দুই কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী ও খালিদ জামিল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
এই একটা ডার্বির উপর নির্ভর করছে দুই কোচের ভাগ্য। অনেক ওঠা-পড়ার মধ্যেই ডার্বির আগের শেষ অনুশীলন সেরে ফেলেছে দুই দল। মোহনবাগানের মুখ থমথমে হলেও, ইস্টবেঙ্গলে তেমনটা দেখা গেল না। বরং কর্তাদের বাড়বাড়ন্তই লাল-হলুদে ছাপিয়ে গেল অনেক কিছুকে।
সমর্থকদের রেখে বের করে দেওয়া হল সাংবাদিকদের। অনুশীলন পুরো দেখতে দেওয়া হল, কিন্তু অনুশীলন শেষে কথা বলার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল। এখানেই শেষ নয়, কথা বলার জন্য ভিতরে ডেকে নেওয়া হলেও রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হল টানা ঘণ্টাখানেক। তার পর এলেন কাটসুমি। অন্য দিকে, মোহনবাগানে সাংবাদিকদের থেকে বার বার আড়াল করার চেষ্টা করা হল সনিকেও। এটাই হল আজ দুই ক্লাবের চেহারা।
যদিও আই লিগের শেষ ডার্বির আগে দুই দলকে তাতাতে উপস্থিত ছিলেন অনেক সমর্থক। কেউ গানে গানে, কেউ স্লোগানে স্লোগানে বুঝিয়ে গেলেন পাশে আছেন তাঁরা। তাঁরা তো আছেন, ছিলেন, থাকবেন। কিন্তু এই ডার্বির উপর নির্ভর করছে দুই কোচেরই ভাগ্য। মোহনবাগানকে দীর্ঘ দিন পর আই লিগ দেওয়া কোচ সঞ্জয় সেন এই আই লিগের প্রথম ডার্বিও জিতে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর তিনটি ড্র আর একটা হারেই সরে যেতে হল সবুজ-মেরুনের সফল কোচকে।
আরও পড়ুন
‘মাস্ট উইন ম্যাচ’ বলছেন কাটসুমি
ঘর সামলানোয় জোর দিচ্ছে চোট জর্জরিত মোহনবাগান
দায়িত্ব উঠল সহকারি কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর কাঁধে। কিন্তু তাঁরও ভাগ্য নিশ্চিত নয়। তিনি জানেন না ডার্বির পর তাঁর ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে। হারলে যে সরতে হবে সেটা নিশ্চিত। না হারলেও তাঁর মাথায় বসিয়ে দেওয়া হতে পারে কোনও বিদেশিকে। কে বলতে পারেন সেটা ওয়েস্টউড নন।
অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের নানান সমস্যায় জর্জরিত ক্লাব। সব থেকে বেশি সমস্যা তাঁর কুসংস্কার নিয়ে। সঙ্গে একগুয়েমি। পছন্দের প্লেয়ারকে নিয়মিত খেলিয়ে যাওয়া। প্রয়োজনে পরিবর্তন না করা। একটা সময় দীর্ঘ দিন বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডলকে। পরে যদিও ক্লাবের চাপে তাঁকে দলে নিতে বাধ্য হন। তার সঙ্গে জুড়তে হবে তাঁর ব্যবহার। আই লিগের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েও সাফল্য ধরে রাখতে না পারা। শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটো জিতলেও তিনটি ড্র ইস্টবেঙ্গলকে নামিয়ে দিয়েছে লিগ তালিকার তিন নম্বরে। মোহনবাগান রয়েছে ছ’য়ে। ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট ১৯ ও মোহনবাগান রয়েছে ১৩ পয়েন্টে।
এখনও পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের ১০ ম্যাচে পাঁচটি জয়, চারটি ড্র ও এক হারের মুখ দেখতে হয়েছে। মোহনবাগান সেখান নয় ম্যাচে তিনটি জয়, চারটি ড্র ও দু’টি হার নিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ইস্টবেঙ্গলকে যে দু’ক্লাব ছাপিয়ে গিয়েছে তারা ভারতীয় ফুটবলে নবাগত। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে জোর ধাক্কা খেয়েছে ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্ন। পিছনেই রয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন আইজল এফসিও। যাদের সঙ্গে শেষ ম্যাচ ড্র করেই থামতে হয়েছে।
ইস্টবেঙ্গলের এই মুহূর্তের সব থেকে সমস্যা তাঁদের গোলকিপার। লুই ব্যারেটোর উপর আর ভরসা কার যাচ্ছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে নতুন গোলকিপারের খোঁজ করছে ক্লাব এমনটাও খবর নেই। চার্লসকে বিদায় দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ডুডুকে। কিন্তু তিনি কী অবস্থায় রয়েছেন সেটাও কারও জানা নেই।
অন্য দিকে, মোহনবাগানের ডামাডোল চলছেই। কোচ বিদায় নিয়েছে। বিদায় নিয়েছেন ক্রোমা। অনেক ফুটবলারের উপরই ক্ষুব্ধ ক্লাব। ফল আসছে না। আর ডার্বি হারলে সেই সবের দায় নিতেই হবে কোচকে। যে খবর ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে দুই কোচের কাছে। তাঁরাও প্রস্তুত। ঘনিষ্ঠমহলে এই মন্তব্যও করেছেন তাঁরা। ফল দিতে না পারলে এক দিন সরে যেতেই হয়। জানেন দুই কোচই। বোঝেনও। কিন্তু, সবটাও যে তাঁদের হাতে থাকে না। আসলে সেই কোচই সফল, যার টিম সেরা।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ
তথ্য: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy