Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হেঙ্কসের অধীনে বায়ার্নে ফিরেছে ত্রিমুকুটের বসন্ত

হেঙ্কস নিজেও কি ভাবতে পেরেছিলেন, তাঁর পুরনো ক্লাব থেকে হঠাৎ ফোন আসবে? পাঁচ বছর আগে বায়ার্নকে তিনি ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন।

নজরে: বায়ার্নের নবজাগরণের প্রধান কারিগর হেঙ্কস। ছবি: গেটি ইমেজেস

নজরে: বায়ার্নের নবজাগরণের প্রধান কারিগর হেঙ্কস। ছবি: গেটি ইমেজেস

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১১
Share: Save:

জাপ হেঙ্কসের অধীনে দুর্দান্ত ফর্মকে হাতিয়ার করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নামছে বায়ার্ন মিউনিখ। তেরোটি ম্যাচ টানা জিতে ইস্তানবুলের দল বেসিকতাসের বিরুদ্ধে মিউনিখের আলিয়ান্‌জ এরিনায় ফেভারিট তারাই।

এবং বায়ার্নের এই নবজাগরণের পিছনে প্রধান কারিগর হেঙ্কস। হেড কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলোত্তি-কে সরিয়ে হেঙ্কস আসার পর থেকে শেষ ২৩টি ম্যাচের ২২টিতে জিতেছে বায়ার্ন। ৭২ বছরের হেঙ্কস যখন দায়িত্ব নেন, বুন্দেশলিগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল বায়ার্ন। এই ক্লাবে চতুর্থ বারের জন্য দায়িত্ব নিলেন তিনি। সেপ্টেম্বরে প্যারিস সঁ জারমঁ-এর কাছে ০-৩ বিধ্বস্ত হয় বায়ার্ন। সে দিনই বেজে গিয়েছিল আনচেলোত্তির বিদায় ঘণ্টা। ক্লাব কর্তারা এর পর হেঙ্কসের শরণাপন্ন হন। তখন সকলেই বলেছিল, ফাটকা খেললেন বায়ার্ন কর্তারা। সত্তর পেরিয়ে যাওয়া হেঙ্কসের আর কী দেওয়ার আছে?

হেঙ্কস নিজেও কি ভাবতে পেরেছিলেন, তাঁর পুরনো ক্লাব থেকে হঠাৎ ফোন আসবে? পাঁচ বছর আগে বায়ার্নকে তিনি ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, বুন্দেশলিগা এবং জার্মান কাপ— তিনটি ট্রফিই জিতেছিল বায়ার্ন। ম্যানেজারের পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে তিনি বাগান সামলাচ্ছিলেন, প্রিয় পোষ্য কুকুর ‘ক্যান্ডো’-কে নিয়ে হাঁটতে বেরোচ্ছিলেন। তখনই হঠাৎ ম্যানেজার হিসেবে ফেরার ডাক।

‘‘আমার স্ত্রী এবং কন্যা বলল, এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। আমার প্রিয় কুকুরও দু’বার ডেকে উঠেছিল। সেটা শুনে আমার মনে হয়েছিল, ও-ও বোধ হয় চাইছে,’’ বলছেন হেঙ্কস। তিনি আসার পর থেকেই ভোজভাজির মতো অনেক কিছু বদলে গিয়েছে বায়ার্নে, এমন মনে হতে পারে। আসলে তাঁর কঠোর পরিচালনাতেই এসেছে পরিবর্তন। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন প্রথমেই। ট্রেনিং সেশনে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে, শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনও আপস করছেন না হেঙ্কস।

আনচেলোত্তির আমলে থোমাস মুলার-কে কোথায় খেলানো হবে, সেটাই ঠিক করে ওঠা যাচ্ছিল না। বিচক্ষণ হেঙ্কস উইং থেকে সরিয়ে মুলারকে ঠিক রবার্ট লেয়নডস্কির পিছন থেকে খেলাচ্ছেন। জাভি মার্টিনেজ-কে সেন্টার ব্যাক থেকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার করে দিয়েছেন। ২০১৩-তে ঠিক এই পোজিশনেই খেলতেন মার্টিনেজ। এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলোতে জাদু বিদ্যার মতোই দ্রুত কাজ হয়েছে। হেঙ্কসের প্রথম ম্যাচেই ফ্রেইবার্গ-কে ৫-০ উড়িয়ে দেয় বায়ার্ন।

‘‘কেউ জানত না চার বছর ধরে ফুটবলের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার সময়টা জাপ কী ভাবে কাটাচ্ছেন। এখন আমার মনে হচ্ছে, উনি একই রকম থেকে গিয়েছেন। এখনও সেই ব্যক্তিত্ব। সেই ফুটবলজ্ঞান। ঠিক জানেন, কখন রাশ শক্ত করে ধরতে হবে,’’ বলেছেন হেঙ্কসের প্রিয়তম ফুটবলারদের একজন, মার্টিনেজ। সত্যিই যেন মধুচন্দ্রিমা চলছে হেঙ্কসের। তিনি আসার পর থেকে মাত্র একটি ম্যাচই হেরেছে বায়ার্ন। জার্মান কাপের সেমিফাইনালে খেলেছে। গত ডিসেম্বরে পিএসজি-র কাছে হারের বদলাও নিয়েছে তারা। পিএসজি-কে ৩-১ হারায় তারা। যদিও সেই জয়ের পরেও তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপে দ্বিতীয় হয়। আনচেলোত্তির আমলে বুন্দেশলিগা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। আর হেঙ্কস আসার পর থেকে ফের সিংহাসন সুরক্ষিত দেখাচ্ছে। উল্‌ফসবার্গ-কে গত শনিবার ২-১ হারানোর পরে দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর চেয়ে ১৯ পয়েন্টে এগিয়ে গিয়েছে বায়ার্ন। ‘‘আমাদের দলে জেতার সেই খিদে আর জেদ ফিরে এসেছে। এই টিমটার কোনও তুলনা হয় না,’’
বলেছেন মুলার।

২০১২-১৩ মরসুমে হেঙ্কসের সেই স্বপ্নের টিমে মুলার এবং মার্টিনেজ যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন আরয়েন রবেন এবং ফ্র্যাঙ্ক রিবেরি। বহু যুদ্ধের দুই ঘোড়া তাঁরা। রবেন বলে দিচ্ছেন, ‘‘হেঙ্কস আসার পর প্রথম দিন থেকেই পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।’’ রিবেরির হাঁটুর চোট থেকে ফেরাটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরনো গুরুর অধীনে ফিরতে পেরে খুশি রিবেরি-ও। বলে ফেলছেন, ‘‘হেঙ্কসের অধীনে আবার আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি। দলের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন এবং বিশ্বাসটা যেন ফিরে এসেছে।’’

শুধু পুরনোরাই নন, নবীনরাও ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছেন। কলম্বিয়ান হামেজ রদরিগেজ দারুণ খেলতে শুরু করেছেন হেঙ্কসের অধীনে। আর হেঙ্কস তাঁর স্বভাবসিদ্ধ নাছোড় ভঙ্গিতেই শুনিয়ে রাখছেন, ‘‘যে কোনও প্রতিযোগিতাই হোক না কেন, আমাদের দল সহজে হাল ছেড়ে দেবে না।’’ নিশ্চিত থাকা যায়, এই মানসিকতাই আগাগোড়া দেখা যাবে বায়ার্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযানে।

শুধু নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না, এই মরসুমের শেষেও হেঙ্কস-কে আর পাওয়া যাবে কি না। ক্লাব কর্তারা তাঁকে রেখে দিতে মরিয়া। ফুটবলাররাই তাঁকে চায়। কিন্তু হেঙ্কস জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি থাকবেন না।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম পর্ব:

বায়ার্ন মিউনিখ বনাম বেসিকতাস (রাত ১:১৫, সোনি সিক্স এইচডি ও এসডি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE