ছবি: সংগৃহীত।
হঠাৎ শেষবেলায় রবীন্দ্র জাডেজাকে নিয়ে পড়লেন কেন বিরাট কোহালি?
শনিবারের বারবেলায় হোলকার স্টেডিয়ামে ভারতীয় দলের নেট সেশন তখন শেষের দিকে। প্যাড-গ্লাভস পরে জাডেজা ঢুকলেন ব্যাট হাতে। তাঁকে থ্রো-ডাউন দিচ্ছিলেন এক সাপোর্ট স্টাফ। হঠাৎ দেখা গেল বল হাতে সেখানে হাজির কোহালি। টানা তাঁকে বল করে গেলেন ভারত অধিনায়ক। জাড্ডুকে মাঝে-মাঝে বলেও দিচ্ছিলেন, কোন বলটা কী ভাবে খেলতে হবে। আর অধিনায়কের পিছনে অনেকটা দূরে তখন দাঁড়িয়ে এই সেশন দেখছিলেন দুই নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ ও দেবাঙ্গ গাঁধী। সঙ্গে দলের কোচ রবি শাস্ত্রীও।
মাঠের সাইজ আর তার মাঝখানে সিমেন্টের মতো দেখতে বাইশ গজটা দেখে বেশ উৎসাহিত মনে হল অস্ট্রেলিয়া শিবিরকে। মনে হয় তাঁরা ভাবছেন, এত দিনে এমন একটা পিচ পাওয়া গিয়েছে, যেখানে মনের সুখে একটু ব্যাট করা যাবে। পাটা উইকেটে স্পিন-অস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিকল করতে কি তাই অন্য কিছু ভাবছেন কোহালি-শাস্ত্রীরা? একটু আগেই অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার সাংবাদিকদের বলে গিয়েছেন, ‘‘এই উইকেটটা ব্যাটিংয়ের পক্ষে দারুণ। মাঠটাও ছোট। কাল মনে হচ্ছে বড় রানের খেলা হবে।’’ ভারত এই মাঠে ওয়ান ডে ইনিংসে ৪১৮ রানও তুলেছে একবার। তাই ডেভিড ওয়ার্নারের কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জাডেজাকে প্রথম একাদশে রাখা হবে কি না, দেখার। অস্ট্রেলিয়া শিবির থেকে আবার খবর পাওয়া গেল, শনিবারই ভারতের সিরিজ জয় আটকাতে ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব-কে ফেরাচ্ছে স্মিথ বাহিনী। ওয়ার্নারই জানিয়ে দিলেন, ‘‘ফিঞ্চ এলে ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই আগ্রাসনটা দেখাতে পারব আমরা।’’
শনিবার সকাল থেকে ইনদওরের কড়া রোদে পাটা উইকেটে যে ব্যাটসম্যানদের দাপট আরও বাড়তে পারে, তা নিয়ে দেখা গেল কারও কোনও দ্বিমত নেই। ভারতীয় ওপেনার রাহানেও বললেন, ‘‘মাঠটা ছোট ঠিকই। আমরা সব বিভাগে যেমন ভাল খেলছি, তেমনই ভাল খেললে জিতব। ওদের হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ওরা কাল ভাল খেলবে ধরেই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েই নামব।’’
সেই মোকাবিলার জন্যই কি দলে পরিবর্তনের কথা ভাবছে বিরাট-বাহিনী? জাডেজাকে নিয়ে শেষ বিকেলে নেটে কোহালির পড়ে থাকাটা কি সে জন্যই? ‘‘মণীশ, কেদারদের ওপর ভরসা রাখা উচিত’’, রাহানে বলে গেলেও মণীশের ভাগ্যে এই ম্যাচে সুযোগ জুটবে কি না, এটা একটা বড় প্রশ্ন। মণীশ পাণ্ডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স খুব একটা ভাল নয়। বিশেষ করে চার নম্বরে নামার জন্য কে এল রাহুল যখন তৈরিই আছেন। আর রাহানে এ দিন বললেন, ‘‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের যে কোনও সময়ে যে কোনও জায়গায় খেলার কথা বলা আছে। আমরাও তার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত থাকি।’’
দিন-রাতের ম্যাচে সাধারণত মাঠে এসে তার পরই চূড়ান্ত এগারো বাছে ভারত। তাই প্রথম একাদশ চূড়ান্ত করার জন্য রবিবার সকাল পর্যন্ত সময় থাকছে কোহালিদের হাতে।
ইনদওরের তারকা প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি এ দিন বলছিলেন, ‘‘দু’জন রিস্ট স্পিনার একসঙ্গে খেলানোর ঝুঁকি নিতে পারে যে ক্যাপ্টেন, তার বুকের পাটা আছে বলতে হবে। এই ব্যাপারে বিরাটকে কুর্ণিশ করতেই হবে। ও ঝুঁকি নিতে জানে এবং নেয়ও। অস্ট্রেলিয়ার ফিঞ্চ, হ্যান্ডসকম্ব দলে ফিরছে। ওদের আটকাতে জাডেজাকে নামালে অবাক হব না। জাড্ডু তো অস্ট্রেলিয়ার আতঙ্ক। টেস্টে কী করেছিল মনে নেই?’’ কিন্তু কোহালি শেষ পর্যন্ত কোনও ফাটকা খেলেন কি না, সেটাই দেখার।
ইনদওরে ভারত আজ পর্যন্ত কোনও ম্যাচে হারেনি। সচিন তেন্ডুলকরের দশ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া ও বীরেন্দ্র সহবাগের ওয়ান ডে-তে দুশো যে মাঠে, সেই মাঠে গত বছরও টেস্ট ইনিংসে পাঁচশোর উপর রান তুলে ডিক্লেয়ার করেছে ভারত। এমন পয়া মাঠে ভারতের সিরিজ জয় না আটকানোর সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা এ দিন যে ভাবে স্পিনের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস সেরে নেওয়ার পরে বড় স্ট্রোক নেওয়া শুরু করলেন, তা দেখে বেশ বোঝা গেল দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে তারা এখন মরিয়া। নবরাত্রী উৎসবের রোশনাইয়ে রবিবার হয়তো রানের ফোয়ারা ছুটবে হোলকার স্টেডিয়ামে। কিন্তু ক্রিকেট যুদ্ধ ক্রিকেটের সীমা ছাড়িয়েও চরমে পৌঁছয় কি না, সেটাই দেখার। স্মিথ তো বছরের শুরুতে টেস্ট সিরিজে বেনজির বিতর্ক নিয়ে সম্প্রতি স্বীকার করেই নিয়েছেন, ‘‘কোহালিদের মাথা গরম করে দেওয়াটা ছিল আমাদের স্ট্র্যাটেজি।’’ সেই কৌশল তাঁরা ফের প্রয়োগ করলে আগুনের ফুলকি উড়তেই পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy