আইজল এফসি অধিনায়ক আলফ্রেড জারিয়ান।
তাঁর অধিনায়কত্বেই দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে আই লিগের মূলপর্বে উঠেছিল আইজল এফসি।
সপ্তাহ দু’য়েক আগেই দেশের বাড়িতে থাকা বান্ধবী জেনেটকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আই লিগ জিতলে উপহার হিসেবে তাঁর জন্য কলকাতা থেকে শাড়ি কিনে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আই লিগ খেতাব যখন তাঁর টিমের দরজায় কড়া নাড়ছে, তখনই কার্ড সমস্যায় মাঠের বাইরে ঠিকে গিয়েছেন আইজল এফসি অধিনায়ক আলফ্রেড জারিয়ান।
রবিবার শিলংয়ে লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে খেতাব ফয়সালার ম্যাচে ড্র করলেই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম দল হিসেবে আই লিগ জিতে নেবে আইজল এফসি। আর সেই ম্যাচে খেলতে পারবেন না বলে মন খারাপ মিজোরামের দলটির অধিনায়কের। বলছেন, ‘‘টিম চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে। আর আমি মাঠের বাইরে। মন তো খারাপ হবেই।’’ জর্জ উইয়া-র দেশের ফুটবলার পরক্ষণেই বলে দেন, ‘‘আইএজল এফসি-র পারফরম্যান্স বিশেষ কোনও একজনের উপর যে নির্ভর করে না সেটা নিশ্চয়ই এ বারের আই লিগের খেলা দেখে বুঝতে পেরেছেন।’’
মনে করিয়ে দেওয়া হয়, আই লিগে এ বার আইজলের এগারোটা জয়ের মধ্যে মাত্র তিনটে এসেছে অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে। সেখানে শিলংয়ের মাঠে লাজং বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। ফোনের ও প্রান্ত থেকে ভেসে আসে আলফ্রেডের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কলকাতার লোক কি আই লিগের শুরুতে ভাবতে পেরেছিল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে আমরা হারিয়ে দেব? দেখুন না কী হয় রবিবার! কোচ খালিদ লাজং-এর জন্য বিশেষ স্ট্র্যাটেজি বুঝিয়ে দিয়েছেন সতীর্থদের। ওদের ঘরের মাঠে হারিয়েছি আমরা। জানি কী ভাবে ওদের বিরুদ্ধে খেলতে হবে।’’ দ্রুত এর পর যোগ করেন, ‘‘ছেলেদের আজও অনুশীলনে বলেছি, আমি নেই তা ভুলে যা। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলকে যদি হারানো যায়, তা হলে এই লাজং তো কিছুই নয় তোদের কাছে। ওদের হারাতে পারলেই ইতিহাসে স্থান করে নিবি। সেটা ভেবেই ম্যাচটা খেলিস।’’
আলফ্রেড বলতে থাকেন, ‘‘মোহনবাগান ম্যাচে আমাদের আশুতোষ আটকে দিয়েছিল সনি নর্দে-কে। মোহনবাগান তাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেনি। লাজং ম্যাচেও ওদের ডিপান্ডার জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এত দূর এসে খালি হাতে ফিরতে চাই না। রবিবার ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হব। সে দিন তিন পয়েন্টের সঙ্গেই ট্রফিটা নিয়ে আইজলে ফিরতে চাই।’’
এ বার আইজলের স্বপ্নের দৌড়ের কথা জানাতে গিয়ে আলফ্রেড বলেন, ‘‘অবনমনের পরেও এ বার আই লিগ খেলার সুযোগ দিয়েছিল ফেডারেশন। আই লিগের শুরুতে রোজ সতীর্থদের বলতাম, মরসুম শেষে কেউ যেন বলতে না পারে, আমরা দয়াদাক্ষিণ্যে আই লিগ খেলেছি। নিজেদের চেনাতে হবেই। সেটা হয়েছে শেষ পর্যন্ত। আমাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভারতীয় ফুটবলে। কেউ কেউ তো লেস্টার সিটি-র সঙ্গে তুলনা করছে আমাদের এই উত্থানকে।’’ উচ্ছ্বাস মেশানো গলায় আরও বলেন আলফ্রেড, ‘‘ভাবতে পারিনি যে আই লিগের শেষ ধাপে এসে আমাদের নিয়ে এত হইচই হবে। এমনকী ইস্টবেঙ্গলকে ঘরের মাঠে হারানোর পরেও আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রথম তিনে থাকা। কিন্তু নিষ্ঠাই আমাদের এতদূর এনেছে।’’
ভাইচুং ভুটিয়া তাঁর দলের স্থানীয় ছেলেদের প্রশংসা করেছেন, সে কথা জানেন। আলফ্রেড তাই বলছেন, ‘‘স্থানীয় ছেলেরা বেঞ্চ স্ট্রেংথ বাড়িয়েছে এ কথা ঠিক। কিন্তু আসল কাজটা করেছেন কোচ খালিদ জামিল। তা হল, আশুতোষ, জয়েশ, আলবিনো-দের সঙ্গে চার বিদেশি আর স্থানীয়দের নিয়ে টিমটা ঠিকঠাক তৈরি করেছেন।’’ আইজল অধিনায়ক আশাবাদী, উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম দল হিসেবে তাঁর দল রবিবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেই। কিন্তু তার পর?
এ বার বেরিয়ে আসে আলফ্রেডের লুকোনো খেদটা। ‘‘মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলে খেলা বাকি। গত কলকাতা লিগে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করেছিলাম টালিগঞ্জের হয়ে। ভারতীয় ফুটবলের মক্কায় দুই বড় দলে না খেললে এ দেশে আসাটাই বৃথা হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy