Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যাসাগরের দাপটে অপ্রতিরোধ্য বাংলা

বুধবার হাওড়া স্টেডিয়ামে মহারাষ্ট্রকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার রাস্তায় এ রকম দু’জনকে পাওয়া গেল বাংলার জার্সিতে—বিদ্যাসাগর সিংহ এবং তীর্থঙ্কর সরকার।

দুরন্ত: সন্তোষ ট্রফিতে মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোল করছেন বাংলার অধিনায়ক জিতেন মুর্মু। বুধবার হাওড়া স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুরন্ত: সন্তোষ ট্রফিতে মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোল করছেন বাংলার অধিনায়ক জিতেন মুর্মু। বুধবার হাওড়া স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

বাংলা ৫ : মহারাষ্ট্র ১

সন্তোষ ট্রফি এখন যেন ফুটবলারদের আলোয় ফেরার মঞ্চ। কেউ ক্লাব কোচের অনাস্থার জবাব দিচ্ছেন গোলের পর গোল করে। কেউ আবার অন্ধকার থেকে ফিরে রামধনু হচ্ছেন।

বুধবার হাওড়া স্টেডিয়ামে মহারাষ্ট্রকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার রাস্তায় এ রকম দু’জনকে পাওয়া গেল বাংলার জার্সিতে—বিদ্যাসাগর সিংহ এবং তীর্থঙ্কর সরকার।

বাবার সঙ্গে চাষের জমিতে কাজ করতে করতেই ফুটবলে হাতেখড়ি বিদ্যাসাগরের। ইম্ফলের সামারন গ্রাম থেকে সরাসরি ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র টিমে খেলার সুযোগ পান দু’বছর আগে। অনূর্ধ্ব ১৯ লিগে লাল-হলুদ জার্সিতে ছয় গোল করার পর তাঁকে নেওয়া হয়েছিল সিনিয়র টিমে। কিন্তু তাঁকে মাঠে-ই নামতে দেননি খালিদ জামিল। বাংলার জার্সি পরার সুযোগ পেয়ে তাই বিদ্যাসাগর যেন ‘আগুন’ হয়ে উঠেছেন। চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে গোল করেছিলেন। আর এ দিন করলেন জোড়া গোল। করতে পারতেন হ্যাটট্রিকও। পারেননি বলে অবশ্য আফসোস নেই। সুনীল ছেত্রীর ভক্ত বলে দিলেন, ‘‘জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াই লক্ষ্য আমার।’’

মহারাষ্ট্রকে গোল-বন্যায় ভাসানোর দিনে বিদ্যাসাগর যদি হন প্রবাহমান ‘গঙ্গা’, তা হলে তীর্থঙ্কর ছিলেন ‘ভগীরথ’। বেলঘরিয়ার তীর্থঙ্করের যেন পুনর্জন্ম হচ্ছে সন্তোষে। দেশের অন্যতম প্রতিভাবান মিডিও অন্ধকার কাটিয়ে জেগে উঠেছেন প্রতিদিন। ২০১৪-য় মোহনবাগানে সুযোগ পেলেও সনি নর্দে আর ইউসা কাতসুমির ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন। হতাশায় হারিয়ে ফেলেছিলেন নিজের ফর্ম। ভাগ্য ফেরাতে চলে যান ভবানীপুরে। এ বার সই করেছেন মহমেডানে। এ দিন রঞ্জন চৌধুরীর বাংলা টিমে সেই তীর্থঙ্করই ছিলেন হৃৎপিণ্ড থেকে কিডনি—সব কিছুই। দু’টো গোলের নিখুঁত পাস, কম্পাস মাপা কর্নার কিক, মাঠ জুড়ে তীর্থঙ্করের দাপট দেখে মনে হল বাঁ পায়ের এ রকম ‘কমপ্লিট মিডিও’ বহু দিন আসেনি বাংলায়। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃশানু দে, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরম্পরা প্রবাহিত তীর্থঙ্করের খেলায়। ম্যাচের পর তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যেই বলছিলেন, ‘‘চোট এবং হতাশা কাটিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করছি। রেনেডি সিংহ আমার আইডল। ওর কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিই।’’

মূলত বিদ্যাসাগর আর তীর্থঙ্করের দাপটেই প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে থাকা বাংলা দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়াল। ৫৫ থেকে ৯০—পঁয়ত্রিশ মিনিটে পাঁচ-পাঁচটা গোল হয়ে গেল। বিদ্যাসাগরের দুটি ছাড়াও গোল করলেন মনোতোষ চাকলাদার, রাজন বর্মন ও জিতেন মুর্মু।

মুম্বইতে এখন ফুটবলের সেই রমরমা নেই। মহীন্দ্রা ইউনাইটেড, এয়ার ইন্ডিয়া, মুম্বই এফসি টিম তুলে দিয়েছে। তাই আই লিগে কোনও টিম খেলে না ওই রাজ্য থেকে। জুনিয়রদের টিমে তার প্রভাব পড়েছে। চোখে পড়ার মতো ফুটবলার কম। তবুও শুরুতেই লিয়েন্ডার ধর্মরাজ হঠাৎ-ই গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রকে। গোলটি অফসাইডে হয়েছে বলে দাবি করে বাংলা। কর্নাটকের রেফারি সুমনকুমার তাতে কান দেননি। বাংলার নিশ্চিত একটি গোল বাতিল করেন তিনি।

ওই গোলটি ছাড়া পুরো ম্যাচের বাংলার দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। বিরতির আগে বাংলা গোল না পেলেও নয়টি কর্নার পেয়েছিল। সুমিত দাস, কার্তিক কিস্কু, বিদ্যাসাগর সিংহ-রা সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে গোলের সংখ্যা বাড়ত। বাংলার কোচ রঞ্জন চৌধুরী বললেন, ‘‘আট গোলে ম্যাচটা জিততে পারতাম। গ্রুপ লিগে বেশি গোল সব সময়ই সুবিধা দেয়। পরপর ম্যাচ, দুপুরের অসহ্য গরম সত্ত্বেও ছেলেরা যা খেলেছে তাতে আমি খুশি।’’ এই ম্যাচ জিতে যাওয়ায় বাংলার শেষ চারে যাওয়ার রাস্তা অনেকটাই মসৃণ হয়ে গেল। এ দিন মণিপুর-চণ্ডীগড়ের ম্যাচ ১-১ ড্র হয়েছে। ফলে গ্রুপের বাকি দুটি ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলেই সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে গত বারের চ্যাম্পিয়নদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Maharashtra Santosh Trophy Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE