Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ: বিশ্বজিতের হাতে লাল-হলুদ মশাল

সঞ্জয়, আত্মসম্মানের রংটা কিন্তু লাল-হলুদ

শুক্রবার দুপুর। সাংবাদিক সম্মেলন করতে ইস্টবেঙ্গলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঠিক তখনই বেজে উঠল পকেটের মোবাইল ফোনটা! ফোনের ওপারে লাল-হলুদ সমর্থকের কাতর আবেদন—দাদা, শুনছি আপনি নাকি ইস্টবেঙ্গল কোচ হচ্ছেন। আই লিগে লাজংয়ের কাছে পাঁচ গোলে হারের দগদগে ঘা-টা ঘুমোতে দিচ্ছে না আজও।

শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বিশ্বজিতের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।

শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বিশ্বজিতের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

শুক্রবার দুপুর। সাংবাদিক সম্মেলন করতে ইস্টবেঙ্গলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঠিক তখনই বেজে উঠল পকেটের মোবাইল ফোনটা!

ফোনের ওপারে লাল-হলুদ সমর্থকের কাতর আবেদন—দাদা, শুনছি আপনি নাকি ইস্টবেঙ্গল কোচ হচ্ছেন। আই লিগে লাজংয়ের কাছে পাঁচ গোলে হারের দগদগে ঘা-টা ঘুমোতে দিচ্ছে না আজও।

বিকেলের পর এ রকম ফোন আরও পেয়েছি। আর তা থেকেই প্রথম বার ইস্টবেঙ্গল কোচের হট সিটে বসার প্রত্যাশার চাপটা বুঝতে পারছি। মনে পড়ছে, লাজংয়ের কাছে লাল-হলুদের পাঁচ গোল খাওয়ার বিকেলটাও। সে দিন কলকাতাতেই ছিলাম। ঠাওর করতে পারছি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত হৃদয়ের যন্ত্রণা। এর সঙ্গে গত কয়েক মরসুম ধরে খুব কাছ থেকে আই লিগ ফস্কে যাওয়ার হতাশা! আমার প্রিয় লাল-হলুদ সমর্থকরা একটা কথা মনে রাখবেন, রাতটা কিন্তু সবথেকে বেশি অন্ধকার হয় ভোরের আগেই।

হতাশা, দুঃখ থাকবে। আর তা একমাত্র কাটাতে পারে—সাফল্য। আর সেই সাফল্যের জন্যই ফের নতুন মরসুমে বেরিয়ে পড়তে হবে ট্রফি শিকারে। খেলোয়াড় জীবনে পা ভাঙার পর আমার ফুটবলের আঁতুরঘর সাদার্ন স্পোর্টসের কোচ খোকন বসু মল্লিক বেলুড়মঠে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন স্বামীজি যেটা বলেছিলেন আজ সেটাই বলতে চাই—অতীত মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু তাকাতে হবে সামনে।

ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কোচের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে এসে ট্রেভর মর্গ্যান বা অন্য কোনও কোচ সম্পর্কে কথাই তোলেননি। কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কেউ কেউ মর্গ্যানের সঙ্গে আমাকে লড়িয়ে দিতে মরিয়া। আমি যদিও সব কোচের সম্পর্কেই শ্রদ্ধাশীল। এ লাইসেন্স করার পর ইস্টবেঙ্গল কর্তারা যে আস্থাটা আমার উপর রেখেছেন, মরসুম শেষে তাঁদের যেন মুখ লুকোতে না হয়, লাল-হলুদ কোচের জুতোয় পা গলানোর পর সেটাই আমার অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

ফুটবলার জীবনে যদি চিরিচ মিলোভানের ভারতীয় দলের অধিনায়ক হতে পারি। কোচিং করাতে এসে মোহনবাগানকে দু’বার খাদের কিনারা থেকে অবনমন বাঁচিয়ে ফেরাতে পারি। মহমেডান, ইউনাইটেড স্পোর্টসকে যদি আই লিগের মূল পর্বে তুলতে পারি। তা হলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গা থেকেও পাঁচ গোলের দগদগে ঘা-য়ে সাফল্যের মলম লাগিয়ে দিতে পারবই পারব। তার জন্য মোটিভেশন, ডেডিকেশন আর সততা আমার রয়েছে।

তবে সবার আগে ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা ফেরাতে হবে। গত বার মরসুমের শেষের দিকে দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আনন্দবাজারে তা পড়েছি। এটা ইস্টবেঙ্গলের সংস্কৃতি নয়। টিমটাকে একটা পরিবারের মতো গড়ে তোলাটাই প্রথম কাজ। তার পর চমমনে ম্যাচ ফিট, হারার আগে হারে না, আক্রমণাত্মক ফুটবলটায় রপ্ত এ রকম একটা টিম তৈরি করে ফেলতে হবে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে।

জানি, বড় দলের কোচ মানেই তাকিয়ে থাকতে হয় ডার্বির দিকে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ক্লাবের সঙ্গে টক্করের দিকে। এ বার সেই লড়াইটা আমার পাড়ার ছেলে সঞ্জয় সেনের সঙ্গে। আমি কালীঘাটের। ও চেতলার। দু’জনেরই ফুটবল-গুরু খোকনদা। একসঙ্গে মুঠো-মুঠো দুষ্টুমি, সাফল্যের কত স্মৃতি রয়েছে ওর সঙ্গে। কিন্তু সঞ্জয় তুই জেনে রাখ— মাঠের বাইরে তুই ভাই হতে পারিস। ডার্বির দিন কিন্তু চোখে চোখ রেখে লড়াই হবে।

চুরাশি থেকে চার বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি। সে সময় জীবনদা-পল্টুদারা বলতেন—আত্মসম্মানের রং লাল-হলুদ। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যাতে এ বারও সেই আত্মসম্মান আর জোশ নিয়েই পাড়ায় ঘুরে বেড়াতে পারেন, তা বাড়িয়ে দেওয়া কাজ আমার। আর তার জন্যই কোমর বেঁধে তৈরি হচ্ছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE