Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
দুই পর্ব মিলিয়ে রিয়ালের কাছে ১-৫ বিধ্বস্ত মেসির বার্সেলোনা

বার্সা ডুবল নেমারের অভাবেই

মেসি, নেমার ও লুইস সুয়ারেজ (এমএসএন) জুটি বিপক্ষের ম্যানেজার ও ফুটবলারদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছিল। তারকা ত্রয়ীকে আটকানোই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিধ্বস্ত: রিয়াল মাদ্রিদের কাছে সুপার কাপে হারের পরে হতাশ লিওনেল মেসি। বের্নাবাওতে। ছবি: রয়টার্স

বিধ্বস্ত: রিয়াল মাদ্রিদের কাছে সুপার কাপে হারের পরে হতাশ লিওনেল মেসি। বের্নাবাওতে। ছবি: রয়টার্স

দীপেন্দু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৩
Share: Save:

রিয়াল মাদ্রিদ ২ : বার্সেলোনা ০

ক্যাম্প ন্যু-তে তিন দিন আগে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার হারের পর ভেবেছিলাম, বের্নাবাউ-তে নিশ্চয়ই এ বার ঘুরে দাঁড়াবে লিওনেল মেসি-রা। কিন্তু এক জন ফুটবলার না থাকায় পুরো দলটাই যে এই ভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, কল্পনা করতে পারিনি। যার জন্য বার্সার এই বিপর্যয়, তার নাম— নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)।

মেসি, নেমার ও লুইস সুয়ারেজ (এমএসএন) জুটি বিপক্ষের ম্যানেজার ও ফুটবলারদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছিল। তারকা ত্রয়ীকে আটকানোই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নেমারের বার্সা-ত্যাগ পুরো ছবিটাই বদলে দিয়েছে। বুধবার রাতে স্প্যানিশ সুপার কাপে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে বার্সাকে দেখেই মনে হচ্ছিল, ছন্দটাই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বারবার একা হয়ে যাচ্ছিল মেসি।

ফুটবল এগারো জনের খেলা হলেও বার্সার অবিশ্বাস্য সাফল্যের জন্য মেসিকেই মূলত কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মেসি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। কিন্তু নেমার, লুইস সুয়ারেজ, আন্দ্রে ইনিয়েস্তাদের সাহায্য না পেলে ওর একার পক্ষে যে বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন করা সম্ভব ছিল না, সেটা এখন স্পষ্ট।

বার্সায় মেসির মতো নেমারও মাঝমাঠে নেমে এসে খেলা তৈরি করত। ফলে সুয়ারেজের পক্ষে গোল করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। রিয়ালের বিরুদ্ধে সুপার কাপের দু’টো ম্যাচেই দেখলাম, মেসি আটকে যেতেই খেলা থেকে হারিয়ে গিয়েছে বার্সা। এটা অবশ্য হওয়ারই ছিল। কারণ, বিপক্ষ দলের কোনও ম্যানেজার বা ফুটবলারই মেসির মতো শিল্পীকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেওয়ার ঝুঁকি নেবেন না। তা সত্ত্বেও বার্সা বহু ট্রফি জিতেছে। কারণ, নেমার দলে ছিল। মেসি আটকে গেলেও ম্যাচ বার করে নিতে পারত নেমার।

আরও পড়ুন: লক্ষ্য সেনের নয়া লক্ষ্যভেদ

নেমারের সেই সব বিরল ফুটবলারের মধ্যে পড়ে, যাদের দু’পায়ে খেলার ক্ষমতা রয়েছে। বার্সায় ও বারবার মেসির সঙ্গে জায়গা পরিবর্তন করে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের সমস্যায় ফেলত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স কাপেও রিয়ালের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার হয়ে শেষ ম্যাচেও দুর্ধর্ষ খেলেছিল নেমার। সেই ম্যাচে গোল না পেলেও দলের জয়ের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। নেমারকে ছাড়া খেলার ফল যে কী হতে পারে, তা স্প্যানিশ সুপার কাপেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার ওপর সুয়ারেজ হাঁটুতে চোট পেয়ে চার সপ্তাহের জন্য ছিটকে গিয়েছে। তা ছাড়া কর বিতর্কও মনে হয় এখনও চাপে রেখেছে মেসিকে। ও খোলা মনে না খেললে বার্সেলোনার পক্ষে সফল হওয়া কঠিন।

উৎসব: গোল করার পরে অ্যাসেনসিও (বাঁ-দিকে)। ট্রফি নিয়ে ছেলের সঙ্গে রোনাল্ডো। ছবি: গেটি ইমেজেস ও টুইটার

এই পরিস্থিতিতে বার্সা টিম ম্যানেজেন্ট যদি নেমারের বিকল্প খুঁজে না পায়, তা হলে কিন্তু আরও বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। আমিও জিদানের সঙ্গে একমত— নেমার একজনই হয়।

প্রশ্ন উঠতে পারে রিয়ালও তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, গ্যারেথ বেল-সহ প্রথম একাদশের একাধিক তারকাকে ছাড়া খেলেছে। তা হলে ওরা কী ভাবে জিতল?

বার্সা পুরোপুরি মেসি-নির্ভর। কিন্তু রিয়ালের সাফল্যের নেপথ্যে জিদানের মস্তিষ্ক ও টিম গেম। এই কারণেই বার্সার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথম দলের একঝাঁক তারকা ছাড়াই খেলার ঝুঁকি নিতে পারেন জিদান।

সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই শুধু নয়, গ্যারেথ বেলের যোগ্য উত্তরসূরিও বুধবার রাতে পেয়ে গিয়েছেন রিয়াল বস‌্। যার নাম মার্কো অ্যাসেনসিও।

ডার্বি নতুন তারকার জন্ম দেয়। বুধবার রাতে ইন্টারনেটে রিয়াল বনাম বার্সা ম্যাচে দেখলাম অ্যাসেনসিও-র উত্থান। চার মিনিটে বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শটে ওর গোলটা বারবার দেখেছি। অবিশ্বাস্য গোল। বার্সা গোলরক্ষক বুঝতেই পারেনি। এই গোলটার পরেই মনে হচ্ছিল, বার্সার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ান কঠিন। ঠিক সেটাই হল। ৩৯ মিনিটে করিম বেঞ্জেমার গোলটার পরেই ম্যাচের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়ে যায়।

অ্যাসেনসিও-কে দেখে নিজের অতীত মনে পড়ে যাচ্ছিল। ফুটবল খেলা শুরু করার পর থেকেই শুনতাম, একমাত্র ডার্বিতে গোল করলেই সকলে মনে রাখবে। ১৯৯৭ সালে কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বিতে ম্যাচ শেষ হওয়ার পনেরো মিনিট আগে নেমে হেডে গোল করেছিলাম। যা আমার জীবনটাই পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। অ্যাসেনসিও দু’টো এল ক্লাসিকোতেই গোল করল। বার্সা কর্তারা নিশ্চয়ই এখন হাত কামড়াচ্ছেন! কেন? কারণ, স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে দু’বছর আগে তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন!

মায়োরকা থেকে বার্সায় সই করার কথা ছিল অ্যাসেনসিও-র। কিন্তু বেশি খরচ করতে রাজি ছিলেন না বার্সা কর্তারা। তখন রিয়ালে সই করে অ্যাসেনসিও। যদিও রিয়ালে তার অভিষেক সুখকর হয়নি। ফের লোনে ফেরে মায়োরকায়। এই মরসুমে অ্যাসেনসিও-কে ফিরিয়ে এনেছেন জিদান। আর দু’ম্যাচে গোল করেই বার্সার উপেক্ষার জবাব দিল।

নেমারের পর এ বার অ্যাসেনসিও-কে হাতছাড়া করার হতাশাও বার্সা কর্তাদের যন্ত্রণা বাড়াবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE