Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতাকে ভালবেসে ফেলেছেন মলিনা

ওদের বলেছিলাম তোমরা ঠিক করো কে কে পেনাল্টি মারবে

আগের রাতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কোচিতে। পরের দিন অর্থাৎ সোমবার বিকেলে দমদম বিমানবন্দরে নামলেন ট্রফি নিয়ে। সেখানেই লাউঞ্জে ধরা গেল জোসে মলিনাকে। একান্তে আনন্দবাজারের সামনে চ্যাম্পিয়ন টিমের কোচ।

ট্রফি জিতিয়ে ঘরে ফিরলেন কোচ। কলকাতা বিমানবন্দরে মলিনা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ট্রফি জিতিয়ে ঘরে ফিরলেন কোচ। কলকাতা বিমানবন্দরে মলিনা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

তানিয়া রায়
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৫
Share: Save:

আগের রাতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কোচিতে। পরের দিন অর্থাৎ সোমবার বিকেলে দমদম বিমানবন্দরে নামলেন ট্রফি নিয়ে। সেখানেই লাউঞ্জে ধরা গেল জোসে মলিনাকে। একান্তে আনন্দবাজারের সামনে চ্যাম্পিয়ন টিমের কোচ।

প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতটা কী ভাবে কাটল?

মলিনা: কেমন ভাবে আবার? সে রকম বড় কিছু না। ভারতে কোচিং করতে এসে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। যা উৎসব করার তা তো মাঠেই করে এসেছিলাম। হোটেলে ঢুকে একটা কেক কাটলাম। তার পর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নিজের ঘরে। ফুটবলাররা নিজেদের ঘরে সেলিব্রেশন করেছে শুনলাম।

প্র: আপনি নাকি টাইব্রেকারে পেনাল্টি কে কে পর পর মারবে তা ফুটবলারদেরই ঠিক করে নিতে বলেছিলেন? এটা সত্যি?

মলিনা: হ্যাঁ। কারণ জানতাম ওদের সবার পেনাল্টি মারার ক্ষমতা আছে। সবাই নিয়মিত অনুশীলন করেছে। ওরাই সাজিয়ে নিয়েছিল কে কে পর পর মারবে।

প্র: কোচিতে ম্যাচের সময় আপনাকে দেখে মনে হচ্ছিল দারুণ টেনশনে? রীতিমতো ঘামছেন।

মলিনা: ফাইনাল ম্যাচ, একেবারে অন্য রকম খেলা। জিতলে ট্রফি। হারলে শূন্য হাতে ফেরা। গ্রুপ লিগে পরের ম্যাচে সুযোগ আছে। ফাইনালে তা থাকে না। টেনশন তো হবেই। বিশ্বের সব কোচেরই এটা হয়। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার পর আর টেনশন হচ্ছিল না। তখন মনোসংযোগ করতে হচ্ছিল। গোল খাওয়ার পর জানতাম টিম ফিরবেই। স্ট্র্যাটেজি কিছু বদলানো যায় কি না ভাবতে হচ্ছিল! তবে টেনশনের জন্য ঘেমে যাইনি। আসলে কোচিতে খুব গরম ছিল। আর্দ্রতাও বোধহয় বেশি ছিল।

প্র: টাইব্রেকারের আগে নিশ্চয়ই টেনশন ছিল, এটা তো মানবেন?

মলিনা: একেবারেই না। কারণ আমার টিমের ফুটবলারদের উপর পুরো ভরসা ছিল। ওরাই শেষ পর্যন্ত জিতবে এই বিশ্বাস আমার ছিল।

প্র: কিন্তু জেতাল তো কিপার? দেবজিৎ যে শটটা পা দিয়ে বাঁচাল, সেটা তো অবিশ্বাস্য! না হলে তো...l

মলিনা: পুরো মানছি না। দেবজিৎ যদি দারুণ সেভ করে থাকে তা হলে পাঁচ জন তো গোল করেছে। তবে এটা বলছি ও সত্যিই খুব ভাল কিপার। দলকে অনেক ম্যাচে সাহায্য করেছে। টাইব্রেকের সেভটা তো অসাধারণ। অনেকে বলছে হঠাৎ করেই নাকি ওটা ও করেছে। কিন্তু আমি জানি, দেবজিৎ বলটা লক্ষ করেই শটটা বাঁচিয়েছে পা দিয়ে। শরীরটা ছুড়েছিল উল্টো দিকে। আমি নিজে কিপার ছিলাম। ওকে এবং অন্য কিপারদেরও প্রতিদিনই বলতাম, পেনাল্টি বা ফ্রি-কিকের সময় বলের উপর থেকে চোখ সরাবে না। যে ভাবেই হোক বলটা বাঁচানোর চেষ্টা করবে। হয়তো বলের উল্টো দিকে ঝাঁপাতে পারো। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পা ব্যবহারও করতে পারো। তবে টাইব্রেকারের আগে আমি ওকে আলাদা করে কিছু বলিনি।

প্র: জুয়েলকে কেন আপনি শেষ শটটা মারতে পাঠালেন?

মলিনা: জুয়েল নিজেই মারতে গিয়েছিল। ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। তাই আমিও আপত্তি করিনি। ফুটবলারদের উপর পুরো টুর্নামেন্টে বিশ্বাস রেখেছি। জুয়েলের উপর তাই আস্থা রাখায় কোনও অসুবিধা ছিল না।

প্র: প্রথম বার এসেই চ্যাম্পিয়ন। আন্তোনিও হাবাসের ছায়া থেকে তা হলে বেরিয়ে এলেন?

মলিনা: (হাসি মুখ গম্ভীর) কারও ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা নয়। আমি মনে করি, উনি একটা কৃতিত্ব দেখিয়ে গিয়েছিলেন। আমি আরও একবার টিমকে চ্যাম্পিয়ন করেছি। এটা করতেই তো এখানে এসেছিলাম।

প্র: কলকাতায় স্প্যানিশ কোচ মানেই সাফল্য। প্রথমে হাবাসে, এ বার আপনি। রহস্যটা কী?

মলিনা: রহস্য একটা আছে মনে হচ্ছে। সেটা স্পেনে গিয়ে খুঁজতে হবে। তার পর আপনাকে নিশ্চয়ই জানাব। (বলেই হেসে ফেললেন মলিনা। হাসি থামিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন) আসলে কী জানেন, সব কোচই আসে টিমকে চ্যাম্পিয়ন করতে। আমি লাকি এটিকে-র মতো এমন একটা টিমের কোচিং করানোর দায়িত্ব পেয়ে। টিমের অফিসিয়াল থেকে ফুটবলার— সবাই আমার পাশে থেকেছে। টিমকে সাফল্য এনে দিতে সাহায্য করেছে।

প্র: প্লিজ রেগে যাবেন না। একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে। কর্তারা অনেকেই বলছেন, হাবাসের তুলনায় আপনার টিমের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ অনেক ভাল ছিল। অনেক এককাট্টা ছিল সবাই। সে জন্যই সাফল্য।

মলিনা: (প্রশ্ন মাঝপথে থামিয়ে) দেখুন আগে কী ছিল আমি জানি না। সেটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন প্লিজ করবেন না। তবে আমরা টিম হিসাবে চ্যাম্পিয়ন। আমার টিমে ২৪ জনই প্রথম একাদশে খেলার যোগ্য, এটা ড্রেসিংরুমে বা আমার কাজের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলাম। আমি যেমন সবার উপর আস্থা রেখেছিলাম। ওরাও তেমন সবাই আমাকে বিশ্বাস করেছিল।

প্র: ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’— আপনি তো তাই করলেন। গোটা আইএসএলের জার্নিটা কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

মলিনা: ভীষণ কালারফুল একটা জার্নি। দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরব। প্রথম যখন এই শহরে এসেছিলাম, তখন সব কিছু অজানা ছিল। এখন কলকাতা আমার প্রিয় শহর। রবীন্দ্র সরোবর ছোট স্টেডিয়াম ছিল, সে ভাবে লোক খেলা দেখতে আসতে পারছিল না বলে শুনেছিলাম। কিন্তু এয়ারপোর্টের বাইরে সমর্থকদের উন্মাদনাটা দেখে দারুণ লাগছে। এই ফুটবল পাগল শহরের লোকেদের জন্য ট্রফি জিততে পেরে ভাল লাগছে।

টিম বাসে ওঠার জন্য তাড়া লাগাচ্ছিলেন টিমের সঙ্গে থাকা কর্তারা। তার মধ্যেই শেষ প্রশ্নটা।

প্র: পরের মরসুমে আপনি না কি কলকাতায় থাকছেন না? শোনা যাচ্ছে, সচিন তেন্ডুলকরের টিমের প্রস্তাব এসেছে?

মলিনা: (মলিনা অবাক চোখে তাকালেন) সবে তো চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এই অসাধারণ মুহূর্তটা কিছু দিন উপভোগ করতে দিন। পরের আইএসএল নিয়ে ভাবার অনেক সময় পাওয়া যাবে। (সূত্রের খবর, যে নামী শপিং মলে এটিকে-কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে সোমবার, সেখানেই বসেই টিমের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্‌কার সঙ্গে পরের মরসুম নিয়ে এক প্রস্ত কথা হয়েছে মলিনার।)

প্র: পরের আইএসএলেও কলকাতাতেই তা হলে আসছেন?

মলিনা: (হেসে) দেখুন না কী হয়! তবে এটুকু বলছি, কলকাতাকে আমার ভাল লেগেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE