প্রতিশ্রুতি: বাংলার নতুন কবাডি প্রতিভা অমরেশ মণ্ডল (একদম বাঁ দিকে)। এ বার বেঙ্গল ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলবেন প্রো কবাডি লিগে।
জেনে গিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর প্রো-কবাডিতে তামিলনাড়ুর টিম ‘তামিল থালাইভাস’-এর অন্যতম মালিক।
স্বপ্নের নায়ক লিটল মাস্টারকে হাতের সামনে পেলে তিনি জানতে চাইবেন, সাফল্যের সরণিতে দীর্ঘদিন হেঁটে বেড়ানোর মন্ত্র। আর জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্সের মালিক অভিষেক বচ্চনের কাছে তাঁর দাবি, স্রেফ একটা সেলফি আর অটোগ্রাফ।
কে তিনি?
অমরেশ মণ্ডল। এ বারের প্রো-কবাডিতে বাংলার দল ‘বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স’-এর লুকনো তাস। ২ অগস্ট প্রো-কবাডি লিগে তেলুগু টাইটান্স-এর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ বেঙ্গল ওয়ারিয়র্সের। কিন্তু বাংলার যোদ্ধাদের কোচ কে কে জগদীশ এখন থেকেই বলে দিচ্ছেন, ‘‘ছেলেটার ফিটনেস আর সাহস একদম দেখার মতো। আমরা এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ নিয়ে নামব। প্রথম ম্যাচ থেকেই এই বাঙালি ছেলেটাকে টিমে রাখতে হবে। অমরেশ ভারতীয় কবাডির ভবিষ্যৎ।’’
আর বনগাঁর ছেলের মেন্টর এশিয়ান গেমস থেকে জোড়া সোনার মালিক ‘অর্জুন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্বজিৎ পালিত বলছেন, ‘‘অমরেশের অনুমান ক্ষমতা, দম দেখে মাঝে-মাঝে নিজেরও অবাক লাগে। যে রকম ‘রেড’, সে রকমই ‘রাইট কভার’-এ দাঁড়িয়ে রক্ষণটাও ভাল সামাল দেয়। প্রো-কবাডিতে প্রথম বার নামছে। দেখবেন টুর্নামেন্ট শেষ হলে ওর পিছনে অনেকে দৌড়বে।’’
আরও পড়ুন:
কপিল-ঝড় মনে করাল ‘হারিকেন’ হরমনপ্রীতের বিধ্বংসী ইনিংস
আর বনগাঁর ট্যাংরা কলোনির ছেলে টালিগঞ্জ ক্লাবে অনুশীলনের ফাঁকে তাঁর জীবনের দুই কবাডি কোচের দেওয়া এই শংসাপত্রের কথা জেনে অপ্রস্তুত। ফোনে আমতা আমতা করে বলেন, ‘‘দুই স্যার-ই খুব স্নেহ করেন। তাই বলেছেন। এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে আমাকে।’’
পঞ্জাবের সংসারপুর যেমন ভারতীয় হকির আঁতুরঘর, ঠিক তেমনই এই মুহূর্তে বঙ্গ কবাডির নার্সারি বনগাঁয়। সেখান থেকেই স্বপ্নের উত্থান এই বঙ্গসন্তানের। ট্যাংরা কলোনির দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘর থেকে প্রো-কবাডির ফ্লোরে জায়গা করে নিতে অমরেশকে টপকাতে হয়েছে একের পর এক হার্ডল। যার কোনওটির নাম খিদে। কোনওটার নাম অনটন। কোনওটার নাম অভাব।
অমরেশের কথায়, ‘‘জন্মের পর বাবার মুখ দেখিনি। দাদু-দিদার কাছে মানুষ হয়েছি। আমাকে বড় করার পাশাপাশি সংসারে ভাত জোটাতে ওদের সঙ্গে মাকেও খাটতে হয়েছে দিন-রাত। একটু বড় হতে দাদুর সঙ্গে আমিও মাঠে ধান রুইতাম।’’
‘বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স’-এর বাঙালি সদস্য বলে চলেন, ‘‘খেলাধুলা করার বিলাসিতা দেখাতে পারতাম না, যদি না আমার দুই মাসি আমাকে খেলার সরঞ্জাম কিনে দিতেন। ওদের সকলের জন্যই আজ আমি প্রো-কবাডির মঞ্চে আসতে পেরেছি।’’
অমরেশের উত্থানটাও স্বপ্নের মতোই। গত বছরেই প্রো-কবাডি লিগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গোটা দেশে কবাডিকে ছড়িয়ে দিতে ১৮-২০ বছর বয়সি ভারতীয় খেলোয়াড় তুলে আনতে হবে। প্রতিটি দলেই একজন নবীন প্রতিভা থাকবে। সেই প্রতিভা খুঁজতেই বিশ্বজিৎ পালিত গিয়েছিলেন বনগাঁর ট্যাংরা গ্রামে। সেখানেই মন্টুকুমার পাল এবং জ্যোতিষ বিশ্বাসের আখড়ায় অমরেশকে প্রথম বার দেখেন বাংলার এই জনপ্রিয় প্রাক্তন কবাডি খেলোয়াড়। তিনিই তাঁর ক্লাব ‘নতুন বাজার অশোক সংঘ’-তে তুলে আনেন অমরেশকে। তার পর সেখানে অনুশীলন করিয়েই অমরেশকে পাঠানো হয় প্রো-কবাডির রাজ্য স্তরের বাছাই পর্বে। সেখানে সসম্মান উত্তীর্ণ হওয়ার পর গুজরাতে এক মাসের নির্বাচন শিবির। তার পর মুম্বইয়ে এক সপ্তাহের চূড়ান্ত বাছাই পর্ব। যেখানে ১২০ জনের মধ্য থেকে বারোটি টিমের জন্য ৬০ জনকে বাছা হয়। যার প্রথম পাঁচে ছিলেন বাংলার অমরেশ। প্রথমে দাবাং দিল্লির প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ভূমিপুত্রকে দলে নিতে প্রাণপণ ঝাঁপিয়ে অমরেশকে তুলে নেয় ‘বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স’।
সে দিনের কথা শোনাতে গিয়ে অমরেশ বলে ফেলেন, ‘‘বনগাঁ স্টেশন থেকে আমার বাড়ি সাইকেলে প্রায় পনেরো কিলোমিটার। অনুশীলন সেরে বাড়ি ফিরতে রোজ রাত বারোটা-সাড়ে বারোটা বেজে যেত। পরদিন সকাল সাড়ে আটটায় ফের বেরিয়ে পড়তাম বাড়ি থেকে কলকাতায় অনুশীলনের জন্য।’’
প্রো-কবাডিতে লক্ষ্য কী? জানতে চাইলে অমরেশ বলছেন, ‘‘আইপিএল, আইএসএলে কলকাতা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রো-কবাডিতে আমরা চ্যাম্পিয়ন হইনি। এ বার পঞ্চম পর্বে তার জন্যই ঝাঁপাবে আমাদের দল।’’
অবশ্য দলকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য অমরেশের মনে অন্য একটি কারণও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত সেরা হলে আমার পরিবারে কিছুটা আর্থিক স্বস্তি আসবে। এই প্রো-কবাডিতে খেলেই তো নীতিন ভাই (নীতিন তোমার) ৯৩ লক্ষ টাকা দাম পেয়েছেন। আমাকেও ভাল খেলে দেশের সেরা খেলোয়াড়দের দলে ঢুকতে হবে। মায়ের চোখের জল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy