Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শতাব্দীর সেরা লড়াইয়ের আগে বিশেষ আলাপচারিতায় ফ্লয়েড

যুগটা আমারই, মেওয়েদার হতে চাইছে সকলে

এই মুহূর্তে এই গ্রহের সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ক্রীড়াবিদ মার্কিন মুলুক থেকে বিশেষ কনফারেন্স কল-এ কথা বললেন বিশ্বের বাছাই করা কিছু সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের সঙ্গে। যেখানে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ইউএসএ টুডে’, ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘বিবিসি’-র সঙ্গে ভারত থেকে ছিল আনন্দবাজার-ও।

দ্বৈরথ: মেওয়েদার-ম্যাকগ্রেগরের লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব। ফাইল চিত্র

দ্বৈরথ: মেওয়েদার-ম্যাকগ্রেগরের লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব। ফাইল চিত্র

কৌশিক দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪৬
Share: Save:

ভারতীয় সময় শুক্রবার ভোর চারটে। মোবাইলের অন্য প্রান্তে তিনি— ফ্লয়েড ‘মানি’ মেওয়েদার।

মেওয়েদার— যিনি ভ্যানে করে ডলার ভরে শপিং করতে বেরোন। যিনি ডলারের বিছানায় শুয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে ছবি দেন। যিনি ২৬ অগস্ট, লাস ভেগাসে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’-তে নামতে চলেছেন মিক্সড মার্শাল আর্টস মহাতারকা কোনর ম্যাকগ্রেগরের বিরুদ্ধে। যে লড়াইয়ে মেওয়েদার পেতে পারেন ২৩ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪৭৫ কোটি টাকা) এবং ম্যাকগ্রেগরের আয় হতে পারে ৭ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪৪৯ কোটি টাকার ওপর)।

এই মুহূর্তে এই গ্রহের সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ক্রীড়াবিদ মার্কিন মুলুক থেকে বিশেষ কনফারেন্স কল-এ কথা বললেন বিশ্বের বাছাই করা কিছু সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের সঙ্গে। যেখানে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ইউএসএ টুডে’, ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘বিবিসি’-র সঙ্গে ভারত থেকে ছিল আনন্দবাজার-ও। মিনিট কুড়ির আলাপচারিতায় বার বার ধরা পড়ছিল তাঁর ইস্পাত কঠিন মন। একটা শীতল ঔদ্ধত্য। যে ঔদ্ধত্যে চিড় ধরল একেবারে শেষে এসে। যখন ফ্লয়েড মেওয়েদার (জুনিয়র) ধন্যবাদ দিলেন কনফারেন্সে থাকা সাংবাদিকদের।

প্রশ্ন: আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনর ম্যাকগ্রেগর এক সময় আপনাকে আইডল বলে মানতেন। আপনার ভিডিও দেখে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতেন। আপনার সম্পর্কে ও অনেক কিছু জানেন। এতে কি আপনার সমস্যা হবে?

মেওয়েদার: কমব্যাট স্পোর্টসে এমন কেউ নেই যে ফ্লয়েড মেওয়েদারের ভিডিও দেখেনি। ফ্লয়েড মেওয়েদারের লড়াই কাটাছেঁড়া করে তৈরি হয়নি। কারণ এটা মেওয়েদারের যুগ। সবাই চায় মেওয়েদারের মতো কিছু করতে। তাই এ ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। ভিডিওর মেওয়েদার আর রিংয়ের মেওয়েদারের মধ্যে কিন্তু তফাত আছে।

প্র: ম্যাকগ্রেগরের মধ্যে আপনি কি কোনও ভাবে নিজের ছায়া দেখতে পান?

মেওয়েদার: না, সে রকম কিছু দেখিনি। আসলে আমি এতই বিখ্যাত, আমার নামটা এতই বড় যে সবাই আমার আদলে নিজেকে তৈরি করতে চায়। আমি হয়তো এমএমএ (মিক্সড মার্শাল আর্টস)-এ কোনও দিন লড়িনি, কিন্তু সেখানেও আমার প্রভাব আছে।

প্র: আপনার বয়স ৪০। বক্সিং একটা বিপজ্জনক স্পোর্টস। রিংয়ে নামার আগে কি মনে হচ্ছে এটাই আমার শেষ লড়াই হবে?

মেওয়েদার: আগের বার (২০১৫) আমি ভেবে রেখেছিলাম, ওটাই আমার শেষ লড়াই হতে চলেছে। কিন্তু জীবন আপনাকে কোথায় এনে ফেলবে, কেউ জানে না। তবে এ বার আমি ঠিক করে ফেলেছি, এটাই আমার শেষ লড়াই হবে। আমি আমার পরিবারকে, আমার বাচ্চাদের কথা দিয়েছি, আর নয়। এ বারই শেষ।

প্র: ম্যাকগ্রেগর আপনার থেকে বছর দশেকের ওপর ছোট। এতে কি ওঁর সুবিধে হয়ে যাবে না?

মেওয়েদার: বয়সটা ওর পক্ষে যেতে পারে। কিন্তু আমার পক্ষে থাকবে অভিজ্ঞতা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রিংয়ে আমার আই কিউ বেড়েছে। অল্প বয়সে একটার পর একটা বাউট লড়ে যেতাম। টানা ট্রেনিং করতাম। বিশ্রাম জিনিসটা বুঝতাম না। এখন বুঝি বিশ্রামের গুরুত্ব কতটা। শরীরকে তাজা রাখতে না পারলে কিছু হবে না। এখন আমি অনেকটা বিশ্রাম পাচ্ছি। আর সে সময় আমার টিম আমাকে তৈরি করে দিচ্ছে।

প্র: আপনার আর ম্যাকগ্রেগরের এই লড়াইয়ে বর্ণবিদ্বেষের ছায়া পড়ছে। আপনি আগে বলেছেন, ম্যাকগ্রেগর যা খুশি বলে পার পেয়ে যায়। কিন্তু আপনি কিছু বললেই বলা হয়, মেওয়েদার একটা উদ্ধত লোক। আপনার অভিযোগ ছিল, আপনি কৃষ্ণাঙ্গ বলে এটা ঘটে। এখন কী বলবেন?

মেওয়েদার: আমি আর এ নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। সব জায়গাতেই দু’মুখো নীতি আছে। আমার ফোকাস এখন শুধু রিংয়ে। অনেক উল্টোপাল্টা কথা হয়েছে। এখন এ সব বন্ধ হোক।

প্র: আপনি অবসর ভেঙে ফিরছেন। ম্যাকগ্রেগর আবার কোনও দিন বক্সিং লড়েননি। দু’জনের মধ্যে কে বেশি ঝুঁকি নিচ্ছেন?

মেওয়েদার: দু’জনের জন্যই এই লড়াইয়ে বড় পুরস্কার আছে। কিন্তু কে বেশি ঝুঁকি নিচ্ছেন যদি বলেন, তা হলে বলব, অবশ্যই আমি। আমার রেকর্ড এখন ৪৯-০। যারা হেরেছে, তাদের কাছে আরও একটা হার হয়তো বড় কিছু ব্যাপার নয়। কিন্তু যে ফাইটার জীবনে কোনও দিন হারেনি, তার কাছে এই চ্যালেঞ্জটা মারাত্মক। একটা হার মানে আমার কেরিয়ারে বিশাল একটা কালো দাগ। এই লড়াইয়ে আমি সব কিছু বাজিতে রেখেছি। আমার রেকর্ড, আমার গর্ব— সব কিছু।

প্র: কিন্তু এই ঝুঁকিটা আপনি নিলেন কেন?

মেওয়েদার: জীবনে আপনি যদি ঝুঁকি না নেন, তা হলে কিছুই করতে পারবেন না। আমি ঝুঁকি নিতে পেরেছি বলেই আজ এখানে পৌঁছেছি। তাই রিংয়ে সব কিছু বাজিতে লাগাতে আমি দু’বার ভাবিনি।

প্র: সে জন্যই কি বক্সিং গ্লাভসের ওজন কমিয়ে আট আউন্স করতে রাজি হলেন? এতে তো ম্যাকগ্রেগরের বেশি সুবিধে হবে।

মেওয়েদার: হোক না। আমার কিছু যায় আসে না। আমি শুধু ম্যাকগ্রেগরকে কোনও অজুহাত দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই না। লড়াই হেরে যাতে ও বলতে না পারে, গ্লাভসের জন্যই হেরেছে।

প্র: রিংয়ে নামার সময় কখনও কি ভয় হয় এই লড়াইটা হেরে যেতে পারেন?

মেওয়েদার: রিংয়ে নামার সময় আমি একটা ব্যাপারের উপরেই নজর দিই। প্রতিপক্ষকে কী ভাবে ধ্বংস করব। তার বাইরে কিছু ভাবি না। আমি রোজ সকালে উঠে নিজেকে বলি, তুমি জেতার জন্য জন্মেছ। তুমিই জিতবে। সেটা রিংয়ে হোক কী রিংয়ের বাইরে। আই অ্যাম দ্য উইনার।

প্র: জীবনের শেষ লড়াইটা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? জিতলে আপনি রকি মার্সিয়ানোর রেকর্ড ভেঙে ৫০-০ করবেন? (মার্সিয়ানোই একমাত্র পেশাদার বক্সার যিনি ৪৯টা লড়াই লড়ে অপরাজিত থেকে গিয়েছিলেন)

মেওয়েদার: আমি সাধারণত আমার প্রতিপক্ষকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবি না। তবে হ্যাঁ, কিংবদন্তিদের বক্সিং অবশ্যই ভাল লাগে। আমার কাছে ৫০ সংখ্যাটা কিছু নয়। আমি শুধু জেতার ওপরই নজর দিই। রকি মার্সিয়ানো কিংবদন্তি ছিলেন। উনি ওঁর মতো করে জিতেছেন। আমি মেওয়েদার। আমি মেওয়েদারের মতো করে নিজের ছাপ রেখে যাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE