিনায়ক রেনেডি সিংহদের রাজ্যেকে ফের শিরোনামে আনল।
আরও পড়ুন
গোলকিপার হবে না বলে ছাড়তে চেয়েছিল ফুটবল
২০১৫ সালে নিকোলাই অ্যাডাম ছোটদের দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সহকারী কোচের দায়িত্বে থাকা মণিপুরের এন জি বিতান সিংহ তাঁকে উত্তর-পূর্বে নিয়ে আসেন, কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল উন্নয়ন-পরিকাঠামো না থাকলেও দেশের সেরা ফুটবল প্রতিভাদের আঁতুড়ঘর এখানেই। কিন্তু মেঘালয়, সিকিম, মিজোরাম, মণিপুরের ফুটবলারদের খাটো দৈর্ঘ্যের জন্য বাতিল করেন অ্যাডম। আট মাস পরে বিতান ফের অ্যাডামকে মণিপুর নিয়ে আসেন। এ বারে খালি হাতে ফেরেননি অ্যাডাম। তিনি চাকরি ছাড়লেও তাঁর হাতে তৈরি মণিপুরের সেই ছেলেরাই কাব্রাল নর্টন দে ম্যাটসের বর্তমান দলের চালিকাশক্তি। মণিপুরের ফুটবলাররা হল গোলে ধীরাজ সিংহ মইরাংথেম, রক্ষণে বরিস সিংহ থংজাম, মাঝমাঠে সুরেশ সিংহ ওয়াংজাম, কে নিংথোইনগাংবা মেইতেই, অমরজিৎ সিংহ কিয়াম, জিকসন সিংহ থৌনাওজাম, মহম্মদ শাহজাহান, ফরোয়ার্ডে নোংদাংমা নাওরেম।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে বাবার জন্যই খেলতে চান মিতেই
অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে জাতীয় দলে পৌঁছনো আট কিশোরের অনেকেই ভাবতে পারেনি ফুটবল চালিয়ে যাবে। নিংথোইনগাংবার বাবা দুধ বিক্রি করে পাঁচ জনের সংসার অতি কষ্টে চালাতেন। দু’মাস আগে তাঁর মৃত্যু হয়। ভেঙে পড়লেও পরিবারের উৎসাহে মাঠে ফেরে নিংথোইনগাংবা। দিদি সানা জানায়, ভাইয়ের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় অনেকদিন পরে আমরা হাসলাম। শাহজাহানের বাবা দর্জি। বরিসের বাবা বিভিন্ন রকম কাজ করে ছেলের ফুটবল বুট কেনার টাকা জোগাড় করেন।
ফুটবলারদের ভোটে দলের ক্যাপ্টেন হওয়া থৌবালের ছেলে অমরজিৎ সিংহের মা মাছ বিক্রি করেন। বাবা কখনও চাষ করেন, কখনও কাঠের কাজ। স্কুল দলে ভাল খেলতে থাকা অমরজিতকে চণ্ডীগড় ফুটবল অকাদেমিতে পাঠানোর জন্য বিমানের টিকিট কাটতে সঞ্চয় ভেঙে ৬০০০ টাকা দিয়েছিলেন বাবা। অ্যাডামের চোখে পড়াটাকেই জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করে অমরজিৎ। জার্মানি-স্পেনে গিয়ে সেখানকার দলের সঙ্গে খেলা ও অনুশীলন করার আকাশ-পাতাল ফারাকটা এখনও তার পরিবারের কাছে স্বপ্ন মনে হয়। অমরজিতের মা আসাংবি এখন গর্বের সঙ্গে ইম্ফলের বাজারে খদ্দেরদের কাছে গল্প করেন তাঁর ছেলে ভারতের অধিনায়ক!
রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ নিজেও ফুটবলার ছিলেন। রাজ্যের আট কিশোরের কৃতিত্বে গর্বিত বীরেন তাদের ও তাদের পরিবারকে অভিনন্দন জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy