Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ: বাকি আর ১৩ দিন

বাবার আপত্তিতে ক্রিকেট ছেড়ে ফুটবলের ময়দানে আনোয়ার

মাত্র আট বছর বয়সেই অলরাউন্ডার হিসেবে নজর কাড়তে শুরু করেছিল আনোয়ার। কিন্তু ক্লাস সেভেনে ওঠার পরেই বাবা রেজ্জাক আলির ফতোয়া— ক্রিকেট খেলা বন্ধ। ফুটবলার হতে হবে! বাবার ভয়েই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফুটবল-শিক্ষা শুরু আনোয়ারের।

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

পঞ্জাবের জালন্ধর জেলার আদমপুর গ্রামের আনোয়ার আলি স্বপ্ন দেখেছিল ভারতের হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার।

মাত্র আট বছর বয়সেই অলরাউন্ডার হিসেবে নজর কাড়তে শুরু করেছিল আনোয়ার। কিন্তু ক্লাস সেভেনে ওঠার পরেই বাবা রেজ্জাক আলির ফতোয়া— ক্রিকেট খেলা বন্ধ। ফুটবলার হতে হবে! বাবার ভয়েই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফুটবল-শিক্ষা শুরু আনোয়ারের।

গোয়ায় অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের শেষ পর্বের প্রস্তুতির ফাঁকেই আনন্দবাজার-কে আনোয়ার শোনাল তার উত্থানের আশ্চর্য কাহিনি, ‘‘আমাদের গ্রামে ফুটবলার হিসেবে বাবা বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু আমি চাইতাম ক্রিকেটার হতে। ব্যাটিং ও বোলিং দু’টোই ভাল করতাম। কিন্তু বাবা চাইতেন না আমি ক্রিকেটার হই। বাড়ি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে মাহিলপুর ফুটবল অ্যাকাডেমিতে জোর করে ভর্তি করে দেন।’’

• আনোয়ার আলি

• জন্ম: ২৮ অগস্ট ২০০০, জালন্ধর

• পজিশন: ডিফেন্ডার

• আদর্শ: সের্জিও র‌্যামোস ও সন্দেশ ঝিঙ্গান

ইচ্ছের বিরুদ্ধে ফুটবল শুরু করলেও অল্প দিনের মধ্যেই স্ট্রাইকার হিসেবে নজর কেড়ে নেয় আনোয়ার। পঞ্জাবের হয়ে জাতীয় ফুটবলে দুর্দান্ত খেলে নির্বাচিত হয় অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলে। কিন্তু ফের স্বপ্নভঙ্গ আনোয়ারের!

অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের কোচ তখন ছিলেন নিকোলাই অ্যাডাম। প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার আনোয়ারের তিনি পজিশন বদলে দেন। স্ট্রাইকার আনোয়ার হয়ে ওঠে রক্ষণের অন্যতম ভরসা। গোল করার বদলে বিপক্ষের স্ট্রাইকারদের আটকানোই প্রধান কাজ হয়ে ওঠে তার।

কেন পজিশন বদল? জাতীয় দলের ডিফেন্ডারের কথায়, ‘‘আমার উচ্চতা বেশি ছিল। তাই অ্যাডাম স্যার আমাকে ডিফেন্সে খেলার পরামর্শ দেন।’’ নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি? ‘‘প্রথম দিকে হয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছিলাম। এখন আমি রক্ষণেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য।’’

সের্জিও র‌্যামোস ও সন্দেশ ঝিঙ্গানের ভক্ত আনোয়ারের প্রধান অস্ত্র আত্মবিশ্বাস এবং হার না মানা মানসিকতা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ঘানা ও কলম্বিয়া। কিন্তু আনোয়ার তা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। ভারতীয় ডিফেন্ডারের হুঙ্কার, ‘‘র‌্যাঙ্কিং নিয়ে ভাবতে চাই না। বিপক্ষে যত ভাল স্ট্রাইকারই থাকুক, সহজে গোল করতে দেব না।’’ সঙ্গে যোগ করল, ‘‘এই বিশ্বকাপে আমার আরও একটা লক্ষ্য হচ্ছে, পঞ্জাবের নাম উজ্জ্বল করা।’’

যে বাবা ক্রিকেট ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন শৈশবে, তিনিই এখন ভারতীয় ডিফেন্ডারের প্রধান ভরসা! আনোয়ারের কথায়, ‘‘ম্যাচের আগের দিন বাবার সঙ্গে কথা আমাকে বলতেই হবে। প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করি। বাবার কাছে জানতে চাই, কী ভাবে খেলা উচিত।’’ আনোয়ার কৃতজ্ঞ লুইস নর্টন দে মাতোসের কাছেও। তার কথায়, ‘‘পঞ্জাবে ফুটবলটা মূলত খেলা হয় লং পাসে। নর্টন স্যার শিখিয়েছেন, মাটিতে বল রেখে ছোটছোট পাসে কী ভাবে খেলতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE