Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সকালটা মনোজের, বিকেল শামিদের

বিকেলের এই ‘সূর্যোদয়’-ই কি কাজে এল? যেন ‘সৌরশক্তি’ পেয়ে গেলেন বঙ্গ পেস-জুটি। আগ্রাসনের পারদ চড়তে শুরু করল।

ইডেনে: ফুটবলে পা শামির মেয়ের। ‘কোচ’ ডিন্ডা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ইডেনে: ফুটবলে পা শামির মেয়ের। ‘কোচ’ ডিন্ডা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রাজীব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৬
Share: Save:

ওস্তাদের মার শেষ রাতে। শামি-ডিন্ডার মার শেষ বিকেলে।

বৃহস্পতিবার ইডেনে এটাই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন পরশ ডোগরা, প্রিয়াংশু খান্ডুরি, নিখিল গাংটা-রা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সূর্য তখন প্রায় ডুবো ডুবো। ইডেনে ক্লাব হাউস প্রান্তের সাইট স্ক্রিনের ডান দিকে উদয় হলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

বিকেলের এই ‘সূর্যোদয়’-ই কি কাজে এল? যেন ‘সৌরশক্তি’ পেয়ে গেলেন বঙ্গ পেস-জুটি। আগ্রাসনের পারদ চড়তে শুরু করল। স্টাম্পের পিছনে ঋদ্ধিমান সাহা ‘সুপারম্যান’ রূপে ফিরে এলেন। নিট ফল হিমাচল প্রদেশ ১২৪-২ থেকে ১৫৯-৫। দিনের শেষে বাংলা ১৬৩-৫।

কমে আসা আলোয় মহম্মদ শামি, অশোক ডিন্ডাদের বল ঠিকমতো দেখতেই পাচ্ছিলেন না হিমাচল ব্যাটসম্যানরা। বারবার আম্পায়ারদের অনুরোধ করতে থাকেন, ‘দয়া করে খেলাটা বন্ধ করুন, এই আলোয় আর ওদের সামলাতে পারছি না’। বার তিনেক লাইটো-মিটারে পরীক্ষা করে আম্পায়াররা শেষ পর্যন্ত খেলা শেষ না করলে বঙ্গ পেসারদের আগুন-গোলায় আর ক’জন পুড়ে মরতেন, কে জানে?

আরও পড়ুন: কোহালিদের ম্যাচে পাঁচ কোটির বিমা

সকালে অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির প্রথম শ্রেণির ২৪তম সেঞ্চুরি দলকে চারশোর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার পরে ৪১৯-এ শেষ বাংলা। মনোজ যদি সকালের নায়ক হন, তা হলে বিকেলটা অবশ্যই শামি-ডিন্ডার। দিক বদল করে দিনের শেষ স্পেলে পাঁচ ওভারে ২২ রান দিয়ে দু’উইকেট নেন শামি। ইডেনে মসৃণ আউটফিল্ড আর উইকেটে হাল্কা ঘাস থাকায় রিভার্স সুইং পেতে কালঘাম ছুটছে। তা সত্ত্বেও গতি ও সুইংয়েই কামাল করলেন ভারতীয় পেসার। ডিন্ডার অস্ত্র সঠিক লাইন ও লেংথ। তাঁর শেষ স্পেলটা দেড় ওভারের। তাতে চার রান দিয়ে এক শিকার। তার আগে হাইকোর্টের দিক থেকে একটা সাত ওভারের স্পেলে ২০ রানে এক উইকেট নেন ডিন্ডা। মাঝ দুপুরে ঝিমুনির সেশনটা কাটিয়ে এই সাড়ে তেরো ওভারেই ম্যাচটা নিজেদের দিকে নিয়ে চলে আসেন পেস জুটি।

সেঞ্চুরিতেও মন ভরেনি মনোজের। খেলার শেষে বলছিলেন, ‘‘আরও রান করার ইচ্ছে ছিল। তা হলে দলের রানও বেশি হত।’’ প্রথম সেশনে ৩২ ওভারে মাত্র ৮৭ রান তোলার পরে এমন আফসোস হতেই পারে। তবে দিনের শেষে তাঁর পেস জুটিই যে এই আক্ষেপ ভুলিয়ে দিল, তা স্বীকারে দ্বিধা নেই ক্যাপ্টেনের। বললেন, ‘‘ওরা দুর্দান্ত বোলিং করল। বিশেষ করে শামির শেষ স্পেলটা। ওরা দু’জনই তো ম্যাচে ফেরাল আমাদের।’’

শামি-ডিন্ডা যদি হন বিসমিল্লা-বিলায়েৎ জুটি, তা হলে তাঁদের আল্লাহরাখা অবশ্যই ঋদ্ধিমান সাহা। সারা দিন ধরে বহুবার শরীরকে শূন্যে ভাসিয়ে দেন ভারতীয় টেস্ট দলের কিপার। স্টাম্পের পিছনে ক্যাচ নেন চার বার। ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চিত বাউন্ডারিও বাঁচিয়েছেন বেশ কয়েকবার। শামির আগ্রাসী বোলিং ও ঋদ্ধির ক্ষিপ্র কিপিংয়ের মাঝখানে স্যান্ডুইচ হয়ে ডোগরা-গাংটারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। সপ্তাহ দুয়েক পরে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের কেমন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে, তার একটা ‘ট্রেলার’ দেখিয়ে রাখলেন দু’জনে। হাজারো তন্ত্র-মন্ত্রেও শামি-ঋদ্ধির এই দ্বিমুখী আক্রমণ আটকানো দীনেশ চণ্ডীমলদের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

ঋদ্ধি ইডেন থেকে বেরনোর সময় বললেন, ‘‘বিকেলে মনে হচ্ছিল শামি টেস্টে বোলিং করছে। তাই সে রকম কিপিংও করতে হয়েছে। তবে শামি সব সময়ই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে।’’ দুপুরের সেশনে উইকেটের খরা নিয়ে ঋদ্ধি বলেন, ‘‘ইডেনের উইকেট কবে আর দুপুরে বোলারদের খুশি করেছে?’’ মনোজের মুখেও প্রায় একই কথা।

আড়াইশোর ওপর লিড বাংলার। শুক্রবার প্রথম ঘণ্টায় বিপক্ষকে শেষ করে ফলোঅন করানোর নীল-নকশা ছকেছে বাংলা। অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমাদের বোলাররা তো ভাল বোলিং করছে। ফলোঅন করাতেই পারি।’’ ক্যাপ্টেনের চোখে যে ইনিংসে জিতে সাত পয়েন্টের স্বপ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Himachal Pradesh Crcket ranji trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE