Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
২৮ রানে জয়ী ভারত

নাক্‌ল বলেই বাজিমাত, নতুন কীর্তি ভুবনেশ্বরের

টি-টোয়েন্টিতে নায়ক হয়ে দেখা দিলেন এক ভারতীয় পেসার। যাঁর হাত থেকে বেরনো নতুন এক অস্ত্র— নাক্‌ল বলে ঘায়েল হয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। তিনি— ভুবনেশ্বর কুমার।

২৪ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাঙলেন ভুবনেশ্বর কুমার। রবিবার জোহানেসবার্গে। ছবি: এপি

২৪ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাঙলেন ভুবনেশ্বর কুমার। রবিবার জোহানেসবার্গে। ছবি: এপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

শুরুটা করেছিলেন শিখর ধবন। শেষটা করলেন ভুবনেশ্বর কুমার।

যে ভাবে ওয়ান ডে সিরিজ শেষ করেছিল ভারত, ঠিক সে ভাবেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল বিরাট কোহালির দল। রবিবার জোহানেসবার্গে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সহজেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেলেন কোহালিরা।

তবে ওয়ান ডে সিরিজের সঙ্গে টি-টোয়েন্টির কি তফাত কিছু ছিল না? অবশ্যই ছিল। কোহালি (২০ বলে ২৬) বড় রান পেলেন না! বিশ্ব ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেওয়া ‘কুল-চা’ জুটি ভেঙে গেল এই ম্যাচে। যুজবেন্দ্র চহাল খেললেন, কুলদীপ যাদব বাইরে থাকলেন। কিন্তু সব চেয়ে বড় তফাত হল, স্পিনার নয়, টি-টোয়েন্টিতে নায়ক হয়ে দেখা দিলেন এক ভারতীয় পেসার। যাঁর হাত থেকে বেরনো নতুন এক অস্ত্র— নাক্‌ল বলে ঘায়েল হয়ে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। তিনি— ভুবনেশ্বর কুমার। যিনি ৪ ওভারে ২৪ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরাই হলেন না, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের সেরা বোলিংটাও করলেন। পাশাপাশি তিনিই প্রথম ভারতীয় পেসার, যিনি টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন। প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া চহাল (ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬-২৫) ম্যাচের পরে ভুবির সঙ্গে ছবি দিয়ে টুইট করলেন, ‘দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। ক্লাবে স্বাগত।’

ভুবনেশ্বরের এই নাক্‌ল বলে যেমন বোকা বনেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা, তেমনই মুগ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার দুই প্রাক্তন অধিনায়ক শন পোলক এবং কেপলার ওয়েসেলস। ম্যাচের পরে সেরার পুরস্কার নিয়ে আসা ভুবনেশ্বরকে সামনে পেয়ে পোলক প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার নাক্‌ল বলটা তো খুব কাজে লেগে গেল। তোমার হাতে এটা একটা নতুন অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। কবে থেকে রপ্ত করলে?’’ জবাবে ভুবনেশ্বর বলেন, ‘‘সিম সোজা রেখে এই নাক্‌ল বল করাটা আমি অনেক দিন ধরে প্র্যাক্টিস করছি। বছরখানেক আগে আইপিএলের সময় থেকে শুরু করেছিলাম।’’

কেন এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল এই নাক্‌ল বল? ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ধরা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলের গতির হেরফের। তার ওপর স্লো ডেলিভারি হলেও বল সুইং করছে। এই স্লো-সুইং খেলতেই সমস্যায় পড়ে গেলেন হেনড্রিক্স থেকে ডুমিনি। ভুবনেশ্বর বলছিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট পাওয়াটা সত্যিই একটা দারুণ ব্যাপার। আমরা প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং দেখে নিজেদের গেমপ্ল্যান করেছিলাম। চেষ্টা করেছি, যত বেশি রকম বৈচিত্র আনা যায়। নাক্‌ল বলটা আমি প্রায় এক বছর ধরে অনুশীলন করে যাচ্ছি। এই ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে হাতে বৈচিত্র না থাকলে ব্যাটসম্যানদের থামানো কঠিন হয়ে যায়।’’

দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান— জে জে স্মাটস, রিজা হেনড্রিকস, জে পি ডুমিনি, হেনরিক ক্লাসেন এবং ক্রিস মরিস, সবাই ভুবির শিকার। নতুন বলে ওপেনার স্মাটস আউট হওয়ার পরে বাকিরা কিন্তু ভুবনেশ্বরের গতির হেরফেরের শিকার। একটা সময় তো ক্লাসেন আর মরিসকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে চলে আসেন ভুবি।

ম্যাচের পরে কেপলার ওয়েসেলস বলছিলেন, ‘‘ভুবনেশ্বরের নাক্‌ল বলটা বোঝা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। গতির হেরফেরের সঙ্গে সুইং ওরা সামলাতে পারেনি।’’ সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মুখেও শোনা গিয়েছে ভুবির প্রশংসা। আর ম্যাচের পরে সচিন তেন্ডুলকরের টুইট, ‘টি-টোয়েন্টি সিরিজটা দুর্দান্ত ভাবে শুরু করল ভারত। দারুণ ব্যাট করল শিখর ধবন। মাথা খাটিয়ে বল করে শেষটা করল ভুবনেশ্বর। চালিয়ে যাও। এই পারফরম্যান্সটা করে যেতে হবে।’

ম্যাচ শুরুর আগেই ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। যখন জানা যায়, এ বি ডিভিলিয়ার্স চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন। এর পরের ধাক্কাটা আসে ইনিংসের প্রথম ওভারে। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ডুমিনি। ডেন প্যাটারসন প্রথম ওভারেই দিয়ে বসলেন ১৮ রান। ওখানেই যেন ঠিক হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের রিং টোন। রোহিত শর্মা এ দিন হয়তো মাত্র ৯ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে ধাক্কাটা তিনি দিয়েছিলেন, সেটা থেকে তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

আরও পড়ুন: ভুবনেশ্বরের ৫ উইকেট, ২৮ রানে হার মিলারদের

রোহিত তাড়াতাড়ি ফিরে গেলেন। দীর্ঘ দিন বাদে ভারতীয় দলে ফেরা সুরেশ রায়না প্রতিটা বলেই মারার মেজাজ নিয়ে নেমে ৭ বলে ১৫ রান করলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে ভারত দু’শো রানের গণ্ডি টপকে গেল, তার পিছনে এক জনেরই ব্যাট। ভারতীয় ক্রিকেটের গব্বর (যে নামে শিখর ধবনকে ডেকে থাকেন সতীর্থরা)।

ওয়ান ডে সিরিজে দেখা গিয়েছে, কোহালির পরে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আর যদি কেউ ধারাবাহিক ভাবে রান করে থাকেন, তা হলে তিনি ধবন। ওয়ান ডে-র সেই ফর্মই টি-টোয়েন্টিতে আমদানি করলেন ভারতের এই বাঁ-হাতি ওপেনার। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করে গিয়েছেন। কখনওই বোলারদের জাঁকিয়ে বসতে দেননি। শেষ পর্যন্ত ধবন ৩৯ বলে ৭২ রান করে আউট হলেন। মারলেন দশটা বাউন্ডারি, দু’টো ওভার বাউন্ডারি। স্ট্রাইক রেট ১৮৪.৬১। ধবনের দাপটে ভারত যখন স্কোর বোর্ডে ২০৩-৫ তুলে ফেলে, তখনই বোঝা যাচ্ছিল কাজটা কঠিন হবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। এর পরে ভুবি নামের প্রহেলিকা আর ভারতের দুরন্ত ফিল্ডিংয়ের সামনে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০ ওভারে থেমে গেল ১৭৫-৯।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhuvneshwar Kumar cricket Knuckleball
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE