Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শুধু বুমরার নো বলে হারেনি ভারত

এখান থেকেই কি ক্রিকেট দুনিয়ায় পাকিস্তান ফের মাথা তুলে দাঁড়াবে? আশা করি তা-ই হবে। ক্রিকেটের স্বার্থে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের মাথা উঁচু করে টিকে থাকা দরকার।

কাঠগড়ায়: ফাইনালে বুমরার সেই ‘নো’ বল। ফাইল চিত্র

কাঠগড়ায়: ফাইনালে বুমরার সেই ‘নো’ বল। ফাইল চিত্র

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০৪:২৫
Share: Save:

যোগ্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই ট্রফি জিতল পাকিস্তান। শুধু ফাইনালেই ওরা ভাল খেলেছে বলে যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তা মোটেই না। শুধু ভারতকেই হারায়নি ওরা, ফাইনালে ওঠার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডকেও হারিয়েছে। চাপের মুখে ওরা একবার ভাল খেলেনি, চারবারই ভাল খেলেছে। তাই সরফরাজ আমেদের দলের ছেলেদের এই সম্মানটা প্রাপ্যই ছিল। শুরুটাই ওদের বড় হার দিয়ে শুরু হয়েছিল। সেই হার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বেশ কঠিন। এর জন্য কঠিন মানসিকতার প্রয়োজন। এই সাফল্যই প্রমাণ করল, ওদের সেটা আছে।

এখান থেকেই কি ক্রিকেট দুনিয়ায় পাকিস্তান ফের মাথা তুলে দাঁড়াবে? আশা করি তা-ই হবে। ক্রিকেটের স্বার্থে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের মাথা উঁচু করে টিকে থাকা দরকার। সত্যি বলতে ক্রিকেটবিশ্বে মাত্র তি-চারটে ভাল দল আছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু অন্য দলগুলোরও উন্নতি দরকার। এখানেই হয়তো তার শুরু।

ফাইনালে হারের পর ভারতকে নিয়ে অনেক নিন্দা-মন্দ শুরু হয়ে গিয়েছে দেখছি। এটাই হয়। কিন্তু আমার তাতে সায় নেই। ফাইনালে যারা ভাল খেলেছে, তাদের কাছেই হেরেছে বিরাটরা। এটাই তো হওয়ার কথা। যশপ্রীত বুমরার নো বল নিয়েও কম আলোচনা হচ্ছে না। হ্যাঁ, এতে ভারতের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এটাই ওদের হারের একমাত্র বা প্রধান কারণ নয়।

দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় ইনিংসের মাঝের ওভারগুলো। সারা টুর্নামেন্টেই ওরা বেশির ভাগ উইকেটই নিয়েছে মাঝের ওভারগুলোতে। আর সে দিন ফাইনালে ভারতের দুই স্পিনারকে যে রকম দাপট নিয়ে সামলাল ফখর জমান ও আজহার আলি, তা অসাধারণ। অশ্বিন, জাডেজাকে মাথা তুলতেই দেয়নি ওরা। এই দু’জনের তৈরি ভিতের উপরই রানের ইমারত গড়ে হাফিজ আর ওদের লোয়ার অর্ডার। ফখর ভয়ডরহীন এক ব্যাটসম্যান। যত সময় যাবে, ওর টেকনিক তত ভাল হবে।

আরও পড়ুন: কোহালি চান না, তাই সরেই দাঁড়ালেন কুম্বলে

ফাইনালে ৩৪০ রান তাড়া করে জেতা কখনওই সোজা নয়। আর চিরাচরিত পাকিস্তানি সুইং-সিম বিরাটদের কাজটা আরও কঠিন করে দেয়। আর আমির যেখানে ফর্মে, টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফেরানোর দায়িত্ব যখন একাই তুলে নেয়, তখন তো সেটা আরওই অসম্ভব।

একটা প্রশ্ন অনেককেই করতে শুনেছি। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বিরাট কি ঠিক করেছে? আমার মনে হয় ঠিকই করেছে। ক্যাপ্টেন তার দলের শক্তি অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় দল যে রান তাড়া করতেই পছন্দ করে, তা কারও অজানা নয়। দুই এশীয় দেশকে খেতাবের জন্য লড়াই করতে দেখে বেশ ভাল লাগছিল। আর যে দল নিয়ে প্রত্যাশা ছিল কম, তারাই জিতল। সত্যি ক্রিকেট কি অনিশ্চয়তার খেলা!

পাকিস্তান বরাবরই ক্রিকেট বিশ্বে নতুন প্রতিভা আনার ক্ষেত্রে এগিয়ে। এমন প্রতিভা, যে একাই একটা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। অসাধ্য সাধন করে সবার নজর কেড়ে নেওয়ার সুনাম ওদের আছে। ওদের ব্যাপারে আগাম কিছু বলাটাই মুশকিল। আর এটাই ওদের ক্রিকেটের রোমাঞ্চ বলতে পারেন। রবিবারও সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী নস্যাৎ করে দিয়ে ওরা খেতাবটা জিতে নিল।

পাকিস্তানের এই দলে একাধিক প্রতিভা রয়েছে, যাদের তৈরি করা দরকার। যেমন হাসান আলি। ও স্বাভাবিক দক্ষতার এক বিশেষ প্রতিভা। ওদের নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ইনজামাম উল হক নিশ্চয়ই এইসব প্রতিভাদের যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নেবে। এই সাফল্য থেকেই সেই তাগিদ আসবে নিশ্চয়ই। ওরা বহুকাল ঘরের মাঠে সিরিজ খেলেনি। দেশের মাঠে প্রতিভা খুঁজে পাওয়া তাই কঠিন ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE