মহড়া: ভুবনেশ্বরে সুপার কাপ ফাইনালের প্রস্তুতিতে মিকু। নিজস্ব চিত্র
সুপার কাপ সেমিফাইনালে দশ জনে খেলা বেঙ্গালুরু এফ সি-র বিরুদ্ধে মোহনবাগানের হার আমাকে বিস্মিত করেছে। ৬২ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকা একটা দলের এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়া মেনে নেওয়া কষ্টকর। মোহনবাগানের এই বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ইস্টবেঙ্গলের। না হলে কিন্তু ফাইনালে সুনীল ছেত্রীদের বিরুদ্ধে একই অবস্থা হবে সুভাষ ভৌমিক ও খালিদ জামিলের দলের।
বেঙ্গালুরুর সাফল্যের নেপথ্যে নিকোলাস ফেদর ফ্লোরেস (মিকু), উদান্ত সিংহ ও সুনীল। আশ্চর্যজনক ভাবে মোহনবাগান এই তিন জনকেই আটকানোর কোনও চেষ্টা করেনি। ওঁরাই পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছিলেন। আশা করছি, সুভাষ ভৌমিকের মতো অভিজ্ঞ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর (টিডি) এই ভুলটা করবেন না ফাইনালে।
বেঙ্গালুরুকে আটকানোর রণনীতি হচ্ছে— সুনীল, মিকু ও উদান্তর বোঝাপড়া নষ্ট করে দেওয়া। তবে ওঁদের কিন্তু ম্যান মার্কিং করে আটকানো সম্ভব নয়। জোনাল মার্কিংয়ে আটকাতে হবে। আর পেনাল্টি বক্সের সামনে থেকে সুনীলকে কখনওই শট মারতে দেওয়া চলবে না। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ গোল করেছেন ভারত অধিনায়ক। সুনীল এখন অনেক পরিণত। গোল করার পাশাপাশি পুরো দলকে খেলান। ইস্টবেঙ্গলের উচিত, সুনীল ও মিকু বল ধরলেই তিন-চার জন মিলে ঘিরে ধরা। যাতে ওঁরা কাউকে পাস দিতে না পারেন। সুনীলের আরও একটা গুণ, বার বার জায়গা পরিবর্তন করে বিপক্ষকে সমস্যায় ফেলা। মনে হয় না, সুভাষদা সুনীলকে সেই স্বাধীনতা দেবেন।
মোহনবাগানের হারের আরও একটা কারণ ফুটবলারদের আত্মতুষ্ট হয়ে পড়া। প্রথমার্ধে দিপান্দা ডিকার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে ওঁরা ধরে নিয়েছিল যে ম্যাচটা জিতে গিয়েছে। ভুলে গিয়েছিলেন, খেলাটা ৯০ মিনিটের। যে কোনও সময় ম্যাচের রং বদলে যেতে পারে। শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হয়। মিকুর তিনটি গোলের নেপথ্যেই মোহনবাগান ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতা। প্রথম দু’টো গোল তো একই জায়গা থেকে করলেন। পেনাল্টি বক্সের সামনের অংশটাই হচ্ছে সব চেয়ে বিপজ্জনক জায়গা। সেখানে বেঙ্গালুরু ফ্রি-কিক পাওয়ার পরেও মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা সতর্ক হননি। ওঁদের গা ছাড়া মানসিকতার জন্যই গোল করে যান মিকু।
ভারতীয় ফুটবলে আমার উত্থান টি কে চাতুনির কোচিংয়ে। তার পরে অমল দত্ত, সুভাষ ভৌমিক, সুখবিন্দর সিংহের মতো বিখ্যাত কোচেদের পেয়েছি। প্রত্যেকেই অনুশীলনের সময় ডিফেন্ডারদের বার বার বলতেন, পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ন্যূনতম ঝুঁকিও নেবে না। অথচ মোহনবাগানের রানা ঘরামি পেনাল্টি বক্সের মধ্যেই ট্যাকলটা করলেন মিকু-কে। আর পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক সেরে ফেললেন বেঙ্গালুরু স্ট্রাইকার। আশা করছি, ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা এই ভুলগুলো করবেন না। ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে কিন্তু এগোনো যায় না।
তবে ডুডু ওমাগবেমি খেলতে না পারলে কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের লড়াইটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। ডুডু অসাধারণ স্ট্রাইকার। সেমিফাইনালে ওঁর গোলেই জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। শুনলাম, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের কারণে ফাইনালে ওঁর খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আমি অবশ্য ডুডুর খেলার ব্যাপারে আশাবাদী। কোনও ফুটবলারই চান না ফাইনালে মাঠের বাইরে বসে থাকতে। সাবধান বেঙ্গালুরু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy