কুলদীপ যাদব।— ফাইল চিত্র।
ছোটখাটো চেহারার ২২ বছরের তরুণটি যখন ইডেনের ক্লাব হাউস থেকে বেরিয়ে টিম বাসে উঠছিলেন, তখন অপেক্ষমান ক্রিকেটপ্রেমী জনতার মধ্যে থেকে মন্তব্য উড়ে এল, ‘আরে ও কুলদীপ, ওয়ার্নার কো ফির দে ঘুমাকে’।
অস্ট্রেলীয় ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেটের যে ‘নিয়মিত গ্রাহক’ হয়ে উঠেছেন ভারতীয় দলের ‘চায়নাম্যান’ কুলদীপ যাদব। এটা ক্রিকেটপ্রেমীদের এখন মুখস্থ। সে জন্যই বোধহয় ওই মন্তব্য।
ধর্মশালায় কুলদীপের অভিষেক টেস্ট থেকেই এই অম্লমধুর সম্পর্কের শুরু। কানপুরের তরুণের ‘চিনা’ অস্ত্রে বিধ্বংসী ওয়ার্নার হার মেনেছেন একাধিকবার। আইপিএলে লিগ পর্যায়ে যে দু’বার তাঁদের দেখা হয়েছে, দু’বারই কুলদীপের শিকার হয়েছেন ওয়ার্নার। ইডেনে লং অফে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আর উপ্পলে ঝোড়ো সেঞ্চুরি হাঁকানোর পরে পুরোপুরি সেট হয়েও কভারে গৌতম গম্ভীরের হাতে বল তুলে দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। এক সময় যেমন রিকি পন্টিং হরভজন সিংহের প্রিয় ‘খাদ্য’ হয়ে উঠেছিলেন। শেন ওয়ার্ন হয়ে উঠেছিলেন ড্যারেল কুলিনানের ‘যম’, অনেকটা তেমনই এখন এই দু’জনের সম্পর্ক।
রবিবার চেন্নাইয়ে চলতি সিরিজের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচেও কুলদীপের ঘূর্ণিতে ধোনির গ্লাভসে ধরা পড়ে যান ওয়ার্নার। আট বছরে দুশোর বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ৩০ বছর বয়সি অজি ব্যাটসম্যানকে যে ২২ বছরের স্পিনারটি বেশ প্যাঁচে ফেলেছেন, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একে নেহাত ব্যাড প্যাচ বলে উড়িয়ে দিতে পারবেন না বোধহয়। কুলদীপের বিরুদ্ধে স্যর ডন ব্র্যাডম্যান, স্টিভ ওয়র রাজ্য থেকে উঠে আসা ওয়ার্নারের ব্যাটিং দেখেই বোঝা যায়, তিনি এই ভারতীয় তরুণের বিরুদ্ধে মোটেই স্বচ্ছন্দে নেই।
বৃহস্পতিবার ইডেনেও কি এই দু’জনের ‘ডুয়েল’ দেখা যাবে?
এর উত্তর তো সময়েরই জানা। কিন্তু ওয়ার্নারকে যে চাপে ফেলে দিয়েছেন তিনি, তা কুলদীপ বেশ ভালই বুঝে নিয়েছেন। বুধবার ইডেনে সাংবাদিকদের জানিয়েও দিলেন তাঁর সেই মনের কথা। যখন বলছিলেন, ‘‘আমার মুখোমুখি হলে ওয়ার্নার যেন নিজেই নিজেকে চাপে ফেলে দেয়’’, তখন তাঁকে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছিল। বলে চললেন, ‘‘আমিই ওকে আউট করব, এটা ভেবেই বোধহয় চাপে পড়ে যায়। তবে আমি ওকে বল করার সময় তেমন চাপ নিই না। বরং উপভোগ করি। আত্মবিশ্বাসী থাকি। ওকে কী করে আউট করতে হয়, তা যে এখন বুঝে গিয়েছি। ওর বিরুদ্ধে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে আমার। সেটাই কাজে লেগে যায়। আশা করি, সিরিজের বাকি চার ম্যাচেও ওকে আউট করতে পারব।’’ ওয়ার্নার-বধের ছক জানা হয়ে গেলেও এ বার কুলদীপের পরবর্তী ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ বোধহয় স্টিভ স্মিথ। তাঁর কথায় অন্তত তেমনই ইঙ্গিত। অস্ট্রেলিয়া দলের সবচেয়ে কঠিন ধাঁধাটার সমাধান করার চেষ্টা করছেন বিরাট কোহালির সংসারের এই ‘কুল-দীপক’। স্মিথ প্রসঙ্গ উঠতে বললেন, ‘‘স্মিথকে বোলিং করা কঠিন। টেস্ট সিরিজে ও আমাদের বোলিং দারুণ ভাবে বুঝে নিয়ে ব্যাট করেছিল। কখন কোথায় স্ট্রাইক রোটেট করতে হবে, সে ধারণাটাও ওর পরিস্কার। ও লেগ স্টাম্পের বলই বেশি পছন্দ করে আর বড় শট ও খুচরো রান, দুটোই সমান দক্ষতায় নিতে পারে। সে জন্যই ওকে বল করাটা সোজা নয়।’’
দুই রিস্ট স্পিনার একই সঙ্গে দলে যে দ্রুত শিকার তুলতে, তা জানিয়ে কুলদীপ বলেন, ‘‘দু’জন আক্রমণাত্মক স্পিনার থাকলে বিপক্ষের উইকেট দ্রুত ফেলা যায়। আসলে বাঁহাতি স্পিনারদের বলে বেশি বৈচিত্র থাকে না বলে ব্যাটসম্যানরা ঝুঁকি নেয় না। বরং রিস্ট স্পিনারদের ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর ক্ষমতা বেশি। আর দু’জন থাকলে তো কথাই নেই।’’
তিনি যেমন দিনের পর দিন বোকা বানিয়ে যাচ্ছেন পোড় খাওয়া ডেভিড ওয়ার্নারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy