Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
শাস্ত্রী চাইছেন সচিন, কপিল, সানিকেও

দলটা অধিনায়কের, ক্রিকেটাররাই আসল, বলছেন শাস্ত্রী

ভারতীয় দলের টিম বাসে ফিরে এলেন তিনি। নিজের শহর মুম্বইয়ের হোটেল থেকে বিমানবন্দরের দিকে বেরিয়ে পড়া। তখনই পুনর্মিলন ছেলেদের সঙ্গে। অধিনায়ক বিরাট কোহালির সঙ্গে তার আগেই দেখা হয়ে গিয়েছে। দু’জনে পাশাপাশি বসে প্রথাগত বিদেশ সফরের ‘ডিপারচার’ প্রেস কনফারেন্স করলেন। বাসে করে বিমানবন্দর, সন্ধ্যা নাগাদ শ্রীলঙ্কাগামী উড়ান। সব মিলিয়ে কোহালিদের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার দিনটা কাটল প্রচণ্ড হুড়োহুড়িতে। চরম ব্যস্ততার মধ্যেও মুম্বই থেকে ‘টেক-অফ’ করার আগে আনন্দবাজার-কে মোবাইল ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন রবি শাস্ত্রী।অধিনায়ক বিরাট কোহালির সঙ্গে তার আগেই দেখা হয়ে গিয়েছে। দু’জনে পাশাপাশি বসে প্রথাগত বিদেশ সফরের ‘ডিপারচার’ প্রেস কনফারেন্স করলেন। বাসে করে বিমানবন্দর, সন্ধ্যা নাগাদ শ্রীলঙ্কাগামী উড়ান।

যুগলবন্দি: শ্রীলঙ্কা রওনা হওয়ার আগে কোচ শাস্ত্রী ও অধিনায়ক কোহালির সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: পিটিআই

যুগলবন্দি: শ্রীলঙ্কা রওনা হওয়ার আগে কোচ শাস্ত্রী ও অধিনায়ক কোহালির সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: পিটিআই

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৬
Share: Save:

প্রশ্ন: হেড কোচ নির্বাচিত হয়ে লন্ডন থেকে ফোনে পুনর্মিলনের কথা বলেছিলেন। টিমের সঙ্গে দেখা হল? কী রকম সেই অনুভূতি?

রবি শাস্ত্রী: টিম বাসে করে এয়ারপোর্ট আসার সময় দেখা হল সকলের সঙ্গে। মনে হচ্ছিল, ডিরেক্টর হিসেবে গত কালই তো ওদের সঙ্গে একই বাসে করে মাঠে গিয়েছিলাম! যেন কখনও আলাদা হইনি আমরা।

প্র: বাসেই কি মিটিং শুরু হয়ে গেল?

শাস্ত্রী: না, না। মিটিং করব শ্রীলঙ্কা পৌঁছে। তবে সকলের সঙ্গেই হাল্কা কথাবার্তা হয়েছে।

প্র: ফার্স্ট টিম মিটিং নিয়ে বিশেষ কোনও ভাবনা?

শাস্ত্রী: আগ্রহ ভরে তাকিয়ে আছি। ইয়েস, কিছু পরিকল্পনা তো আছেই। তবে সেগুলো টিমের জন্যই তোলা থাক। আমি ব্যাপারটাকে যতটা সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করব।

প্র: বাকি সাপোর্ট স্টাফের সঙ্গে কি বসেছিলেন?

শাস্ত্রী: না, না। ওদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তবে পুরোদস্তুর মিটিং আমরা করব কাল, বৃহস্পতিবার। আজকের দিনটা রিগ্রুপ করলাম। কাজ শুরু হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেই।

প্র: সহকারী কোচেদের বাছা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আপনি কোর গ্রুপ ধরে রাখা নিয়ে অনড় ছিলেন। কোনও বিশেষ কারণ?

শাস্ত্রী: আমি এমন একটা কোর গ্রুপ চেয়েছিলাম, যারা টিমকে দু’শো দিন দিতে পারবে। মানে পুরো সময় দেবে— সোজা কথা। কোচিং একটা সিস্টেম। সেই সিস্টেমটা তো ঠিক রাখতে হবে রে ভাই। তাই আমি বলে যাচ্ছিলাম, আমার কোর গ্রুপটাকে দাও। এই টিমটা নিয়েই আগের বারও ডিরেক্টর থাকার সময় আমি আঠেরো-উনিশ মাস ধরে কাজ করেছি। আমি জানি, নেপথ্যে ওরা কী রকম অমানুষিক পরিশ্রম করে আর কী দুরন্ত অবদান রাখে। ওরা কোনও বড় নাম না হতে পারে কিন্তু টিম ইন্ডিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনেক বড় অবদান ওদের।

প্র: প্রেস কনফারেন্সে সেই কারণেই কি বললেন, ভরত অরুণ যদি কোনও বড় নাম হতো আপনারা গাছের মাথায় চড়িয়ে দিতেন?

শাস্ত্রী: ঠিক বলিনি? ভারতীয় দলের বোলিং নিয়ে অরুণ কী রকম পরিশ্রম করেছে, সেটা বোলারদেরই জিজ্ঞেস করে নিক না কেউ। ওরা বলে দেবে। পরিসংখ্যান দেখে নিক লোকে। বিশ্বকাপে ৮০টার মধ্যে ৭০টার ওপর উইকেট নিয়েছিল আমাদের বোলাররা। কোনও বড় নাম তখন বোলিং কোচ ছিল না। ছিল এই অরুণ-ই। পরিসংখ্যানটা তো সকলের চোখের সামনেই রয়েছে। কেউ ম্যানুফ্যাকচার করছে না। দেখে নিক না। এই টিমের অনেক ছেলেকে আমার চেয়েও ভাল জানে অরুণ। ওদের জুনিয়র ক্রিকেট থেকে কোচিং করিয়ে যাচ্ছে ও।

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াকে হারানো যায়, মত মিতালির

প্র: ডিরেক্টর হয়ে যখন আপনি এসেছিলেন ২০১৪ সালে, দেশি সহকারীদের নিয়ে এলেন। নির্দিষ্ট কোনও ভাবনা ছিল এর পিছনে?

শাস্ত্রী: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওরা কী রকম ভাল কাজ করছে, সেটা আমার জানা ছিল। তাই বেশি ভাবতেই হয়নি। আমি জানতাম, ওরা টিমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখনও সেটাই মনে করি বলে একই কোর গ্রুপকে আমি সঙ্গে চেয়েছি।

প্র: পরামর্শদাতাদের অবস্থানটা তা হলে কী দাঁড়াল? এটা নিয়ে তো চূড়ান্ত ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

শাস্ত্রী: রাহুল (দ্রাবিড়) আর জাহির (খান)— দু’জনের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। ওদের পরামর্শ অমূল্য এবং সেটা নিতে আমার কোনও অসুবিধে নেই। এ বার বোর্ড ওদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবে, কী ভাবে ওদের ব্যবহার করা হবে। এই হচ্ছে পরিস্থিতি। কোনও কনফিউশনের ব্যাপারই নেই।

প্র: শ্রীলঙ্কায় তো পরামর্শদাতা কেউ যাচ্ছেন না। শুধু আপনি এবং আপনার কোর গ্রুপ, তাই তো?

শাস্ত্রী: আমি তো সেরকমই জানি।

প্র: পরামর্শদাতা নিয়ে আপনার আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে, তাই না? শুধু রাহুল বা জাহির নয়, আপনি সচিন বা সানিকেও আনতে চান?

শাস্ত্রী: ইয়েস। সেটাই আমার প্ল্যান। পরামর্শদাতাদের একটা ‘পুল’ তৈরি করা। যখন যেমন দরকার হবে, সেই মতো যাতে আমাদের দেশের ‘গ্রেট’দের নিয়ে আসতে পারি। সচিন, সানি বা কপিল দেব যদি এই টিমের জন্য সময় দেয়, ছেলেদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে যায়, দারুণ ব্যাপার হবে। ছেলেরা খুব উৎসাহিত হবে। আমি তাই বোর্ডকে পরামর্শ দিয়েছি, ‘পুল অব কনসাল্ট্যান্টস’ বানানো হোক। আমি তালিকাটাকে শুধু ভারতের মধ্যে আটকে রাখতে চাই না। বিদেশিদের সাহায্যও নিতে পারি।

প্র: বিদেশিদের সাহায্য বলতে?

শাস্ত্রী: যেমন অস্ট্রেলিয়ায় গেলাম। জেসন গিলেসপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে আমাদের বোলারদের জন্য। তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ড গেলে সেই দেশ থেকে কোনও এক্সপার্ট-কে নিলাম। আমার কথা হচ্ছে, প্র্যাক্টিক্যালি ভাবতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে, টিমের প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শদাতা আসুক। তাতেই টিমের উপকার হবে।

প্র: কোচ এবং ক্যাপ্টেনের ভূমিকা এবং তাঁদের নিজেদের সীমানা নিয়ে নানা রকম কথা হচ্ছে। এ নিয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী?

শাস্ত্রী: ভেরি সিম্পল। টিমটা ক্যাপ্টেনের। আমার কাজ হচ্ছে সহকারী কোচেদের সঙ্গে নিয়ে ক্যাপ্টেন এবং তাঁর টিমকে মাঠের লড়াইয়ের জন্য সব চেয়ে ভাল ভাবে তৈরি করে পাঠানো। আমরা প্রস্তুতিটা দেখব। ক্রিকেটারদের মাঠে গিয়ে সেটা কাজে করে দেখাতে হবে। ওই কারণেই বলছি, ইন্ডিয়া টিম মানে তার প্লেয়াররা। কোচেরা নয়।

প্র: আর বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পেলে কোচের কেমন লাগতে পারে?

শাস্ত্রী: তখন কোচ ইজ দ্য হ্যাপিয়েস্ট পার্সন। আঠাশ বছর বয়সেই বিরাট কোহালি ‘গ্রেট’দের পৃথিবীতে ঢুকে পড়েছে। এখনই ডিকশনারি হাতড়াতে হচ্ছে অ্যাডজেক্টিভ খোঁজার জন্য। তবু বলছি, ওর সেরা সময় এখনও আমরা দেখিনি। আগামী পাঁচ বছর বিরাটের সেরা সময় হতে যাচ্ছে। পাঁচ বছর পর ও কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা খুব আকর্ষণীয় ‘টপিক’।

প্র: গত এক বছর টিমের সঙ্গে ছিলেন না। বিরাট মাঝেমধ্যে সমস্যায় পড়েছেন। কমেন্ট্রি করতে করতে কি বিরাটের ব্যাটিংয়ে বিশেষ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে, যা নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করতে চান?

শাস্ত্রী: কয়েকটা ব্যাপার আমার মাথায় আছে ঠিকই। সেগুলো নিয়ে অবশ্যই ওর সঙ্গে কথা বলব। তা নিয়ে আমি ইন্টারভিউতে কথা বলতে চাই না। এটা অধিনায়কের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলোচনা। বাইরে প্রকাশ করার জন্য নয়।

প্র: প্রধান কোচ হিসেবে বিরাটদের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করছেন গলে। সেই গল, যেখানে আগের সিরিজেও প্রথম টেস্ট ছিল এবং জেতা টেস্ট হেরে যায় দল...

শাস্ত্রী: (থামিয়ে দিয়ে) গলের সেই হারই এই টিমটাকে তৈরি করে দিয়েছে। আজ যে ছেলেগুলো মানসিক ভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, হেরে গেলেও দুর্দান্ত ভাবে ফিরে আসতে পারে, সেটা গল টেস্টের থেকে পাওয়া শিক্ষা। শ্রীলঙ্কায় গত বার প্রথম টেস্ট হারার পরেও দুর্ধর্ষ মনোভাব দেখিয়ে পরের দু’টো টেস্ট জিতে সিরিজ ছিনিয়ে নিয়েছিল ছেলেরা। এই টিমের জন্য ওটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে আছে।

প্র: এ বারের শ্রীলঙ্কা টিম কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে?

শাস্ত্রী: ভালই লড়াই করবে। নিজেদের মাঠে শ্রীলঙ্কা বরাবরই খুব শক্তিশালী দল। সেই কারণেই তো খুব বেশি ভারতীয় দল, খুব বেশি ক্যাপ্টেন ওখানে গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে আসতে পারেনি। রেকর্ডটা দেখলেই বেরিয়ে আসবে। কোহালি সেই ক্যাপ্টেনদের মধ্যে এক জন।

প্র: আসন্ন মরসুমে ভারতীয় দলের বেশির ভাগ সিরিজই বিদেশে। চ্যালেঞ্জটা তার মানে আরও বেশি।

শাস্ত্রী: শুনুন, চ্যালেঞ্জ নিতে এই টিমের ক্যাপ্টেন, ছেলেরা বা তাদের হেড কোচ কেউ ভয় পায় না। আর বিদেশের দলগুলোও এখন জানে, ওদের মাঠে গিয়ে আমরাও একটু-আধটু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারি। তো ওরাও যেন কিছুটা সতর্ক থাকে।

প্র: আপনি ডিরেক্টর থাকার সময় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হেরে গেলেও দারুণ উত্তেজক ক্রিকেট ব্র্যান্ড উপহার দিয়েছিল দল। এ বারে কীসের উপর জোর দেবেন? ফল না ক্রিকেট ব্র্যান্ড?

শাস্ত্রী: ইতিবাচক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট আমরা চালিয়ে যাব। শুধু জেতা নয়, মানুষকে আনন্দ দিয়ে জিততে চাইব। এই টিমে খুব উত্তেজক সব প্রতিভা আছে। ওরা সেই ক্রিকেট উৎকর্ষ উপহার দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। লক্ষ্যটা হবে, সেরা মানসিকতা তৈরি করা। যাতে সব রকম ফর্ম্যাটে ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করা যায়।

প্র: আপনার চুক্তি ২০১৯ পর্যন্ত। মনের কোথাও কি পরবর্তী বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনা উঁকি দিচ্ছে?

শাস্ত্রী: একেবারেই না। আমি সিরিজ ধরে ধরে ভাবব। বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনায় ঢুকব ঠিক সময়ে।

প্র: কী বলবেন এক বছরের মধ্যে এই প্রত্যাবর্তনকে? কমেন্ট্রিতে আপনার খুব প্রিয় এবং বিখ্যাত সেই লাইনের মতো— ওয়েন্ট লাইক আ ট্রেসার বুলেট?

শাস্ত্রী: হাঃ হাঃ হাঃ। কমেন্ট্রি বক্সটা আমি মিস করব। আই লাভ কমেন্ট্রি। তবে এটাও ঠিক যে, জীবনে আত্মত্যাগ করতেই হয়। ভারতীয় ড্রেসিংরুমও আমার কাছে খুব প্রিয় একটা জায়গা। কমেন্ট্রি বক্সে ততটা চ্যালেঞ্জ নেই। ভারতীয় ড্রেসিংরুমে আছে। আর আমি সারা জীবন চ্যালেঞ্জ ভালবেসেছি, উপভোগ করেছি। ফিরে আসাটা নিয়ে ট্রেসার বুলেট-টুলেট নয়। একটাই কথা বলব— ‘গড ইজ গ্রেট’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE