Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অনুরাগদের মুকুট অক্ষত থাকছে আরও দশ দিন

এক মহাষষ্ঠীতে বিদায়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। ধরে নেওয়া হচ্ছিল, ভারতীয় বোর্ডের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কাঠামোরও অবসর ঘোষিত হবে আরও এক মহাষষ্ঠীতে। নির্দেশ না মেনে চলার অপরাধে সুপ্রিম কোর্ট বিদায়ী ঘণ্টা বাজিয়ে দেবে শীর্ষ ক্রিকেট কর্তাদের।

ক্রিকেটমহলে দিনভর চর্চার তিন মুখ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অনুরাগ ঠাকুর এবং রাজেন্দ্র মাল লোঢা।

ক্রিকেটমহলে দিনভর চর্চার তিন মুখ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অনুরাগ ঠাকুর এবং রাজেন্দ্র মাল লোঢা।

গৌতম ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫১
Share: Save:

এক মহাষষ্ঠীতে বিদায়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। ধরে নেওয়া হচ্ছিল, ভারতীয় বোর্ডের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কাঠামোরও অবসর ঘোষিত হবে আরও এক মহাষষ্ঠীতে। নির্দেশ না মেনে চলার অপরাধে সুপ্রিম কোর্ট বিদায়ী ঘণ্টা বাজিয়ে দেবে শীর্ষ ক্রিকেট কর্তাদের।

বোর্ড কর্তারাও আদালতের রায় শুক্রবার আসছেই জেনে এত নিশ্চিত ছিলেন যে তাঁরা নিজেদের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে ফেলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় বার হত কী, পরবর্তী দু’ঘণ্টার মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া জেনে যেত বাকি বিশ্ব। কিন্তু আদালত এ দিন যথেষ্ট সময় না পাওয়ায় কিছু অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশ জারি করে একে পিছিয়ে দিল ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। মধ্যবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ আদালতে দশেরার ছুটি। গত চব্বিশ ঘণ্টায় এই রদবদলকে কেন্দ্র করে ক্রিকেটমহলে যে পরিমান সাসপেন্স আর উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল তাতে যেন খানিকটা চোনাই পড়ে গেল আদালতের অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশে। বোর্ড ঠিক করে রেখেছিল শীর্ষকর্তাদের আজ বিদায় নিতে বাধ্য করা হলে তারা শনিবার থেকে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ বন্ধ করে দেবে। ক’দিনের মধ্যে দেশের জনগণের উদ্দেশে একটা প্রেস রিলিজও দেবে যে, আইসিসিকে জানাতে বাধ্য হচ্ছি নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজের সংগঠন আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কারণ আদালতের রায় আমাদের সেই জায়গাতেই এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

সর্বোচ্চ আদালতে নিয়মিত ভাবে অসম্মানিত হতে থাকা বোর্ড কর্তারা ঠিক করেছেন সর্বোচ্চ আদালতকে একটা ডেলিভারিতেই বেঁধার চেষ্টা করবেন। তা হল, জনমত। এঁদের আশা, ভারতে ক্রিকেট যেহেতু ধর্মের মতোই আরাধ্য, সেখানে ক্রিকেট নিয়ে অরাজকতা দেখা দিলে জনমানস তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবেই। তা আছড়ে পড়বে গণমাধ্যমে। তখন সরকারি স্তরে তা নিয়ে হস্তক্ষেপ করা যাবে। লোকসভায় প্রশ্ন তোলা যাবে। যে লোকসভা গ্রেগ চ্যাপেলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারত দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ান ডে সিরিজ হারলে বিচলিত হতে পারে, তারা আইপিএলের মতো জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট না হলে অবশ্যই অঘোষিত বিচারসভার আয়োজন করবে।

বোর্ড কর্তারা আদালতের উপর চাপ বাড়ানোর অছিলায় অনুমোদিত ২৯ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের চিঠি দিতে বলেন। সেই চিঠির বক্তব্য হল, আমাদের যথেষ্ট টাকা নেই। আমরা কী ভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন করব? আদালত যেহেতু লোঢার সুপারিশ অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্য সংস্থাকে পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে অনুদান স্থগিত করে দিয়েছে, তাই এই পাল্টা আক্রমণ।

সমস্যা হল বোর্ডের ভেতরেই এই চিঠি দেওয়া নিয়ে তীব্র বিভাজন রয়েছে। অনুরাগদের কথামতো আঠারো রাজ্য সংস্থা এই মেল পাঠায়। এগারো রাজ্য সংস্থা তা পাঠাতে রাজি হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে সৌরভের নেতৃত্বাধীন সিএবি। শীর্ষকর্তারা যা নিয়ে সৌরভের সম্পর্কে ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের কারও কারও মনে হচ্ছে, বোর্ড বনাম আদালত এমন ঐতিহাসিক বিরোধের সময় সৌরভ যেন লোঢার দিকে বেশি ঝোঁকা। লোঢার সঙ্গে একটা আইনের ব্যাখ্যা জানতে তিনি যোগাযোগও করেছিলেন। যার কোনও প্রয়োজন ছিল না।

আবার বোর্ডের মধ্যে সৌরভ সমর্থকেরা বলতে থাকেন, সৌরভ তো ঠিকই করেছেন। বিভিন্ন সংস্থার ব্যালান্স শিট দেখলেই তো বোঝা সম্ভব তাদের কত টাকা ক্যাশ আর কত ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। রঞ্জি করার টাকা নেই— এই দাবিটা যে কতটা অসার এদের ব্যালান্স শিটের দিকে তাকালেই তো পরিষ্কার হয়ে যাবে। সৌরভ কোন দুঃখে এমন অসার মেল লিখতে যাবেন? তা ছাড়া লোঢা যখন কথাবার্তায় বুঝিয়েছেন প্রশাসনের ভাবী মুখদের মধ্যে সৌরভকে খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন, তখন আগ বাড়িয়ে খামখা বিরোধিতা করবেন কেন?

বোর্ডের ক্ষমতাসীন অংশ এ দিনও জোর দিয়ে বলেছে, বাকি ১১ সংস্থা বিরোধিতা করলেও কিছু হবে না। লোঢা প্রস্তাবিত সংশোধিত আইন পাশ করতে গেলে বার্ষিক সাধারণ সভায় দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দরকার। তা এদের নেই। অন্য পক্ষ আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট যদি আগামী ১৭ অক্টোবর গোটা কমিটি বাতিল ঘোষণা করে, তখন বোর্ড গঠিত হবে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে। তার ভিত্তিটাই হবে আলাদা। পুরনো সেই তামিলনাড়ুর রেজিস্টার্ড সোসাইটি অ্যাক্ট তার বেলা আর প্রয়োগ করা যাবে না। প্রস্তাব পাশ করাতে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতাও তখন লাগবে না।

বলা যেতে পারে, আদালতের রায় বার হওয়া যতই স্থগিত থাক ক্রিকেট বোর্ডের অর্ন্তদ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও সেই লোঢা সুপারিশের দিকেই পরিষ্কার ঝুঁকে থেকেছে। তারা বলেছে, লোঢার সুপারিশ কার্যকর না করলে বোর্ড থেকে দশ কোটি টাকার অনুদান নেওয়া যাবে না। এতে অনুরাগের প্রতি আনুগত্য রাখা রাজ্য সংস্থাদের উপর চাপ আরও বাড়ল।

আইসিসি কর্তা ডেভ রিচার্ডসনের প্রকাশিত ইন্টারভিউ সম্পর্কেও আদালত বোর্ড প্রধানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। রিচার্ডসন এতে বলেছেন, আদালতের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁদের যাতে সুবিধে হয়, সেই মর্মে আইসিসি-র একটা চিঠি চেয়েছিলেন অনুরাগ। শশাঙ্ক মনোহর যা দিতে অস্বীকৃত হন।

আদালত জানতে চেয়েছে, অনুরাগ সত্যিই এমন অনুরোধ করেছিলেন কি না? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসনে এখন বোর্ড আর আইসিসি বিপরীতমুখী লোকেশনে দাঁড়িয়ে। এর ব্যাখ্যা তাই অনুরাগের কাছে স্পর্শকাতর হবে। ক্রিকেটমহল তাই স্থগিত রাখা রায়দানের মধ্যেও আদালতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দেখছে। অবশ্যই তা বোর্ড সীমান্তে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

বারোটি রাজ্য সংস্থাকে বোর্ডের অনুদান (৩০ সেপ্টেম্বর এসজিএমে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী) আপাতত খরচ না করার নির্দেশ।

অন্য ১৩টা সংস্থাকে বোর্ডের ১৬.৭২ কোটি টাকা করে দেওয়া অনুদান তারা লোঢা-সুপারিশ মানার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যন্ত খরচের উপর নিষেধাজ্ঞা।

লোঢা-সুপারিশ নিয়ে আইসিসি-র চিঠি চাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরকে ব্যক্তিগত হলফনামা পেশ করার নির্দেশ।

বোর্ডের জেনারেল ম্যানেজার (ক্রিকেট অপারেশনস) রত্নাকর শেঠিকেও হলফনামা পেশের নির্দেশ। যে সিদ্ধান্তে শেঠিকে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছে বোর্ড, তার প্রমাণ পেশের নির্দেশ।

বৈঠক ডেকে লোঢা কমিশনের সব সুপারিশ মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রাজ্য সংস্থাগুলো, তার প্রমাণ পেশের নির্দেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BCCI Lodha Panel Anurag Thakur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE