প্রত্যাবর্তন: নির্বাসন উঠেছে। টেস্টের মহড়ায় রাবাডা। গেটি ইমেজেস
দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলার কাগিসো রাবাডার নির্বাসন উঠে যাওয়ায় তিনি যে মোটেই প্রসন্ন নন, তা বুঝিয়ে দিলেন স্টিভন স্মিথ। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, এই রায়ের ফলে মাঠের মধ্যে সংঘাতের ব্যাখ্যাটাই বদলে যেতে পারে। অনেকেরই মনে হতে পারে, এমন ঘটনা ঘটিয়েও ছাড় পাওয়া যেতে পারে। এর ফলে মাঠে শারীরিক সংঘাত সংক্রান্ত যে কড়া নিয়ম ছিল, সেটার অস্তিত্ব নিয়েই না নতুন করে প্রশ্ন উঠে পড়ে।
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে স্মিথকে আউট করার পরে তাঁর মুখের সামনে এসে আগ্রাসী উৎসব করেন রাবাডা। এর পরেই তাঁর কাঁধের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় স্মিথের কাঁধের। যা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল, উইকেট পেয়ে ইচ্ছা করেই স্মিথের কাঁধে ধাক্কা দিয়েছেন রাবাডা। ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো তাঁকে দুই টেস্টের নির্বাসন দেন। কিন্তু আইসিসি-তে নিয়ম আছে, ম্যাচ রেফারি নির্বাসনের শাস্তি দিলে নিরপেক্ষ বিচারকের মাধ্যমে সেই শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন করা যায়। তখন সেই ক্রিকেটার আইনজীবী নিয়েও সওয়াল করতে পারেন। ঠিক এই নিয়মের হাত ধরেই ২০০৪ সালে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েডের দেওয়া দুই টেস্টের নির্বাসন থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিল জগমোহন ডালমিয়ার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
রাবাডার ক্ষেত্রে আইসিসি বিচারক (এক্ষেত্রে বলা হয় অ্যাপিল কমিশনার, যিনি কোনও প্রাক্তন বিচারক কেউ হন) হিসেবে ছিলেন মাইকেল হেরন। ছয় ঘণ্টা ধরে টেলিকনফারেন্সে রাবাডার হয়ে লড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ আইনজীবী ডালি পোফু। দেশের অন্যতম সেরা আইনজীবী পোফুর সঙ্গে গোপন সম্পর্কের অভিযোগে স্ত্রী উইনির সঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল বলে শোনা যায়।
বিতর্কিত: সেই মুহূর্ত। স্মিথের সঙ্গে ধাক্কা লাগছে রাবাডার।
যদিও অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক এখনও মানতে নারাজ যে, রাবাডার সঙ্গে তাঁর যে কাঁধে ধাক্কা লেগেছিল, সেটা অনিচ্ছাকৃত ছিল। ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো তাঁর সিদ্ধান্তে জানিয়েছিলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবেই স্মিথের কাঁধে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেন রাবাডা। সেই কারণে তিনি দুই ম্যাচের নির্বাসনের শাস্তি দিয়েছিলেন।
আবার আইসিসি ‘অ্যাপিল কমিশনার’ সেই রায়কে নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, তাঁর মনে হচ্ছে না, ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা দিয়েছিলেন রাবাডা। এর পরেও নিজের অবস্থানে অনড় স্মিথ বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি অবশ্যই মনে করি, আমাকে ও ধাক্কা দিয়েছিল। ফুটেজে যা দেখা গিয়েছে, তার চেয়ে একটু বেশি জোরেই ছিল ধাক্কাটা।’’ আরও বলছেন, ‘‘আইসিসি একটা উদাহরণ তৈরি করে দিল। আমি কখনওই আমাদের বোলারকে বলব না উইকেট নেওয়ার পরে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে ধাক্কা দিয়ে উৎসব করো। আমার মনে হয় না, সেটা ক্রিকেটের অঙ্গ হওয়া উচিত।’’
রাবাডার মাঠে ফেরা নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যা নেই জানিয়ে স্মিথ যোগ করেছেন, তাঁর প্রশ্ন যে ভাবে রায় পাল্টে গেল তা নিয়ে। আইসিসি বিচারকের সামনে টেলি কনফারেন্সে তাঁকে কেন ডাকা হল না, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। তিনি বলছেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য ব্যক্তিকে ডাকাই হল না। এটা বেশ আশ্চর্যের।’’ ম্যাচ রেফারি ক্রো-র কথা টেনে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘উনি হতাশ হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি ওঁর জায়গায় থাকলেও প্রসন্ন হতাম না।’’
আরও পড়ুন: আমিই সেরা, সদম্ভ ঘোষণা রোনাল্ডোর
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার ভার্নন ফিল্যান্ডার তাঁর মুছে ফেলা টুইটে লিখেছিলেন, অস্ট্রেলীয় অধিনায়কও ধাক্কাধাক্কির জন্য সমান ভাবে দায়ী। তা নিয়ে স্মিথ বলেন, ‘‘এটা একেবারে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মতো তথ্য।’’ কেপ টাউনে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু তৃতীয় টেস্ট। স্মিথ বলছেন, তাঁরা আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলবেন কিন্তু সীমানা অতিক্রম করতে চান না।
স্মিথের সঙ্গে যিনি বৃহস্পতিবার টস করতে নামবেন, সেই দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি ঠাট্টা করে বলেছেন, ‘‘এই বিচারপতি যদি আমার সময় অস্ট্রেলিয়ায় থাকত!’’ প্রসঙ্গত, বল বিকৃতির অভিযোগে ডু’প্লেসি তিন ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। রাবাডার মুক্তি পাওয়া প্রসঙ্গে ডুপ্লেসি বলেন, ‘‘ক্রিকেটের জন্য ভালই হল। নিরপেক্ষ বিচারক দিেয় দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কিছু নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy