Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

লোবোর গোলে ফের খেতাবের দৌড়ে ইস্টবেঙ্গল

১৪ বছর পরে ইস্টবেঙ্গল আই লিগ পাবে কী না তা বলার সময় হয়নি। আরও চারটি ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। দুটি ঘরের মাঠে, দুটি বাইরের মাঠে।

উল্লাস: দলের জয়সূচক গোলের পরে সমর্থকদের সামনে উচ্ছ্বাস ইস্টবেঙ্গলের কেভিন লোবোদের। মঙ্গলবার পঞ্চকুল্যায়। নিজস্ব চিত্র

উল্লাস: দলের জয়সূচক গোলের পরে সমর্থকদের সামনে উচ্ছ্বাস ইস্টবেঙ্গলের কেভিন লোবোদের। মঙ্গলবার পঞ্চকুল্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৩
Share: Save:

মিনার্ভা পঞ্জাব ০ : ইস্টবেঙ্গল ১

খেতাব যুদ্ধে ফিরল লাল-হলুদ।

আল আমনার গোড়ালির পিছন দিয়ে বাড়ানো বল পেয়ে প্রায় পঁচিশ গজের গোলার মতো শটে দুর্দান্ত গোলটি করেন কেভিন লোবো। দ্বিতীয়ার্ধের তখন ষাট মিনিট। আই লিগ করা লোবোর এই গোলেই শীর্ষে থাকা মিনার্ভার মাঠে তাদের হারিয়ে হঠাৎ-ই খালিদ জামিলের টিমে বসন্তের পূর্বাভাস।

১৪ বছর পরে ইস্টবেঙ্গল আই লিগ পাবে কী না তা বলার সময় হয়নি। আরও চারটি ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। দুটি ঘরের মাঠে, দুটি বাইরের মাঠে। সব ম্যাচ জিতলেই হবে না। তাকিয়ে থাকতে হবে পঞ্জাবের টিমের দিকে। কাজটা কঠিন সন্দেহ নেই, কারণ যে টিমটার সঙ্গে ট্রফি জেতার লড়াই, সেই মিনার্ভার সঙ্গে এখনও তিন পয়েন্টের তফাত রয়েছে কাতসুমিদের। সে জন্যই ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক অর্ণব মন্ডল ম্যাচের পর পঞ্চকুল্লা থেকে ফোনে বললেন, ‘‘এই ম্যাচটা না জিতলে তো ছিটকেই যেতাম। সেটা আটকানো গেছে। বলতে পারেন খেতাবের লড়াইতে ফেরার অক্সিজেন পেলাম।’’ আর টিমের ম্যানেজার ও পরামর্শদাতা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যর সতর্ক মন্তব্য, ‘‘এখনও তো লিগ শীর্ষে পৌঁছতে পারিনি। তা ছাড়া আমরা যদি সব ম্যাচ জিতি তা হলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারব না। মিনার্ভা পয়েন্ট নষ্ট না করলে সে ক্ষেত্রে কোনও লাভ হবে না। তা হলে আর এগোলাম কোথায়?’’

ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ দেওয়া কোচ এই জয়ের পর উচ্ছ্বাসে ভাসবেন না স্বাভাবিক। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ম্যাচের আগের দিন অর্থাৎ সোমবার হোটেলের ছাদে অনুশীলন করতে হয়েছিল আল আমনাদের। জঘন্য মাঠে বলও ঠিক মতো গড়াচ্ছিল না। সে সব বাঁধা কাটিয়ে যেভাবে জিতল খালিদের টিম, তাঁকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এবং তারা যে একটু হলেও চাপ মুক্ত হয়েছেন সেটা ধরা পড়ে যায় ম্যাচের পর। যখন দেখা যায় আমনা, এদুয়োর্দো ফেরিরা, অর্ণব মণ্ডলরা মাঠে মাথা ঠুকে নমস্কার করতে। লাল-হলুদ পতাকা এবং ব্যানার নিয়ে কলকাতা থেকে গিয়েছিলেন এক দল ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাদের হাত থেকে পতাকা নিয়ে কিপার উবেইদকে দেখা যায় দৌড়তে।

কিন্তু যে চেঞ্চো গেলসন, উইলিয়াম ওকোপুদের সাম্ভব্য চ্যাম্পিয়ন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল, তাদের কোন জাদুকাঠিতে পর্যুদস্ত করল ইস্টবেঙ্গল। দুটো কারণ উঠে আসছে এক) চোট সারিয়ে টিমে আল আমনার ফেরাটা বড় ফ্যাক্টর হয়েছে। কাতসুমি আটকে গেলেও তাই কখনও মাঝমাঠ হাতছাড়া হয়নি ইস্টবেঙ্গলের। আমনাই এ দিন পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দুই) টিমের মধ্যে একাত্মতা। প্রতিটি বলের জন্য লড়াইয়ের মরিয়া তাগিদ চোখে পড়েছে। যা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল না।

নানা কুসংস্কারে আছন্ন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদের ড্রেসিংরুমে ছিল ফুটবলারদের নানা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সেটা খানিকটা বদলেছে এখন, মানছেন সবাই। টিম সূত্রের খবর, সেটা হয়েছে মনোরঞ্জনের টোটকাতেই। এ দিন সকালেও প্রতিটি ফুটবলারের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেছেন ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে। ‘‘আমি বারবার সবাইকে বলেছি একসঙ্গে ঝাঁপাতে হবে। প্রতিটি বলের জন্য যেতে হবে। সেটা করেছে সবাই। এরকম খেললে বাকি ম্যাচগুলো জেতা যেতেই পারে।’’ বলছিলেন মনোরঞ্জন।

লাল-হলুদের অঙ্ক

• মিনার্ভা পঞ্জাব এবং ইস্টবেঙ্গলের চারটি করে ম্যাচ বাকি। দু’দলই যদি সব ম্যাচ জেতে তা হলে মিনার্ভা চ্যাম্পিয়ন।

• মিনার্ভা তিনটি ম্যাচ জিতল, একটি হারল। ইস্টবেঙ্গল সব ম্যাচ জিতল। হেড টু হেডে ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন।

• মিনার্ভা তিনটি ম্যাচ জিতল একটি ড্র করল। ইস্টবেঙ্গল সে ক্ষেত্রে সব ম্যাচ জিতলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না।

• মিনার্ভা ও ইস্টবেঙ্গল যদি বাকি থাকা ম্যাচের দুটি হারে এবং নেরোকা যদি বাকি তিনটি ম্যাচ জেতে তা হলে মণিপুরের দলটি চ্যাম্পিয়ন হবে।

মিনার্ভা পঞ্জাবের ম্যাচ বাকি

বনাম গোকুলম (২০ ফেব্রুয়ারি), বনাম আইজল (২৬ ফেব্রুয়ারি), বনাম চেন্নাই (২ মার্চ), বনাম চার্চিল ব্রাদার্স (৭ মার্চ)

নেরোকার ম্যাচ বাকি

বনাম চার্চিল ব্রাদার্স (আজ বুধবার), বনাম মোহনবাগান (১৮ ফেব্রুয়ারি), বনাম ইস্টবেঙ্গল (২৭ ফেব্রুয়ারি)

ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ বাকি

বনাম গোকুলম (১৭ ফেব্রুয়ারি), বনাম চেন্নাই (২৪ ফেব্রুয়ারি), বনাম নেরোকা (২৭ ফেব্রুয়ারি), বনাম শিলং লাজং (৭ মার্চ)

ইস্টবেঙ্গল জিতলেও তারা যে এক তরফা খেলেছে তা নয়। মিনার্ভার সেরা স্কোরার ভূটানের চেঞ্চো একাই ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় দু’বার পেয়ে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কিপারকে। কেরলের ছেলেটি তা রুখে দেন দুর্দান্ত তৎপরতায়। ইস্টবেঙ্গলের ইয়ামি লংভোও শুরুতেই একা পেয়ে গিয়েছিলেন মিনার্ভা কিপার রক্ষিত ডাগারকে। ডাগার পা দিয়ে তা আটকে দেন।

পুরো ম্যাচে মজার দুটি ঘটনা ঘটল। লংভো গোল নষ্টের পর তাঁকে তুলে নিলেন খালিদ। আর গোল হজমের পর মিনার্ভা কিপারকে ডাগারকে রিজার্ভ বেঞ্চে পাঠালেন তাদের কোচ খগেন সিংহ। আজ বুধবার কোঝিকোড় যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। তাদের পরের ম্যাচ গোকুলমের সঙ্গে শনিবার।

ইস্টবেঙ্গল: উবেইদ সি কে, লালরামচুলোভা, এদুয়ার্দো ফেরিরা, অর্ণব মণ্ডল, সালামরঞ্জন সিংহ, কেভিন লোবো (মহম্মদ রফিক), আল আমনা, ইউসা কাতসুমি, ইয়ামি লংভো (আনসুমানা ক্রোমা), ডুডু ওমেগবেমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE