Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ইংল্যান্ড পেল ‘হ্যান্ড অব গড’

নব্বই মিনিট গোলশূন্য থাকার পরে ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। যেখানে জাপানকে ৫-৩ হারিয়ে শেষ আটে চলে গেল ইংল্যাল্ড।

সান্ত্বনা: জাপানের মিয়াশিরোর পাশে গোমেজ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সান্ত্বনা: জাপানের মিয়াশিরোর পাশে গোমেজ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১১
Share: Save:

ইংল্যান্ড ০ (৫) : জাপান ০ (৩)

হ্যারি কেনের দেশে সোমবার আছড়ে পড়ার কথা ছিল হারিকেন ‘ওফেলিয়া’-র। গোটা ইংল্যান্ডই তাই আতঙ্কে ছিল সোমবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধাক্কা দেয়নি সে ভাবে।

অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ থেকে ইংল্যান্ডের সেরা অস্ত্র জ্যাডন স্যাঞ্চো তার ক্লাবের হয়ে খেলতে চলে যাওয়ায় এই টুর্নামেন্টে নেই। মঙ্গলবার কলকাতায় খেলা দেখতে আসা ইংরেজ ফুটবলারদের আত্মীয়, সমর্থকরাও তাই আতঙ্কে ছিলেন ‘ব্লু সামুরাই’ (জাপানের ফুটবল দলকে আদর করে এই নামেই ডাকেন তাদের সমর্থকরা) ঝড় নিয়েও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা হাসতে হাসতেই বাড়ি ফিরলেন। কারণ, ওফেলিয়ার মতো তাকেফুসা কুবোরাও শেষ পর্যন্ত ধাক্কা দিতে পারেনি ইংল্যান্ডের গায়ে।

নব্বই মিনিট গোলশূন্য থাকার পরে ম্যাচ গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে। যেখানে জাপানকে ৫-৩ হারিয়ে শেষ আটে চলে গেল ইংল্যাল্ড। টাইব্রেকারে হিনাতা কিদার শট বাঁচিয়ে ম্যাচের নায়ক ইংল্যান্ড গোলকিপার কার্টিস অ্যান্ডারসন। তার হাতই কোয়ার্টার ফাইনালে তুলল ইংল্যান্ডকে। বড়দের বিশ্বকাপে মারাদোনার হাত একত্রিশ বছর আগে ছিটকে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। এ দিন হয়তো ফুটবল দেবতার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা ছিল নব্বইয়ের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে শুরু হয়েছিল টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডের হারের পালা। তার পরে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড পনেরো বারের মধ্যে এগারো বারই হেরেছে। কিন্তু যুবভারতী নতুন ইতিহাস লিখল ইংল্যান্ডের।

আরও পড়ুন: পেনাল্টিতে বিতর্ক, শেষ আটে স্পেন

ম্যাচ শেষে কাঁদছিলেন জাপান গোলকিপার কোসেই তানি। তাঁকে হাত ধরে টেনে তুলে নিয়ে গেলেন ইংল্যান্ডের ফিল ফডেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ইংল্যান্ড কোচ স্বীকার করে গেলেন, ‘‘অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি। পেনাল্টির জন্য প্রস্তুত ছিলাম আমরা।’’

জাপান কোচ ইরোশিরো মোরিয়ামা জানতেন, জ্যাডন স্যাঞ্চো যখন নেই, তখন এই ইংল্যান্ড বাঁ দিক দিয়ে খুব একটা ভয়ঙ্কর হবে না। ইংল্যান্ড দু’ রাস্তায় হাঁটতে পারে। এক, মিডল করিডর দিয়ে পাস খেলতে খেলতে পৌঁছে যাবে মাঝমাঠে। তখন খেলার রিমোট কন্ট্রোলার জর্জ ম্যাকিয়াখরান। আর এখানে এসেই বদল হবে বলের গতিমুখ। হয় বল চলে যাবে রাইট উইংয়ে সিটির ফিল ফডেনের পায়ে নয়তো বাঁ প্রান্ত থেকে কাট করে ভিতরে ঢুকে আসা ক্যালাম হাডসনের পায়ে। এই দু’জন উইং থেকে বিষাক্ত সব ক্রস বা মাইনাস রাখবে জাপান রক্ষণে ওঁত পেতে থাকা ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যাঞ্জেল গোমেজ এবং রিয়ান ব্রিউস্টার-এর জন্য। আর সেখান থেকেই আসবে বিপদ। দুই, জাপান মাঝমাঠ পর্যন্ত উঠে এসে ম্যাকইয়াখরান বল উইংয়ে না ঠেলে ওয়াল পাস খেলতে শুরু করবে অধিনায়ক অ্যাঞ্জেল গোমেজ-এর সঙ্গে। ইংরেজদের সেই পাসিং ফুটবলে তখন কিছুটা নেমে এসে জুড়বে ব্রিউস্টারও। এই পাস খেলতে খেলতেই গোলের দরজা খুলে ফেলবে তারা। তার পর সুযোগ বুঝে তার সদ্ব্যবহার করা। ম্যাচেও সেটাই হচ্ছিল।

জাপান কোচ ইরোশিরো মোরিয়ামা ইংরেজদের কক্ষচ্যূত করে তাঁর দেশকে প্রথম বার কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যেতে নিয়েছিলেন প্রতি-আক্রমণ ভিত্তিক ফুটবলের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা। যে রণকৌশলে নিজের দলের মাঝমাঠে তিনি মোরিনহোর মতোই ‘বাস পার্ক’ করিয়ে দিয়েছিলেন। ফডেন, গোমেজরা আক্রমণে উঠলেই এদের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছিল আট জাপানি। আর সেখান থেকে শিম্পেই-রা বল কাড়লেই তা চলে যাচ্ছিল কুবো, নাকামুরা-দের কাছে প্রতি-আক্রমণ শানানোর জন্য।

মোরিয়ামার ছকে আটকে গিয়ে প্রথমার্ধে দু’একটি সুযোগ তৈরি ছাড়া সে ভাবে জাপান রক্ষণে দাঁত বসাতে পারেনি ইংল্যান্ড। মোরিয়ামা দ্বিতীয়ার্ধে মিনিট দশেক খেলার পরেই নাকামুরাকে বসিয়ে চলে গিয়েছিলেন ম্যাচ ড্র রেখে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায়। কারণ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে নির্ধারিত সময়ে গোল না হলে অতিরিক্ত সময়ের খেলা হয় না। তা ছাড়া টাইব্রেকার হলে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ঠকঠকানির রেকর্ডের জন্যই হয়তো তিনি এই পথ নেন। কিন্তু এই ইংল্যান্ড টিমের বৈচিত্র্য এতটাই যে, প্ল্যান ‘এ’ আটকে গেলে প্ল্যান ‘বি’, না হলে ‘সি’, ‘ডি’ রয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে জাপান অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হয়ে গিয়েছে দেখে এই সময়ে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়িয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে গোল পায়নি। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সামনে যুক্তরাষ্ট্র।
সেই ম্যাচ গোয়ায়।

ইংল্যান্ড: কার্টিস অ্যান্ডারসন, জর্জ ম্যাকইয়াখরান (নিয়া কার্বি), মার্ক গুয়েহি, জোনাথন পাঞ্জো, ফিল ফডেন, তাশান ওকলি-বুথ (মর্গ্যান গিবস হোয়াইট), রিয়ান ব্রিউস্টার, অ্যাঞ্জেল গোমেজ (এমিল স্মিথ রোয়ে, ক্যালাম হাডসন ওডোইজোয়েল ল্যাটিবিউডায়ার, স্টিভ সেসেগনন।

জাপান: কোসেই তানি, ইউকি কোবায়াশি, রেই হিরাকাওয়া, ইউকিনারি সুগাওয়ারা, হিনাতা কিদা, তাকেফুসা কুবো, শিম্পেই ফুকুওকা, তাইসেই মিয়াশিরো, কিইতো নাকামুরা (নাওকি সুবাকি), সইচিরো কোজুকি, তোইচি সুজুকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE