রবিবার তিনিই নায়ক মোহনবাগানে। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক
রবিবার দুপুরে গল্ফগ্রিনের বাড়িতে বসে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বি ম্যাচটা দেখছিলাম। খেলা দেখে ফের বুঝলাম, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের কোচের আসনে এই দুই বড় দলে খেলা ভূমিপুত্ররাই সব সময় এগিয়ে ছিল, আছে এবং থাকবেও।
ম্যাচটা মোহনবাগান জিতে গেল একমাত্র তাদের কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর ইতিবাচক মনোভাবের জন্য। যদিও ওকে কর্তারাও চূড়ান্ত সহযোগিতা করেছে। দলের প্রধান অস্ত্র সনি নর্দে নেই। এই অবস্থায় কী ভাবে ম্যাচ জিততে হবে, তার জন্য শঙ্করলাল কিন্তু ফুটবলারদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বড় ম্যাচের ট্যাকটিক্স, স্ট্র্যাটেজি সাজিয়েছিল। এটা ও করতে পেরেছে, বড় দলের ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় হিসেবে থাকার অভিজ্ঞতার জন্যই।
খালিদ জামিলের একে ফুটবলার হিসেবে বড় দলের হয়ে ডার্বি ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তার উপর যারা ওকে এই বুদ্ধিগুলো দিতে পারত সেই ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য-দের কোনও কথা শোনেনি। ওর যে সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরী, যে কি না বড় দলে খেলেছে, ডার্বি ম্যাচে গোল করেছে, ইদানিং ঘরোয়া ফুটবলেও ভাল কোচিং করাচ্ছে, তাকে ও রিজার্ভ বেঞ্চেই রাখে না। টিম মিটিংয়েও ঢুকতে দেয় না। তার পরেও ইস্টবেঙ্গল জিতবে এটা ভাবাই কঠিন।
তাই যে ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হইহই করে জিতে ফেরার কথা ছিল, সেই ম্যাচ অর্ণবরা হারল ওই খালিদের দল গঠনের ব্যর্থতা আর কোচ হিসেবে দূরদৃষ্টি এবং সৃষ্টিশীলতার অভাবে।
সপ্তাহখানেক আগে ইস্টবেঙ্গলের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। সেখানেই চোখে পড়েছিল, এরিয়াল বলে ওদের ডিফেন্ডাররা নড়বড় করছে। উইং প্লে ঠিকঠাক হচ্ছে না। বিপক্ষ ফরোয়ার্ড বল ধরে ইস্টবেঙ্গল গোলের দিকে এগোলে ডিফেন্ডাররা তাকে ট্যাকল না করে পিছোচ্ছে। সঙ্গে সেট পিস থেকে গোল খাওয়ার বদ রোগ।
বড় ম্যাচেও তা শোধরায়নি। গত ডার্বিতেও কর্নার থেকেই গোল হজম করেছিল ইস্টবেঙ্গল। এ দিনের দ্বিতীয় গোলও কিন্তু সেই কর্নার থেকেই। ডিকার প্রথম গোলটার সময় আক্রম অবলীলায় নিখিল কদমের বক্সে ভাসিয়ে দেওয়া বলটা ডিকাকে নামিয়ে দিল। অর্ণব, এদুয়ার্দো-রা তখন বলের বদলে ফুটবলার দেখছে। গোটা ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার-রা না করল ঠিকঠাক ট্যাকল, না ‘ডাবল কভারিং’। হেড করতে ওঠার সময়জ্ঞানও নেই। তা হলে কোচ এই ক’দিন কী করল অনুশীলনে। মোহনবাগান ঠিক এই জায়গাতেই নিশানা বানিয়ে টেক্কা দিয়ে গেল।
অনেকে বলবেন, আমনা শুরুতেই চোট পেয়ে উঠে যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে মোহনবাগানের। আমি মানছি না। খেলতে গিয়ে সেরা ফুটবলারের চোট আসতেই পারে। বিপক্ষও শুরুতে এগিয়ে গিয়ে চাপে ফেলতেও পারে। এখানেই তো কোচকে দরকার।
কর্কশ সত্যটা হল, এই ইস্টবেঙ্গল কোচ ফুটবল পরিবর্তনটাই বোঝে না। আমনা উঠে আসছে। এই সময় বাজি আর্মান্দ-কে নামিয়ে রক্ষণাত্মক হওয়ার অর্থ বিপক্ষকে বুঝতে দেওয়া আমি চাপে পড়ে গিয়েছি। এই সময় দরকার ছিল কেভিন লোবোর মতো পাসারকে এনে মোহনবাগানকে পাল্টা চাপে রাখা। আর রফিককে কেন উইংয়ে রেখে মোহনবাগান রক্ষণে চাপ দিল না ইস্টবেঙ্গল? প্রকাশ সরকারকে যখন ইস্টবেঙ্গল কোচ তুলে নিচ্ছে, তখনও লোবোকে নামানো যেত। খালিদ বদলে নামাল সুরাবুদ্দিনকে। কে ওকে বোঝাবে, সুরাবুদ্দিনের চেয়েও মোহনবাগানকে চাপে ফেলতে মোক্ষম অস্ত্র লোবো। উইলিস প্লাজা-র হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট। পঁচাত্তর মিনিটের পর ও নড়তে পারছিল না। পুরো দাঁড়িয়ে গেল। ফলে দশ জনের ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে শেষ দিকে ছেলেখেলা করছিল নিখিল কদমরা। বরং লোবোকে শুরুতে নামিয়ে এই সময় সুরাবুদ্দিনকে প্লাজার পরিবর্তে মাঠে নামালে এই ইস্টবেঙ্গলও লড়তে পারত। ম্যাচটাও এ ভাবে একপেশে হয়ে যেত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy